ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গত সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে ২.৭৬ শতাংশ

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

গত সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে ২.৭৬ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোনভাবেই থামছে না পুঁজিবাজারের দরপতন। গত সপ্তাগে প্রতিদিনই দরপতন হয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। আর অব্যাহত দরপতনে সব ধরনের মূল্য সূচকের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের পরিমাণও। বেশিরভাগ কোম্পানির দর কমার কারণে সার্বিক সূচকের সঙ্গে কমেছে বাজার মূলধনও। ৩ শতাংশ হারে প্রধান সূচকের পতনের সঙ্গে কমেছে বাজার মূলধনও। শুধুমাত্র এক সপ্তাহে সেখানে বাজার মূলধন কমেছে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বা আট হাজার কোটি টাকা। জানা গেছে, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অতীত-বর্তমান অবস্থান নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারো আতঙ্ক কাজ করছে। অব্যাহত দরপতনের মুখে বুধবার সন্ধ্যায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য সময় বাড়ানো হবে না। তবে এক্সপোজারের সংজ্ঞায় পরিবর্তনসহ অন্যান্য নীতি সহায়তা দেয়া হবে। বাজার-সংশি¬ষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বক্তব্য স্পষ্ট নয়। এর মাধ্যমে বাজার কার্যত কী সমর্থন পেতে যাচ্ছে তাও নিশ্চিত নয়। এ পরিস্থিতিতে প্রায় এক বছরের সর্বনিম্নে নেমে আসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। বৃহস্পতিবার সূচক আরো ১ শতাংশ কমে। বিশে¬ষকরা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয় সবই ইতিবাচক প্রবণতায় রয়েছে। সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থাতেই। বিনিয়োগকৃত সম্পদের বাজারদর আগামীতে কেমন থাকবে এ বিষয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মৌলভিত্তি বিবেচনায় তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিলেও ঝুঁকি প্রশমনে তাদের কেউ কেউ শেয়ার বিক্রি করে থাকেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্য কিছু করলে নীতিনির্ধারকদের ওপর আস্থার জায়গাটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, শেয়ারবাজারে বিক্রয় চাপ রোধে এক্সপোজারের সময় বাড়ানোর চেয়ে তাদের বর্তমান উদ্যোগ বেশি কার্যকরী হবে। সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গেল সপ্তাহে ডিএসইতে প্রথম কার্যদিবস রবিবার লেনদেন শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৮ হাজার ৫০৬ কোটি ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার ৮১০ টাকায় এবং বৃহস্পতিবারে লেনদেন শেষে বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৫ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ১৬৪ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৮ হাজার ৫২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে টাকার অংকে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৫৭ কোটি ৩৪ লাখ ৮১ হাজার ৪৯৪ টাকা। যা এর আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৭৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে চার দিনে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯৩৩ কোটি ২ লাখ ৬ হাজার ৭১১ টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইতে কমেছে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৩৫১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহে ছিল ৩৮৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে গড়ে লেনদেন কমেছে ৩৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ কম। গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪৪ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ডিএস৩০ সূচক কমেছে ৫৩ দশমিক ৮১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস কমেছে ৩২ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৫৬টির, কমেছে ২৫৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টির আর লেনদেন হয়নি ৫টি কোম্পানির শেয়ার। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারের সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে ১৪ দশমিক ০২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারের এ দূরাবস্থা থেকে উন্নয়নে প্রথম কাজ হলো পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগের সমন্বয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া। ভাসা ভাসা সিদ্ধান্তে কোন ফল আসবে না। দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। বাজারের মূল্য সূচক প্রায় চার হাজারে চলে এসেছে। এর মূল কারণ অনিয়ম আর নানা অপকৌশলে বাজার থেকে অর্থ বেড়িয়ে যাচ্ছে। রেগুলেটরের ব্যর্থতায় বোনাস শেয়ার ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মধ্যমে শেয়ারবাজারের থেকে শত শত কোটি টাকা বাহিরে চলে যাচ্ছে।
×