ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাহাড় খেকোদের নয়া কৌশল

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১ মে ২০১৬

পাহাড় খেকোদের নয়া কৌশল

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই নতুন কৌশলে পাহাড় খেকোরা অপতৎপরতা শুরু করেছে। পাহাড় কাটা বন্ধে প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে শহর ও শহরতলীসহ চকরিয়া, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে উঁচু উঁচু পাহাড়ের চূড়ার উপরিভাগে মাটি কেটে দেয়া হচ্ছে। বৃষ্টির পানি পড়লে যাতে মাটি নরম হয়ে পাহাড় ধসে পড়ে। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের লিংকরোডের বিসিক শিল্প নগরীর দক্ষিণ মুহুরিপাড়া, রামুর চেইন্দা, কলাতলী ও দক্ষিণ মিঠাছড়ি এলাকায় বড় বড় পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে ইতোমধ্যে। বন বিভাগ, পরিবেশ কর্মকর্তা ও পুলিশকে ম্যানেজ করার কথা বলে পাহাড় কেটে ডাম্পার ভর্তি মাটি বিক্রি করলেও দেখার কেউ নেই। সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার পরামর্শে অবৈধ মাটি বিক্রেতারা গাড়িভর্তি মাটির উপর কাল কাপড় টেনে দিয়ে প্রতিদিন সরবরাহ করছে। এভাবে কলাতলী, স্মরণ সমিতি, ঘোনারপাড়া, দরিয়ানগর ও দক্ষিণ মিঠাছড়ি চাইন্দা পূর্ব ছরারকুল এলাকার একাধিক পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলেছে ভূমিদস্যুরা। পরে সমতল জায়গা তারা প্লট আকারে বিক্রি করছে মোটা টাকায়। লিংকরোড, মিঠাছড়ি ও কলাতলীর স্থানীয় আওয়ামী লীগের তিন নেতার ইন্ধনে বিসিক শিল্প নগরীর দক্ষিণ মুহুরিপাড়া, চেইন্দা ও দক্ষিণ মিঠাছড়ি, লাইট হাউস এলাকা ও আশপাশের একাধিক স্থানে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটছে ভূমিদস্যুরা। পাহাড় কেটে দিনভর ডাম্পার দিয়ে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যত্র। পথে প্রশাসনের লোকজন ওসব গাড়ি থামানোর পর মুঠোফোনে গাড়ি ছেড়ে দিতে ধান্ধাবাজ নেতাদের সুপারিশ আসে। কোথাও গাড়িপ্রতি বা সাপ্তাহিক চুক্তি আবার কোন কোন সময় নেতাদের দাপটে প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটা মাটি যাচ্ছে নির্ধারিত জায়গায়। পরিবেশবাদীরা জানান, পাহাড় কাটার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে পাহাড়ের পাদদেশের বসতি। ঘুষ নিয়ে পাহাড় খেকোদের মদদ দেয়ার অভিযোগে পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সোসাইটির নেতৃবৃন্দ। তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপিও দিয়েছে তারা। এদিকে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলামের অপসারণ দাবিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আরা হক এমপির মাধ্যমে শনিবার স্মারকলিপি প্রদান করেছে কক্সবাজার সোসাইটি নেতৃবৃন্দ। কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন, কলিম উল্লাহ, জুয়েল চৌধুরী, সাংবাদিক আমান উল্লাহ, আনোয়ার হাসান চৌধুরী, এ্যাডভোকেট আহসান উল্লাহ, নুরুল আবছার ও সোহরাব হোসাইন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। পটিয়ায় অবাধে নিজস্ব সংবাদদাতা পটিয়া থেকে জানান, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চট্টগ্রামের পটিয়ায় অবাধে চলছে মাটি কাটা। পুলিশ প্রশাসনের একশ্রেণীর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এই মাটি কাটা চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাশেম মাটি কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। শনিবার দুপুরে উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নের খিল্লাপাড়া এলাকার মডেল টাউনের পাশ থেকে মাটি কাটার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, কচুয়াই, ধলঘাট, জঙ্গলখাইন, হাবিলাসদ্বীপ, বড়লিয়া, আশিয়া, ছনহরা, শোভনদন্ডীসহ বিভিন্ন এলাকায় ধানি জমির উর্বর মাটি কাটা চলে।
×