ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক শোডাউন প্রস্তুতি বিএনপির

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক শোডাউন প্রস্তুতি  বিএনপির

শরীফুল ইসলাম ॥ ঝিমিয়ে পড়া দলের বৈরী পরিস্থিতি কাটিয়ে তুলতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য মে দিবসের সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ঢাকা মহানগরীর সকল থানা ও ওয়ার্ড এবং আশপাশের জেলাগুলো থেকে ওই দিন বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে সমাবেশে উপস্থিত থাকতে সংশ্লিষ্ট ইউনিট নেতাদের ইতোমধ্যেই বিএনপি হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্রমতে, ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের পর দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে কিছুটা চাঙ্গা ভাব দেখা দিলেও এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৪২ জন ছাড়া আর কেউ পদ না পাওয়ায় আবারও হতাশা দানা বেঁধে উঠতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে রাজপথের কর্মসূচীতে নিষ্ক্রিয় থাকা দলটি ১ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ ঘিরে আবারও চাঙ্গা হওয়ার কৌশল নিয়েছে। মূলত বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দল এ সমাবেশের আয়োজক হলেও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি খালেদা জিয়া হওয়ায় দলের সর্বস্তর থেকেই এ সমাবেশ সফল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এদিকে দুই বছর ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকা বিএনপির সিনিয়র নেতা ও ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ কেন্দ্র করে আবার সক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আর মির্জা আব্বাস সক্রিয় হওয়ায় তাঁর অনুসারী মহানগর বিএনপির অন্য নেতাকর্মীও সক্রিয় হয়েছেন। ২৭ মে নয়াপল্টন ভাসানী ভবনে ঢাকা মহানগর বিএনপির যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মে দিবসের সমাবেশে স্মরণকালের বৃহৎ জনসমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানায় কাজ শুরু করেছে দলটি। মহান মে দিবস উপলক্ষ করে বিএনপি সমাবেশ করছে। এতে ঢাকার চারদিক থেকে গার্মেন্টস শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের জড়ো করার চেষ্টা করছে বিএনপি। শুক্রবার নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, ১ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য বৃহস্পতিবারই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) তাদের এ অনুমতি দিয়েছে। অবশ্য আরও আগেই গণপূর্ত অধিদফতর পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে শ্রমিক দলকে সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি দেয়। রিজভী বলেন, সমাবেশ সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এর আগে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্বশেষ সমাবেশ করে বিএনপি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে এটাই ছিল খালেদা জিয়ার প্রথম সমাবেশ। বেশ ক’বার চেষ্টা করেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি। ১৯ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার অনুমতি পেয়েও পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল করে দলটি। তবে এবার জাঁকজমকভাবে সমাবেশ করতেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বেছে নিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক দিন পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের সমাবেশ হচ্ছে। তাই এ সমাবেশ ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। আর এ সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতি ঘটিয়ে সমাবেশ সফল করার চেষ্টা চলছে। প্রসঙ্গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়ে বিএনপি। এর পর চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ প্রভাবশালী নেতারা মামলায় জড়িয়ে পড়া, টানা ৯২ দিনের নেতিবাচক আন্দোলন, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বর্জন, ইউপি নির্বাচনে ভাল ফল করতে না পারা ও জাতীয় কাউন্সিলের পরও দলের সাংগঠনিক দুরবস্থা কাটিয়ে তুলতে না পেরে সঙ্কট উত্তরণের পথ খুঁজে পাচ্ছে না দলটি। এ কারণে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আবারও হতাশ হয়ে পড়ছেন। টানা ৯২ দিন আন্দোলন চলাকালে গাড়ি পোড়ানো হত্যা মামলা এবং জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে বিএনপিকে বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে ফেলেছেন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের অন্য নেতারাও গাড়ি পোড়ানোসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। বেশ ক’জন নেতা কারাগারেও রয়েছেন। শীঘ্রই এসব মামলার চূড়ান্ত রায় হয়ে যাবে বলে সরকারী দলের নেতারা বলে আসছেন। আর তা হলে খালেদা জিয়াসহ দলের আরও ক’জন সিনিয়র নেতা গ্রেফতার হতে পারেন। মামলার কারণে কারাগারে যেতে হলে তারা আপাতত রাজনীতি করতে পারবেন না। খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে তার ছেলে লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানও একাধিক মামলার ফেরারি আসামি হওয়ায় দেশে আসতে চাইবেন না। কেউ কেউ তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমানকে রাজনীতিতে আনার চেষ্টা করলেও ডাঃ জোবাইদার এ ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে। তাই এখনই দল চাঙ্গা করতে না পারলে ভবিষ্যতে বিএনপিকে আরও কঠিন সময় অতিক্রম করতে হবে। আর এ বিষয়টি মাথায় রেখেই দলীয় হাইকমান্ড সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ কেন্দ্র করে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
×