ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আজ

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ ॥ দীর্ঘ ১৪ বছর পর আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। স্থানীয় সার্কিট হাউস মাঠে বেলা ১১টায় জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। সম্মেলনে জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হবে। আর এবারই প্রথম কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটাভুটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচিত করছেন। জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল আর মহানগর কমিটিতে নতুন মুখ নেতৃত্বে আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। যদিও নির্ভরযোগ্য কোন সূত্র এ খবর নিশ্চিত করতে পারেনি। মূলত দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বিষয়টি চূড়ান্ত করছেন বলে ধারণা করছেন দলের স্থানীয় সূত্রগুলো। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান শুক্রবার জনকণ্ঠকে জানান, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটি খুশি মনে আনন্দের সঙ্গে মেনে নেবে সবাই। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমদ জনকণ্ঠকে জানান, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের বিভক্তিসহ উত্তেজনা ও সংঘাত এড়াতে এবং কাউন্সিলরদের মধ্যে কালো টাকা ছড়িয়ে ভোটাভুটিতে প্রভাব বিস্তার রোধ করতেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর এই ইতিবাচক উদ্যোগ। সর্বশেষ বিগত ২০০২ সালে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয় গত ২০০৪ সালে। ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। জেলা শহর ছাড়াও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের ছবিসংবলিত ডিজিটাল পোস্টার আর ব্যানারসহ অসংখ্য তোরণ সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য সাজে। সম্মেলনকে সামনে রেখে শহরজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। কে হচ্ছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক এ নিয়ে দলের ভেতর-বাইরে চলছে নানা বিশ্লেষণ ও আলোচনা। উজ্জীবিত দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রত্যাশা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে আওয়ামী লীগের এমন সক্রিয় কা-ারি ও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতৃত্বকেই দলের দায়িত্ব দেয়া হবে। জেলা কমিটির সভাপতি এবং মহানগর কমিটির সম্পাদক পদে নতুন মুখ আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এদিকে নেতৃত্বে জায়গা পেতে বেশ কিছুদিন ধরে স্থানীয় একাধিক নেতা রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে জোর লবিং ও তদ্বির করছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান দলের দীর্ঘদিনের একজন পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা। কারা নির্যাতিত ও বর্ষীয়ান এই পেশাদার নেতা স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ। আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে পরিচিত ময়মনসিংহের রাজনীতির নিয়ন্ত্রকও তিনি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিশেষ করে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মেয়াদে ময়মনসিংহের রাজপথ প্রকম্পিত রেখেছেন লড়াকু এই প্রবীণ রাজনীতিক ও তাঁর কর্মী-সমর্থকরা। সম্মেলনে সভাপতি পদটি এবারও তাঁর দখলে থাকছে এমনটি প্রত্যাশা স্থানীয় ত্যাগী সক্রিয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের। বলা হয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মাটি ও গণমানুষের নেতা ময়মনসিংহের সিংহপুরুষ বলে খ্যাত অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের কোন বিকল্প নেই। অতীতের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সামনের কাতারে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠিত রেখেছেন। জেলা কমিটির সভাপতি পদে অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সঙ্গে আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেনÑ জেলা পরিষদ প্রশাসক ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমেদ। সাধারণ সম্পাদক পদে এ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার, সাবেক ছাত্রনেতা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ফারুক আহমদ খান, এহতেশামুল আলম ও এ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের নাম শোনা যাচ্ছে। সম্মেলনে জেলা কমিটির সভাপতি পদে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাজিম উদ্দিন আহমদ নিশ্চিত বলে আভাস দিয়েছে দলের স্থানীয় একাধিক সূত্র। জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, সভাপতি পদে এ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাজিম উদ্দিন আহমদ এগিয়ে রয়েছেন। জেলা কমিটির সভাপতি পদে এমন রদবদলের সম্ভাবনার দাবি করে সূত্র আরও জানায়, এক্ষেত্রে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং তাঁর পুত্র আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা মোহিত উর রহমান শান্তকে মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করে নতুন চমক সৃষ্টি করতে পারেন দলের সভানেত্রী। নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের নয়া মহানগর কমিটির সভাপতি পদে সাবেক তুখোড় ছাত্রনেতা ও শহর আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম তারা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান মিল্কী টজু, সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও চেম্বার নেতা ব্যবসায়ী আশরাফ হোসাইন, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠানের নাম শোনা যাচ্ছে। আর সাধারণ সম্পাদক পদে ময়মনসিংহের মেয়র ইকরামুল হক টিটু ও জেলা আওয়ামী লীগের মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তর নাম শোনা যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের গতিশীল তরুণ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে দুই মেরুর তরুণ নেতৃত্ব ইকরামুল হক টিটু ও মোহিত উর রহমান শান্তর। মহানগর কমিটির নেতৃত্বে দেখতে এই দুই তরুণ নেতার নামে কেন্দ্রীয় নেতাদের ডিজিটাল ছবিসহ শহরে চোখে পড়ার মতো শত শত ডিজিটাল ব্যানার ও পোস্টার টাঙানো হয়েছে কর্মী-সমর্থকদের পক্ষ থেকে। নাম প্রকাশ করা হবে না শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার দাবি, কাউন্সিলে ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা না হলে ভবিষ্যতে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হবে না। সূত্র আরও জানায়, তৃণমূলে অচল কিংবা দলের তৃণমূলের ১০ জন কর্মী-সমর্থকের নাম বলতে পারবেন না এমন নেতাকে জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হলে হতাশা নেমে আসবে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। সাংগঠনিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে আওয়ামী লীগ। বিপরীতে দলের পরীক্ষিত ত্যাগী ও সরকারবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে ময়মনসিংহের রাজপথ কাঁপানো একাধিক নেতা রয়েছেন যারা কেবল উপজেলা, ওয়ার্ড ও গ্রাম পর্যায়ের তৃণমূলের শত শত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নাম মুখস্ত বলতে ও দেখলে চিনতে পারবেন এমন নেতা গুরুত্বপূর্ণ পদ না পেলেও দলে হতাশা নেমে আসতে পারে বলে দাবি কর্মীদের। মহানগর কমিটির সভাপতি পদপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতা ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম তারা জানান, দলের সভানেত্রীর কাছে নিশ্চয়ই তৃণমূলের সেন্টিমেন্টের খবর রয়েছে। সম্মেলনে এর প্রতিফলন ঘটবে বলে আশা এই নেতার। কমিটিতে নবীন ও প্রবীণ নেতৃত্বের বিকাশ ঘটলে দলে যেমন সমন্বয় থাকে, তেমনি সাংগঠনিকভাবেও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। তৃণমূলে যোগাযোগসহ দলকে সক্রিয় ও চাঙ্গা রাখতে নতুন মুখ সময়ের চাহিদা উল্লেখ করে শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান মিল্কী টজু জানান, মহানগর কমিটিতে পুরনো ত্যাগী জাদরেল নেতৃত্বের সঙ্গে তরুণ নেতৃত্বের প্রত্যাশা করছে কর্মীরা। শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম কায়সার ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের দাবি, তৃণমূলের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
×