ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ আফ্রিকা আমাকে যা দিয়েছে, জীবনে ভুলব না : ইমরান তাহির

প্রকাশিত: ২০:১২, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

দক্ষিণ আফ্রিকা আমাকে যা দিয়েছে, জীবনে ভুলব না :  ইমরান তাহির

অনলাইন ডেস্ক ॥ শেষ ম্যাচে ডোয়েন স্মিথ-সহ তিন উইকেট তুলে চেনা রুদ্রমূর্তি ধরেছেন। আজ, শনিবার কোটলায় তাঁর ও অমিত মিশ্রর জুটিই কেকেআরের এক নম্বর প্রতিপক্ষ হতে যাচ্ছে। যে যুদ্ধের আগে টিম হোটেলে আনন্দবাজার-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান তাহির নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেন... প্রশ্ন: আপনি তো আব্দুল কাদিরের বিশাল ভক্ত শোনা যায়। তাহির: ভক্ত মানে? আমি ওঁর পাগল ভক্ত। ছোট থেকে কাদিরের অ্যাকশন, রান আপ সব নকল করতাম। ওঁর যে লেগস্পিন আর্ট ছিল তা আমি আর কারও মধ্যে দেখিনি। এত এনার্জেটিক অ্যাকশনও দেখিনি। অদ্ভুত একটা ছন্দে বল করতেন। তার উপর ওই কন্ট্রোল। পরিষ্কার বলছি, শেন ওয়ার্নও ওঁর কাছে কিছু না। প্র: কী বলছেন? ওয়ার্নও কিছু না! তাহির: বললাম তো। ওই কন্ট্রোল আর কারও মধ্যে দেখিনি। আমি ভাগ্যবান যে আব্দুল কাদিরের মতো লেগস্পিনারের পাশে বসতে পেরেছি। কথা বলতে পেরেছি। প্রথমে তো ভয়ে ধারেকাছেই ঘেঁষতাম না। পরে সুন্দর সম্পর্ক হয়ে যায়। উনি আমার কেরিয়ারে অসম্ভব সাহায্য করেছেন। ওঁর ছেলে ইমরান কাদিরের সঙ্গেও প্রচণ্ড বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। প্র: এত কাদির-কাদির করছেন। পাকিস্তানে থাকলে তো এত দিনে কাদির-টু হতে পারতেন আপনি। দেশ ছেড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা চলে আসার জন্য আফসোস হয় না? বিশেষ করে পাকিস্তান টিমে এখন তো তেমন দরের স্পিনারই নেই। তাহির: আফসোস হয় না। দক্ষিণ আফ্রিকা আমাকে যা দিয়েছে, জীবনে ভুলব না। ওরা পাশে না থাকলে আমাকে হয়তো ক্লাব ক্রিকেটই খেলে বেড়াতে হত। ইমরান তাহির হওয়া আর হত না। তবে হ্যাঁ, দেশে থাকলে হয়তো লোকে আমাকে এত দিনে কাদির-টু বলেই ডাকত! আমি তো বটেই, আমার পরিবারও চাইত যে কাদিরের মতো হই। পাকিস্তানের জন্য খেলি। কিন্তু যে দেশের হয়েই খেলি, উইকেট পেলে মনে হয় ওঁকে কিছুটা গুরুদক্ষিণা দিতে পারলাম। প্র: স্ত্রীর মন রাখতেই তো দেশ ছাড়তে হল। তাহির: (হাসি) ওটা এখন ওপেন সিক্রেট। সবাই জানে। (তাহিরের স্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভুত দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিক। তাঁর পরামর্শেই পাকাপাকি ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় থেকে যান তাহির।) প্র: কিছু দিন আগে একটা সাক্ষাৎকারে গ্রেম স্মিথের খুব প্রশংসা করেছেন আপনি। এত অধিনায়কের অধীনে খেলেছেন। শুধু স্মিথের প্রশংসা কেন? তাহির: আসলে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটটা কী, আমাকে চিনিয়েছিল স্মিথ। প্রথম প্রথম ওদের ড্রেসিংরুমে চুপচাপ বসে থাকতাম। কথা বলতাম ন। কী বলব? সামনে মহাতারকারা ঘুরছে সব সময়। স্মিথ, আমলা, এবি! স্মিথ ব্যাপারটা সহজ করে দিয়েছিল। বলে দিয়েছিল, এটা এখন থেকে তোমারও ড্রেসিংরুম। যে কোনও অসুবিধেয় আমাদের সবাইকে পাশে পাবে। বিশ্বের এক নম্বর টিমের ড্রেসিংরুমে তোমাকে স্বাগত। এ রকম ক্যাপ্টেন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। প্র: আর এবি ডে’ভিলিয়ার্স? তাঁর মতো কিংবদন্তিকে কাছ থেকে দেখাও তো তাই। ক্রিকেটের বাইরের এবিডি কেমন? তাহির: আগে মাঠেরটা বলি। সতেরো বছর ক্রিকেট খেলছি। এ রকম ব্যাটসম্যান কখনও দেখিনি। প্র: বিরাট কোহালিকে মাথায় রেখে বলছেন? তাহির: বলছি। বিরাট ওর নিজের ক্লাসে এক নম্বর। দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। কিন্তু আমার কাছে এক নম্বর এবি। ও রকম ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান আর কেউ নেই। প্র: মাঠের বাইরের ডে’ভিলিয়ার্স? তাহির: সতেরো বছরের কেরিয়ারে ও রকম মানুষও দেখিনি। এত বিনয়ী, এত ভদ্র ভাবা যায় না। টিমের সব কিছুতে থাকে। ইয়ার্কি-ঠাট্টা, সবেতে আছে। ভলিবলও এমন প্যাশন নিয়ে খেলবে যে, হাঁ করে দেখতে হবে। কিন্তু কোথাও ‘আমি এবি ডে’ভিলিয়ার্স, আমাকে দেখুন’, এই ব্যাপারটা রাখে না। প্র: আপনারা, দক্ষিণ আফ্রিকানরা গোটা বছর ধরে ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়ান। কিন্তু বিশ্বকাপ এলে কী হয় টিমটার? তাহির: আমরা পরিশ্রমে ঘাটতি রাখিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। তার পরেও হয়নি, কী করা যাবে। কিন্তু এটা বলছি যে, কাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার দিন শান্তিতে সবাই ঘুমোতে পেরেছিলাম। কারণ জানতাম, কেউ খাটনিতে ফাঁকি দিইনি। প্র: কেকেআর ম্যাচে আসি। কাল তো কোটলায় বোলিং বনাম বোলিং। আরও ভাল করে বললে, স্পিন বনাম স্পিন। এক দিকে নারিন-চাওলা-সাকিব। অন্য দিকে আপনি-অমিত মিশ্র-নেগি। কী হবে মনে হচ্ছে? তাহির: আমি দু’টো টিমের স্পিন বোলিংয়ের তুলনায় যাব না। ওদের অ্যাটাক ভাল। কিন্তু আমাদেরও কম কিছু না। প্র: কিন্তু নারিনকে ম্যাজিশিয়ান বলা হয়। তাঁর দিল্লিওয়ালা জবাব কে হবে? তাহির: কোই বাত নহি। ওকে আমরা প্রথম খেলছি না। নারিন ভাল স্পিনার। দারুণ কামব্যাক করেছে। কিন্তু ওকে দেখে আমাদের হাত পা কেঁপে যাচ্ছে এমন ভাবার কারণ নেই। প্র: কিন্তু উত্তরটা কে হবে বললেন না। তাহির-মিশ্র? তাহির: আমাদের পার্টনারশিপটা দারুণ চলছে। কিংগস ম্যাচে মিশি চারটে পেল। আমি গত ম্যাচে তিনটে পেলাম। ম্যাচে আমরা প্রচুর কথা বলি। আমার কোনও ভুল দেখলে ও ধরিয়ে দেয়। ওরটা আমি। মিশি আমার ভাইয়ের মতো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যেটা জিজ্ঞেস করছেন, তার এটা সরাসরি উত্তর, বলব না। বলছি ওদের ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধেও আমাদের প্ল্যান থাকবে। যা সামলানো সহজ হবে না। প্র: ৯ এপ্রিল ইডেনের দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের সঙ্গে ৩০ এপ্রিলের দিল্লির কতটা ফারাক হতে যাচ্ছে? তাহির: অনেকটাই। ইডেনে দিল্লি লড়তেই পারেনি। কিন্তু এখন আমরা কেমন খেলছি, কী করছি সবাই দেখছে। তিনটে ম্যাচ পরপর জিতেছি। গুজরাতের বিরুদ্ধেও কিন্তু কপাল ভাল থাকলে আমরাই জিততাম। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×