ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিজামীর রিভিউ শুনানি ৩ মে, মীর কাশেমের পূর্ণাঙ্গ রায় শীঘ্রই

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

নিজামীর রিভিউ শুনানি ৩ মে, মীর কাশেমের পূর্ণাঙ্গ রায় শীঘ্রই

বিকাশ দত্ত ॥ মে মাসে সবার নজর থাকবে সুপ্রীমকের্টের আপীল বিভাগ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দিকে। অবকাশকালীন ছুটি শেষে ২ মে সুপ্রীমকোর্ট খুলবে। আদালত খোলার পরই ৩ মে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর প্রধান জামায়াতে ইসলামীর আমির বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে ৪ মার্চ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর কমান্ডার জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায়ও শীঘ্র প্রকাশিত হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১১ এপ্রিল কিশোরগঞ্জের দুই সহোদর এ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহম্মেদ ও ক্যাপ্টেন নাসির উদ্দিন আহম্মেদসহ পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনালে সিএভি রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন পক্ষ আশা করছে, শীঘ্রই এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। ট্রাইব্যুনালে জামালপুরের আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেনসহ ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৪তম সাক্ষী মোঃ এজাবুদ্দিন মিয়ার জবানবন্দী শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৯ মে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রসিকিউশন আশা করছে, মে মাসে এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হতে পারে। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। মামলার সংখ্যা বাড়াতে এবং দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তারকাখচিত আসামিদের বিচার শেষে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা দুটি থেকে একটিতে রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মোট ২২টি মামলায় ২৬ জনকে দ- প্রদান করেছে। এর মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যুদ-, একজনের যাবজ্জীবন, একজনের ৯০ বছরের কারাদ- এবং পাঁচজনকে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে পতালক আছে পাঁচজন। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে প্রায় ডজনখানেক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের দ-ের বিরুদ্ধে আপীল নিষ্পত্তি হয়েছে সাতটি। আর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে চারজনের। যাদের দ- কার্যকর করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। বর্তমানে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে মীর কাশেম আলীর আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। রায় প্রকাশিত হওয়ার পর আসামিপক্ষের রিভিউ করার পালা। আপীল বিভাগে এখনও ৯টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। মতিউর রহমান নিজামী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর প্রধান জামায়াতে ইসলামীর আমির বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন শুনানি ৩ মে অনুষ্ঠিত হবে। ১০ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। নিজামীর আইনজীবী এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে সময় চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপীল বিভাগের বেঞ্চ এ দিন ধার্য করে আদেশ দেন। গত ২৯ মার্চ সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবীরা রিভিউ আবেদন করেন। ৭০ পৃষ্ঠার মূল রিভিউ আবেদনের সঙ্গে মোট ২২৯ পৃষ্ঠার নথিপত্রে দ- থেকে খালাস চেয়ে ৪৬টি যুক্তি (গ্রাউন্ড) তুলে ধরা হয়েছে। রিভিউ আবেদনে এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হলেন এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন। রিভিউ আবেদন করার পরদিন ৩০ মার্চ তা দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। ওই দিনই এ আবেদনের শুনানি নিয়ে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন মির্জা হোসেইন হায়দারের আদালত। নিয়ম অনুযায়ী, রিভিউ নিষ্পত্তির আগে তার দ- কার্যকর করা যাবে না। আর রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামির ফাঁসি কার্যকর করবে। এর আগে গত ১৫ মার্চ নিজামীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। আইন অনুযায়ী পরোয়ানা শোনার পর থেকে নিজামী আপীল বিভাগের চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ের রিভিউ আবেদন করতে পারবেন ১৫ দিনের মধ্যে, যার শেষ দিন ছিল ৩০ মার্চ। তাই নির্ধারিত ১৫ দিন সময় শেষ হওয়ার একদিন আগেই নিজামী রিভিউ আবেদন জমা দেন। গত ৬ জানুয়ারি বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উস্কানিদাতাসহ মানবতাবিরোধী তিন অপরাধের দায়ে নিজামীর মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রাখে আপীল বিভাগ। ওই দিন সংক্ষিপ্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ। অন্য বিচারপতিরা হলেনÑ বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। মীর কাশেম আলী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর কমান্ডার, চট্টগ্রামের বাঙালী খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষা। ৮ মার্চ মীর কাশেম আলীর আপীল এক মিনিটে আংশিক খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। কিশোরগঞ্জের ৫ রাজাকার ॥ প্রসিকিউশন পক্ষ আশা করছে, খুব শীঘ্রই কিশোরগঞ্জের দুই সহোদও এ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহম্মেদ ও ক্যাপ্টেন নাসির উদ্দিন আহম্মেদসহ পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে রায ঘোষিত হবে। ১১ এপ্রিল এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। রায় ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনাল সিএভি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ যে কোন দিন রায় ঘোষণা করা হবে। জামালপুরের ৮ রাজাকার ॥ ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেটি হলো জামালপুরের আট রাজাকারের মামলা। ২৪ এপ্রিল জামালপুরের আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেনসহ আট রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৪তম সাক্ষী মোঃ এজাবুদ্দিন মিয়া জবানবন্দী শেষ করেছেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৯ মে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
×