ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ মে পর্যন্ত খসড়ায় মতামত দেয়া যাবে

জাতীয় উন্নয়ন সহযোগিতা নীতিমালা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১ মে ২০১৬

জাতীয় উন্নয়ন সহযোগিতা নীতিমালা হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে বর্তমানে নানা সীমাবদ্ধতা আছে। বিভিন্ন দাতা সংস্থা যে সহায়তা দেয় তা ব্যাপকভাবে খ-িত। আর জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পেরও সমন্বয় হচ্ছে না। সমন্বয়ের অভাবে ছোট ছোট প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। আবার একই ধরনের প্রকল্পও থাকছে। এ কারণে বৈদেশিক সহায়তার মান ও কার্যকারিতা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হচ্ছে। এতে বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অহেতুক দ্বৈততা তৈরি হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে জাতীয় উন্নয়ন সহযোগিতা নীতিমালা করছে সরকার। বর্তমানে নীতিমালার ওপর মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে। মতামত গ্রহণের জন্য নীতিমালার খসড়া অনলাইনে দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। আগামী ১৫ মে পর্যন্ত খসড়ায় মতামত দেয়া যাবে। ইআরডির এইড ইফেকটিভনেস প্রকল্পের নীতি ও সমন্বয় বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘বিদেশী সহায়তা ব্যবহারে এখনও দেশে সক্ষমতার অভাব রয়েছে। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হয়। আবার ছোটখাটো প্রকল্পেও পরামর্শক নিয়োগ করে উচ্চ সম্মানী দিতে হয়।’ এ ধরনের অপচয় বন্ধ করতে নীতিমালাটি সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন তিনি। নীতিমালার খসড়ায় পাঁচটি উদ্দেশ্যে নীতিমালাটি তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। উদ্দেশ্যগুলো হলো- উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি সুসংহত ও কৌশলগত পদ্ধতি উপস্থাপন, বৈদেশিক সহায়তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকার ও জাতীয় পদ্ধতির সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের নীতি-পদ্ধতির সামঞ্জস্য বিধান, অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারিত্ব সৃষ্টিতে সহযোগিতা প্রদান এবং বৈদেশিক সহায়তা আহরণে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি। খসড়াটির ওপর ইআরডি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মত নেয়া হচ্ছে। এছাড়া উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও পরামর্শক সভা হবে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে মে মাসের মধ্যে খসড়াটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হতে পারে। এরপর জুন মাসের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। ১৯৭২-১৯৭৩ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগী তথা দাতারা বাংলাদেশকে ৬ হাজার ৫২৩ কোটি ডলার দিয়েছে। আর পাইপলাইনে রয়েছে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বেশি। প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতার অভাব এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কঠিন শর্তের কারণে পাইপলাইনে থাকা অর্থ ছাড় করা যাচ্ছে না। নতুন জাতীয় নীতিমালাটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে ইআরডি। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর অনুকূলে বিদেশী অর্থায়ন বা সহায়তা গ্রহণের জন্য ইআরডি উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করবে। বর্তমানে বিদেশী সহায়তা ব্যবহারে যে সমস্যা রয়েছে, সেটি তুলে ধরা হয়েছে নীতিমালার খসড়ায়। এতে বলা হয়েছে, বৈদেশিক সহায়তার নানা সীমাবদ্ধতা আছে। বাংলাদেশকে যে সহায়তা প্রদান করা হয়, তা ব্যাপকভাবে খ-িত। আর জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পেরও সমন্বয় হচ্ছে না। সমন্বয়ের অভাবে ছোট ছোট প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। আবার একই ধরনের প্রকল্পও থাকছে। এ কারণে বৈদেশিক সহায়তার মান ও কার্যকারিতা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়। এতে বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যায়। অহেতুক দ্বৈততা তৈরি হয়। ইআরডির তৈরি খসড়ায় বলা হয়েছেÑ প্রতি অর্থবছরের শুরুতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রকল্প তালিকা থেকে একটি ‘অগ্রাধিকার তালিকা’ তৈরি করবে ইআরডি। এরপর সেই তালিকা ধরে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। এছাড়া দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় ও বিশেষায়িত অন্য যেকোন উৎস থেকে ঋণ এবং অনুদান আনার আলাপ-আলোচনার দায়িত্বও পুরোপুরি ইআরডির ওপর থাকবে। তবে কঠিন শর্তের যেকোন ঋণই ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি অন নন-কনসেশনাল লোন’ কর্তৃক অবশ্যই অনুমোদন নিতে হবে। এ কমিটির নেতৃত্বে আছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। খসড়া অনুযায়ী, বিদেশী সহায়তাপুষ্ট কোন প্রকল্পের ব্যয় ৩০ কোটি টাকার বেশি হলেই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে হবে। আর সম্ভাব্যতা সমীক্ষাটি করতে হবে স্থানীয় বিশেষজ্ঞ দিয়ে। অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া সমীক্ষার কাজে বিদেশী পরামর্শক নিয়োগ করা যাবে না। এছাড়া সমীক্ষার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কারিগরি সহায়তা যথাসম্ভব নিরুৎসাহিত করা হবে। খসড়া নীতিমালার ওপর ইআরডির ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে (বৎফ.মড়া.নফ) আগ্রহী যেকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খসড়া নীতিমালার ওপর তার পর্যবেক্ষণ বা অভিমত সৎনংরফফরয়ঁব@মসধরষ.পড়স ঠিকানায় বা ইআরডির ডেভেলপমেন্ট ইফেকটিভনেস অনুবিভাগে ডাকযোগে মতামত দিতে পারবেন।
×