ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাওয়ায় নদী শাসনের জন্য পদ্মার তলদেশ সমতল করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

মাওয়ায় নদী শাসনের জন্য পদ্মার তলদেশ সমতল করা হচ্ছে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ নদী শাসনের জন্য মাওয়া প্রান্তে নদীর তলদেশ সমতল করা হচ্ছে। পদ্মার তীর থেকে প্রায় ৪০ মিটার প্রস্থ করে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই সমতল করা হচ্ছে। তীব্র স্রোত এবং নদী ভাঙ্গন থেকে পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা রক্ষায় পুরোদমে চলছে এই কাজ। তবে মাওয়া প্রান্তের ট্রায়াল পাইলিংয়ের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। কিন্তু এটি অপসারণ না করার কারণে নদী শাসনের কাজে কিছুটা বিঘœ হচ্ছে। ডিনামাইট দিয়ে এটি অপসারণের কথা রয়েছে। নদী শাসন ছাড়াও চারদিকেই হরদম চলছে কাজ। পদ্মা সেতুর কাজের প্রসার এত বেশি যা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। মাওয়ার আশপাশ থেকে তাকালে যতদূর পর্যন্ত চোখ যাবে দেখা যাবে সেতুর কর্মযজ্ঞ। একই অবস্থা মাঝ পদ্মায় গিয়ে। আর মাঝেরচর থেকে খুব সহজে দেখা যায় ভারি ভারি যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার। জাজিরায়ও একই অবস্থা। এদিকে, কুমারভোগের ওয়ার্কশপে মূল সেতুর তিন মিটার ডায়ার ৮০টি পাইল তৈরি হয়ে গেছে। এগুলো পদ্মায় ভাসিয়ে রাখা হয়েছে। তবে হ্যামারের অভাবে স্থাপন কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। ৪২টি পিলারের মধ্যে ৪০টি পিলারের জন্য এমন ২৪০টি পাইল প্রয়োজন। আর বাকি দুই প্রান্তের অর্থাৎ ১ ও ৪২ নম্বর পিলারের জন্য ভিন্ন ধরনের ১২টি করে ২৪টি পাইল প্রয়োজন। তাই স্তূপ করে রাখা সত্ত্বেও পদ্মা তীরের বিশাল এই ওয়ার্কশপে পাইল তৈরি অব্যাহত রয়েছে। উচ্চ ক্ষমতার আরেকটি হ্যামার আসছে। এটি এলে পাইল ড্রাইভের গতি বাড়বে। বর্তমানে দুই হাজার ৪শ’ কিলোজুলের হ্যামারটি পাইল স্থাপন করছে। এটির ত্রুটির কারণে পাইল স্থাপন বিলম্ব হচ্ছে। এই হ্যামার বিশ্বে একটিই। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গভীরে পাইল স্থাপন হচ্ছে এই পদ্মা সেতুতে। এ কারণেই উচ্চ ক্ষমতার এই হ্যামার অর্ডার দিয়ে তৈরি করতে হয়েছে জার্মানে। জার্মানিরাই এই হ্যামার তৈরির জন্য পারদর্শী। তাই এই হ্যামার পরিচালনাও করছেন জামার্নির দু’জন প্রকৌশলী। কিন্তু এটি আনকমন হওয়ায় কিছু ত্রুটি হলে তাৎক্ষণিকই সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আবার জার্মান থেকে বিশেষজ্ঞ তলব করতে হচ্ছে। এতে সময় কিছুটা অপচয় হচ্ছে। তবে আগামী অক্টোবরে দুই হাজার কিলোজুল ক্ষমতার আরেকটি হ্যামার প্রকল্পস্থলে পৌঁছবে। এতে একটি ত্রুটি হলেও মেরামতের ফাঁকে অপরটি দিয়ে কাজ চলমান থাকবে। ৩৭ নম্বর পিলারে পাইল স্থাপনের সবকিছু তৈরি থাকলেও হ্যামারে সামান্য ত্রুটির কারণে ড্রাইভ করা যাচ্ছে না। তাই জামার্নি থেকে বিশেষজ্ঞ এসে এখন ত্রুটি সারছেন। শীঘ্রই আবার ড্রাইভ শুরু হবে। অন্যান্য কাজ চলছে পুরোদমে। এছাড়া পদ্মার স্প্যান তৈরি হচ্ছে চীনে। তিনটি স্প্যান তৈরি হয়ে গেছে। সরেজমিন এগুলো পরিদর্শনে তিন সদস্যের একটি বিশেষঞ্জ দল এখন চীনে রয়েছে। তারা ডিজাইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যতাসহ কাজের গুণগতমানসহ নানা বিষয় প্রত্যক্ষ করছেন। প্রায় সপ্তাহকাল ধরে অবস্থান করা এই দল কাল রবিবার নাগাদ প্রকল্পে ফেরার কথা রয়েছে। এই দলে রয়েছেন পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের মেজর ব্রিজ কোম্পানির প্রকৌশলী এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এই সফরে রয়েছেন। তারা দেখে আসার পরই এই স্প্যান চূড়ান্ত করে মাওয়ায় পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে এই তিন স্প্যান বসবে জাজিরা প্রান্তের ৩৯, ৩৮ ও ৩৭ নম্বর পিলারে। বিস্ময়কর এই পদ্মা সেতুর প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। স্প্যান বড় হওয়ার কারণে রিইনফোর্সড কংক্রিট দিয়ে তৈরি না করে ওজন কমাতে এই সেতুটির মূল অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে স্টিল দিয়ে। তীব্র বায়ুপ্রবাহ ও ভূমিকম্পজনিত ধাক্কা মোকাবেলায় বেছে নেয়া হয়েছে ওয়ারেন ট্রাস ফর্ম। পিলারের ওপর বসবে সেতুর সø্যাব ও ট্রাস। পর্যায়ক্রমে পিলার তৈরি হবে আর সেখানে সø্যাব ও ট্রাস জুড়ে দেয়া হবে। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের সেতুটি চার লেনবিশিষ্ট মূল সেতুটি দৈর্ঘ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং চওড়ায় ২২ মিটার। পুরো সেতুটির ভার বহন করার জন্য থাকছে ৪২টি পিলার। সেতু সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের এক বড় চ্যালেঞ্জ সফল হতে চলেছে। পদ্মা সেতুর ভিত্তির জন্য পাইলিং এতটা গভীরে, যা বিরল। এতটা গভীরে গিয়ে সেতুর জন্য পাইলিংয়ের নজির খুব কম। পদ্মার মাঝে করলী চরে সাপ্লিমেন্টারি কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে এখন শ্রমিকদের বসতি শুরু হয়েছে। তাই এই চরে বিশেষ পরিবেশ বিরাজ করছে। এখান থেকেই এখন আশপাশের পদ্মার মূল সেতুর কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
×