ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

’১৫ সালে বিনামূল্যে আইনী সহায়তা পেয়েছেন ৩০ হাজার ৪০৯ জন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

’১৫ সালে বিনামূল্যে আইনী সহায়তা পেয়েছেন ৩০ হাজার ৪০৯ জন

আরাফাত মুন্না ॥ গত বছর সারাদেশে সরকারী খরচে বিনামূল্যে আইনী সহায়তা পেয়েছেন ত্রিশ হাজার ৪শ’ ৯ ব্যক্তি। যা ২০১৪ সালের চেয়ে ৫ হাজার এক শ’ ২৬ জন বেশি। দেশের স্বল্প আয়ের ও অসহায় নাগরিকদের আইনী সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ করা হয়। এ আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। এ সংস্থার অধীনে সুপ্রীমকোর্টসহ দেশের ৬৪ জেলায় লিগ্যাল এইড কমিটি কাজ করছে। সরকারের এ বিনামূল্যে আইনী সহায়তার কর্মসূচী শুরু হয় ২০০৯ সালে। আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ সংস্থাটি আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীকে সেবা দিয়ে আসছে। অর্জন আরও বাড়ছে ॥ জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক (সিনিয়র জেলা জজ) মালিক আব্দুল্লাহ আল-আমিন বলেন, বিনামূল্যে আইনী সহায়তা সেবা দেয়ার হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এ বছরের এ কয়েক মাসে আরও বেড়েছে। অসচ্ছল ব্যক্তিদের সরকারী খরচে সেবা পাওয়া অধিকার। সরকার এ জন্য হটলাইন চালু করেছে। মানুষ হটলাইনেও আমাদের থেকে আইনী সেবা/পরামর্শ নিচ্ছেন। সাত বছরের সেবার চিত্র ॥ জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা থেকে বিনামূল্যে আইনী সেবা গ্রহণ করেছেন ২০০৯ সালে ৯ হাজার এক শ’ ৬০ জন, ২০১০ সালে ১১ হাজার ২শ’ ৬৬ জন, ২০১১ সালে ১২ হাজার ৫শ’ ৮৬ জন, ২০১২ সালে ১৫ হাজার ৪শ’ ৫০ জন, ২০১৩ সালে ১৯ হাজার ৪শ’ ৯৩ জন, ২০১৪ সালে ২৫ হাজার ২শ’ ৮৩ জন এবং ২০১৫ সালে ৩০ হাজার ৪শ’ ৯ জন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ১২ হাজার ৪শ’ ১৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আইনগত সহায়তা প্রদানের যাত্রা ॥ অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের সরকারী খরচে আইনী সহায়তা দিতে ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন-২০০০’ নামে একটি আইন পাস করে। ২০০০ সালে এ আইনটি পাস হওয়ার পরে ২০০১ সাল থেকে তা কার্যকর হয়। এ আইনের মাধ্যমে অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের সরকারী খরচে আইনী সহায়তা দিতে সংস্থার অধীনে ৬৪ জেলায় ‘জেলা আইনগত সহায়তা কমিটি’ করা হয়। এ কমিটি সরকারী খরচে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মামলা পরিচালনা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কোনা ব্যক্তির মামলা করার প্রয়োজন হলে সরকারী খরচে মামলা দায়েরের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এ ছাড়া দেওয়ানি, ফৌজদারি, পারিবারিকসহ প্রায় ধরনের মামলায় আইনগত সহায়তা দেয় এই কমিটি। নারী, পুরুষ ও শিশু কেউ যদি টাকার অভাবে মামলা না করতে পারে অথবা বিনা বিচারে কারাগারে আটক থাকে, তাহলে সরকারী খরচে আইনগত সহায়তা দেয়া হয় তাদের। ২০০১ সাল আইনটি কার্যকরের পর পরবর্তীতে সরকারের পরিবর্তন আসায় কার্যক্রম গতি না পাওয়া, বরাদ্দকৃত অর্থ অব্যয়িত থাকা, পৃথক অফিস না করাসহ অন্যান্য উদ্যোগ কম থাকায় ২০০৮ সাল পর্যন্ত এর তেমন প্রচার ছিল না। ২০০৯ সাল থেকে আবার শুরু হয় আইনী সহায়তা দেয়ার কার্যক্রম। ১ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) আইন, ২০১১ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০-এ পরিবর্তন এসেছে, যাতে জাতীয় পরিচালনা বোর্ড গঠনে সদস্যদের মধ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কারা পাবেন বিনামূল্যে আইনী সেবা ॥ আইনগত সহায়তা প্রদানের আইন মতে, আর্থিকভাবে অসচ্ছল যে কোন ব্যক্তি (সুপ্রীমকোর্টের ক্ষেত্রে যার বার্ষিক গড় আয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার উর্ধে নয় ও অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে যার বার্ষিক গড় আয় ১ লাখ টাকার উর্ধে নয়), কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার উর্ধে আয় করতে অক্ষম এমন মুক্তিযোদ্ধা, যে কোন শ্রমিক যার বার্ষিক গড় আয় ১ লাখ টাকার উর্ধে নয়, বয়স্কভাতা পাচ্ছেন এমন কোনা ব্যক্তি, ভিজিডি কার্ডধারী দুস্থ মাতা, পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত নারী বা শিশু, দুর্বৃত্ত দ্বারা এ্যাসিড দগ্ধ নারী বা শিশু, আদর্শ গ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি, অসচ্ছল বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুস্থ নারীরা বিনামূল্যে আইনী সেবা পাবেন। এছাড়া উপার্জনে অক্ষম এবং সহায়-সম্বলহীন প্রতিবন্ধী, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অসমর্থ ব্যক্তি, বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি এবং জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে সুপারিশ করা বা বিবেচিত কোন ব্যক্তি পাবেন এ সহায়তা। আইনগত সহায়তার জন্য আবেদন কোথায় ॥ সুপ্রীমকোর্টের পাশাপাশি প্রতিটি জেলা জজকোর্টে অবস্থিত ‘লিগ্যাল এইড অফিস’ (আইনগত সহায়তা অফিস), জেলখানা বা কারাগারের কর্মকর্তাদের কাছে, জেলা বা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়, জেলা কমিটির সহায়ক কর্মকর্তা এবং অফিস সহকারীর কাছে; জেলা আদালতগুলোর বেঞ্চ সহকারীর কাছে; জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে এই সেবা পায়া যাবে। যিনি দরখাস্তকারী তিনি নিজে বা তার মামলা তদারককারী বা তদ্বিরকারী লিগ্যাল এইড অফিসে সরাসরি আবেদন জমা দিতে বা দাখিল করতে পারেন। তা ছাড়া কারাগার কর্তৃপক্ষ, ইউনিয়ন/ পৌরসভার চেয়ারম্যান বা মেয়র, কমিশনার, সমাজসেবা কর্মকর্তা বা বিভিন্ন এনজিওর কর্মকর্তার মাধ্যমেও আইনগত সহায়তার আবেদনপত্র লিগ্যাল এইড অফিসে পাঠানো যায়। সুপ্রীমকোর্ট কমিটি ॥ শুধু ৬৪ জেলাতেই নয়, উচ্চ আদালতেও রয়েছে আইনগত সহায়তা সংস্থার অফিস। আনুষ্ঠানিকভাবে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর অফিসটির উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এর আগে গঠন করা হয়েছে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। বর্তমানে এ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। সঙ্গে রয়েছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীসহ আরও ১১ জন সদস্য। এর মধ্যে চেয়ারম্যানসহ ১০ জন নিয়ে মূল লিগ্যাল এইড কমিটি। বাকি দু’জন পর্যবেক্ষক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। এ কমিটির মাধ্যমে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। ক্যাটাগরিগুলো হলোÑ ফৌজদারি আপীল ও রিভিশন, দেওয়ানি আপীল ও রিভিশন, জেল আপীল, রিট পিটিশন ও লিভ টু আপীল। সুপ্রীমকোর্টে আইনী সেবা দেয়ার জন্য লিগ্যাল এইড অফিস হাইকোর্ট বিভাগে ৬৯ এবং আপীল বিভাগে ৫ আইনজীবী দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন।
×