ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বহুল আলোচিত বাফুফে নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

আজ বহুল আলোচিত  বাফুফে নির্বাচন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রতীক্ষার প্রহর শেষ। আলোচনা-সমালোচনা-রটনা-ঘটনা নিয়ে অবশেষে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বহুল আলোচিত নির্বাচন। নির্বাচনের ভেন্যু হোটেল র‌্যাডিসন হোটেলের ব্লু গার্ডেন। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। ভোটার (ডেলিগেট) সংখ্যা ১৩৪। ভোট গ্রহণের আগে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। ২০০৮ সালে প্রথম এবং ২০১২ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর আগে ১৯৭২-২০০৭ সাল পর্যন্ত বাফুফেতে যতগুলো কার্যনির্বাহী কমিটি দায়িত্ব পালন করেছে, সেগুলোর সবগুলোই ছিল সরকার কর্র্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত। পরে বিশ^ ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা নতুন নিয়ম প্রবর্তন করে। সেটা হলো কোন দেশে ফুটবল ফেডারেশনে সরাসরি নির্বাচন হবে, এখানে সরকার কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ৬২টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে এবারের বাফুফের নির্বাচনকে ঘিরে। এরমধ্যে চারটি ছিল সভাপতি পদে। যার মূল্য চার লাখ টাকা। সিনিয়র সহ-সভাপতিও ছিলেন চার জন। যার মূল্য তিন লাখ টাকা। সহ-সভাপতি পদে ১২ জন। এই পদের মূল্য ছয় লাখ টাকা। ১৫ পদের সদস্যের বিপরীতে মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে ৪০টি। যার মূল্য দশ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট ২৩ লাখ টাকার মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়। ২১ সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সভাপতি পদ। কেননা ফিফা আইনে সভাপতিই হচ্ছেন ফুটবল ফেডারেশনের সর্বসময় ক্ষমতার অধিকারী। বাফুফের নির্বাচনে সভাপতি পদে চার প্রার্থী থাকলেও মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দু’জনের মধ্যে। তারা হচ্ছেন বর্তমান সভাপতি এবং সম্মিলিত পরিষদের কাজী মোঃ সালাউদ্দিন এবং নরসিংদী-২ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এবং বাঁচাও ফুটবল পরিষদের কামরুল আশরাফ খান পোটন। এর আগে সভাপতি পদে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী হেলাল এবং নুরুল ইসলাম নুরু। হেলাল সমর্থন করেছেন সালাউদ্দিনকে এবং নুরু সমর্থন করেন পোটনকে। ক্রীড়াঙ্গনের একটি মহল এই নির্বাচন উপলক্ষে পরিবর্তন চায়। তাদের দাবি- বর্তমান কমিটি আট বছর কাজ করেও সফলতা অর্জন করতে পারেনি। আরেকটি মহল মনে করে পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই, কারণ বর্তমান কমিটি অনেকাংশেই সফল, তাদের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে আবারও তাদের ক্ষমতায় আসা উচিত। ১৩৪ ডেলিগেটদের হাতেই এখন নতুন কমিটি নির্ধারণের ভার। ভোট গণনা শেষেই বোঝা যাবে, কারা হতে যাচ্ছেন আগামী চার বছরের জন্য দেশের ফুটবলের ভাগ্যনিয়ন্তা। নির্বাচন উপলক্ষে দেশজুড়ে পরিলক্ষিত হচ্ছে টান টান উত্তেজনা। ক্রিকেট, হকি বা অন্য কোন ক্রীড়া ফেডারেশনে যে নিয়মে বা যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, ফুটবল ফেডারেশনে নির্বাচন সেভাবে হয় না। এখানকার নির্বাচনে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ বা চাপ থাকে না। ফিফার নিয়ম অনুযায়ীই নির্বাচন হতে হবে। চলবে না কোন ধানাই পানাই। সচেতন ফুটবলবোদ্ধারা মনে করছেন, এবারের নির্বাচনে যে দুটি প্যানেল আছে, সেখানে কিছু কিছু প্রার্থীর ক্ষেত্রে যেমন গ্রহণযোগ্যতা আছে, কিছু প্রার্থীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা নেই। চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী এবারের নির্বাচনেও দেখা গেছে অর্থের ঝনঝনানি। দুই প্যানেলই দেদারসে টাকা বিনিয়োগ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- দুই প্যানেল থেকেই টাকা নিয়েছেন, এমন ডেলিগেটও আছে! আরও জানা গেছে ডেলিগেটদের মাথাপিছু সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা করে ‘নজরানা’ স্বরূপ দেয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে নিশ্চিত ভোটপ্রাপ্তির জন্য সেই ডেলিগেটকে কোরআন শরীফ ছুঁয়েও শপথ করানো হয়েছে। মজার ব্যাপারÑ আরও জানা গেছে, এই তিন লাখ টাকার নজরানাকে সামাল দিতে ডেলিগেট ‘ছুটিয়ে’ আনতে তাকে চার লাখ টাকা দিয়েও ম্যানেজ করা হয়েছে! তবে এগুলো মোটেও নতুন কোন ঘটনা নয়। অতীতের নির্বাচনেও এমনটা দেখা গেছে হরহামেশাই। বাফুফের প্রতিটি নির্বাচনেই একটি বড় ভূমিকা থাকে ‘ফোরামে’র। ১৩৪ ভোটের মধ্যে অর্ধেক- অর্থাৎ ৬৭ ভোটই হচ্ছে ফোরামের। এই ফোরামকে বলা হয় ‘ক্রীড়াঙ্গনের বিষফোঁড়া’! ফোরাম গঠনের পর থেকেই এমন নেতিবাচক বিশেষণে বিশেষিত করা হচ্ছে এই সংগঠনটিকে। এটা আজ দিবালোকের মতো সুস্পষ্টÑ এই হতচ্ছাড়া ফোরামের কারণেই প্রকৃত ক্রীড়াপ্রেমী, ক্রীড়া সংগঠকরা আজ কোণঠাসা, বিপর্যস্ত এবং নিস্ক্রিয়। ফোরামের ভোটারদের চরিত্রটাই এমনÑ তারা কোন প্যানেলের প্রতিশ্রুতি বা মুখের কথায় বিশ্বাসী নয়, তারা বিশ্বাসী নগদ টাকায়! এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত বুধবার এক নজিরবিহীন, আতঙ্কজনক এবং গুমোট পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। আগের দুই নির্বাচনে অনেক কিছুই হয়েছে। যেমন অবাধ অর্থের ছড়াছড়ি, কাদা ছোড়াছুড়ি...। এবারের নির্বাচনেও তার ব্যত্যয় হয়নি। তবে আগের দুই নির্বাচনে যা ঘটেনি, এবার তাই ঘটে। একটি প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য হুমকি দেয়া হয়! সরেজমিনে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে কোন প্যানেলই পিছিয়ে নেই। বলা যায়, দুইপক্ষই উন্নয়নের নহর বইয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। ফুটবলকে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। শুধু থানা পর্যায়েই বাকি আছে আর কি! এখন দেখার বিষয়, আজকের নির্বাচনে কারা বা কোন প্যানেল বিজয়ী হয়। এই নির্বাচনে সভাপতি পদে ৪ জন, ৪টি সহ-সভাপতি পদের জন্য ১০ জন ও ১৫টি সদস্য পদের বিপরীতে মোট ৩৩ জন নির্বাচন করছেন।
×