ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গণগ্রন্থাগারে সামছুদ্দোহার আবৃত্তিসন্ধ্যা মঙ্গলালোক

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

গণগ্রন্থাগারে সামছুদ্দোহার আবৃত্তিসন্ধ্যা মঙ্গলালোক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনচেতা, দৃঢ়সংকল্প ও আত্মপ্রত্যয়ী এক আবৃত্তি শিল্পী এ কে এম সামছুদ্দোহা। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্পৃক্ত রয়েছেন আবৃত্তিশিল্পের সঙ্গে। শুক্রবার খরতাপমাখা দিন শেষে বৈশাখী সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো তাঁর প্রথম একক আবৃত্তিসন্ধ্যা। শিল্পীর ভরাট কণ্ঠে কবিতার দোলায়িত ছন্দে মুখরিত হলো সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন। মঙ্গলালোক শীর্ষক এ আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ দুই বাংলার বরেণ্য কবিদের কবিতায় সাজানো অনুষ্ঠানের সেøাগান ছিল ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে/উদার আলোক-মাঝে, উন্মুক্ত বাতাসে’। কবিতাপ্রেমীদের আগমনে আগমনে পরিপূর্ণ ছিল মিলনায়তন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খন্দকার আখতারুজ্জামান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আহ্্কাম উল্লাহ্্ ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংবৃতার সভাপতি সামসুজ্জামান বাবু। দেড় ঘণ্টা ব্যাপ্তির কবিতাসন্ধ্যার সূচনা হয় সম্মেলক আবৃত্তি পরিবেশনার মাধ্যমে। মঞ্চে আসেন সংবৃতার একঝাঁক আবৃত্তিশিল্পী। বিশ্বকবিকে আশ্রয় করে সব কণ্ঠ এক হয়ে পাঠ করে যায়Ñ অন্তর মম বিকশিত কর অন্তরতর হে/নির্মল করো, উজ্জ্বল করো, সুন্দর করো হে ...। এরপর একগুচ্ছ কবিতা নিয়ে মঞ্চে আসেন এ কে এম সামছুদ্দোহা। একে একে ১৯টি কবিতা পাঠ করে শ্রোতাদের হৃদয়ে ছড়িয়ে দেন স্নিগ্ধ অনুভূতি। কবিতার শরীর বেয়ে উঠে আসে মাটি, মানুষ এবং দ্রোহ ও প্রেমের বারতা। সৈয়দ শামসুল হকের আমার পরিচয় কবিতাখানি উঠে আসে বাকশিল্পীর কণ্ঠে। জাতিসত্তার প্রকাশিত অংহকারে শিল্পী বলে যানÑ আমি জন্মেছি বাংলায়, আমি বাংলায় কথা বলি/আমি বাংলার আলপথ দিয়ে হাজার বছর চলি/তেরোশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে? আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে ...। শিল্পীর পঠিত অন্য কয়েকটি কবিতার শিরোনাম ছিল নির্মলেন্দু গুণের ‘হুলিয়া’, জীবনানন্দ দাশের ‘আমি যদি হতাম’, সৃজন সেনের ‘মাতৃভূমির জন্য’, মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’, প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি বাংলায় গান গাই’, আসাদ চৌধুরীর ‘বারবারা বিডলারকে’, মারুফ রায়হানের ‘সবুজ শাড়িতে লাল রক্তের ছোপ’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হঠাৎ দেখা’, নার্গিসকে লেখা কাজী নজরুল ইসলামের চিঠি ‘নার্গিস আসার খানম’, শুভ দাশগুপ্তের ‘জন্মদিন’, সুবোধ সরকারের ‘শাড়ি’, ভাস্কর চৌধুরীর ‘আমার বন্ধু নিরঞ্জন’ ও রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লা রচিত কবিতা ‘লাশগুলো আবার দাঁড়াক’। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে উদ্্যাপিত আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস ॥ অন্য সব শিল্পের মতোই নৃত্যের ভাষাও আন্তর্জাতিক। সকল ভাষার মানুষই বোঝে নাচের ভাষা। অভিব্যক্তির সঙ্গে মুদ্রার মেলবন্ধনে প্রকাশিত শিল্পমাধ্যমটি তাই সহজেই মোহিত ও অনুপ্রাণিত করে নৃত্যানুরাগীদের। শুক্রবার ছিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে উদ্্যাপিত হয়েছে দিবসটি। সকাল থেকেই নৃত্য দিবসের রকমারি আনুষ্ঠানিকতায় দীপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। ‘চিত্ত মম বিকশিত হোক নৃত্যের তালে তালে’ সেøাগানে যৌথভাবে দিবসটি উদযাপনে ২৩ এপ্রিল থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। শুক্রবার ছুটির দিনের আলসেমি কাটিয়ে সকাল থেকেই অনুষ্ঠানের সমাপনী আয়োজনের সূচনা হয়। নৃত্যশিল্পীর নূপুরের নিক্কনধ্বনিতে সরব হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গল নৃত্য শীর্ষক পরিবেশনা। নৃত্য দিবসে সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা কাটিয়ে রাত পর্যন্ত চলে রকমারি আনুষ্ঠানিকতা। দেশবরেণ্য নৃত্যশিল্পীদের পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও প্রতিবন্ধী শিল্পীরাÑসবাই শামিল হয়েছেন নৃত্য দিবসের আয়োজনে। নৃত্যশিল্পী সংস্থার পাশাপাশি ২৭ এপ্রিল থেকে তিন দিনের আয়োজন ছিল নৃত্যসংগঠন নৃত্যাঞ্চলের। দুটোরই সমাপনী দিন ছিল শুক্রবার। একই সময়ে শিল্পকলা একাডেমির দুই স্থানে। দুইটিতেই ছিল নৃত্যানুরাগী দর্শকদের বিপুল উপস্থিতি । সন্ধ্যায় নৃত্যশিল্পী সংস্থার আয়োজনটি ছিল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। এতে সম্মাননা জানানো হয় ভাষাসৈনিক কবি ড. এনামুল হককে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। আলোচনায় অংশ নেন নৃত্যগুরু রাহিজা খানম ঝুনু। জাতীয় সঙ্গীতের সুরে শুরু হওয়া এ আয়োজনের শুরুতেই উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করে প্রতিবন্ধী নৃত্যশিল্পীরা। এরপর আলোচনা আর সম্মাননা পর্ব। তারপর নৃত্য পরিবেশন করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা ও তৃতীয় লিঙ্গের শিল্পীরা। এরপর একের পর এক দলীয় নৃত্যের পরিবেশনা। এতে অংশ নেয় পল্লবী ড্যান্স সেন্টার, কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়, স্পন্দন, দিব্য, জাগো আর্ট সেন্টার, নৃত্যছন্দ, নান্দনিক, আঙ্গিকাম, পুষ্প অঞ্জলি, ঘাষ ফুল নদী, ঝঙ্কার, স্বপ্ন বিকাশ, নৃত্যজন, নন্দন কলা কেন্দ্র, বকুল নৃত্যালয়সহ প্রায় ২০টি নৃত্যদল। এর আগে সকালে বের করা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। জাতীয় নাট্যশালায় যখন এ অনুষ্ঠান তখন একাডেমির নন্দন মঞ্চও মুখরিত নূপুরের ধ্বনিতে। সেখানে নৃত্যঞ্চলের নৃত্য দিবসের আয়োজনে নাচছিলেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা। নানা ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও, নৃত্য পরিবেশনায় তারা ছিল অনন্য। চোখে জ্যোতি না থাকলেও, তাদের নৃত্য আলো ছড়িয়েছে জলের উপর ভাসমান মঞ্চে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পাশাপাশি মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুরাও নিজেদের সৃজনে জয় করে নেয় উপস্থিত হাজারো দর্শকের মন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সুবিধাবঞ্চিত ও বিশেষ শিশুদের অংশগ্রহণ করে এ আয়োজনে। এতে অংশ নেয় উৎপত্তি বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, প্রয়াস বাংলাদেশ, রমনা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, প্রতীক, আরডিএস বাংলাদেশ, একসেস বাংলাদেশ ও সুইড বাংলাদেশের শিশুরা। স্মরণে কানিজ ফাতেমা মোহসিনা ॥ প্রয়াত সমাজকর্মী কানিজ ফাতেমা মোহসিনা স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ হায়দার আকবর খান রনো ও হায়দার আনোয়ার খান জুনোর মা প্রয়াত কানিজ ফাতেমা মোহসিনা। প্রগতিশীল চিন্তা, রাজনীতি, সমাজ প্রতিষ্ঠার আজীবন সক্রিয় নেপথ্য সহযোগী ছিলেন এ মহীয়সী নারী। তিনি এদেশের সব কমিউনিস্ট কর্মীর মা হিসেবে তাদের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে স্নেহছায়া দিয়েছেন। নেপথ্যে থেকে প্রতিনিয়ত সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাঁর অবদান গরিব-মেহনতি মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। শুক্রবার ছুটির দিনে বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এ মহীয়সী জননী স্মরণে এবং সব সংগ্রামী নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের লক্ষে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্নস্তরের রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন কানিজ ফাতেমা মোহসিনা স্মরণ কমিটির আহ্বায়ক ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এতে কানিজ ফাতেমা মোহসিনা ও অন্যান্য সংগ্রামী নারীর অবদান নিয়ে আলোচনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, আজিজুর রহমান, বহ্নিশিখা জামালী, রিপা দত্ত, মহসিন শস্ত্রপাণি, মনিকা মতিন প্রমুখ। এ সময় মায়ের স্মৃতিচারণা করেন হায়দার আকবর খান রনো। স্মরণসভার শুরুতেই ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে উদীচীর শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’, ‘আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’ ও ‘আলোর পথযাত্রী’ শিরোনামের তিনটি গান। এর পর ছিল আলোচনা ও স্মৃতিচারণ। কানিজ ফাতেমা মোহসিনা সম্পর্কে বক্তারা বলেন, তাঁর বাবা ছিলেন উপ-মহাদেশের বিখ্যাত রাজনীতিক সৈয়দ নওশের আলী। তাঁর বাবা বাংলার প্রথম পার্লামেন্টের স্পীকার ও মন্ত্রী ছিলেন। ছিলেন ব্রিটিশ ও জমিদার বিরোধী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বাবার কাছ থেকেই তিনি সমাজ ও রাজনীতির প্রথম পাঠ নেন। পরে পড়াশোনা করেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলে। বেগম রোকেয়া তাঁকে বিশেষ ¯েœহ করতেন। বৈশাখী সন্ধ্যায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতাসর ॥ শুক্রবার বৈশাখী সন্ধ্যায় রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতাসর। গুলশান এ্যাভিনিউয়ের হাবিব টাওয়ারের চতুর্থ তলায় এই উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিষদ।
×