ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাড়া-মহল্লায় ১৪ দলের সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

পাড়া-মহল্লায় ১৪ দলের সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের প্রস্তাব

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সম্প্রতি দেশে পরিকল্পিত গুপ্তহত্যার প্রবণতার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। দেশব্যাপী গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি, গ্রামে গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় ১৪ দলের নেতৃত্বে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়ে জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচার করতে হবে। অভিন্ন কণ্ঠে তারা বলেন, সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যাগুলো বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রেরই অংশ। জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসে সন্তোষ প্রকাশ করলেও জোটের শরিক দলের নেতারা গণপরিবহনে বাস ভাড়া কমাতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। শুক্রবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে এসব আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যাসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোটের দেশবিরোধী ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের উদ্যোগে দুটি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ৮ মে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবং ১৪ মে রাজশাহী মহানগরীতে সমাবেশ দুটি অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক শেষে সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে অসাংবিধানিক উপায়ে সরকার পরিবর্তন করার উদ্দেশ্যেই দেশে ধারাবাহিক হত্যাকা- চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। আজ যখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একটি মহল চক্রান্ত শুরু করেছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। উদ্দেশ্য একটাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে বিব্রত ও বিপর্যস্ত করা। এই সরকারকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চাপে ফেলা। কিন্তু জনবিচ্ছিন্নদের কোন ষড়যন্ত্র কোনদিনই সফল হবে না। বৈঠক সূত্র জানায়, সম্প্রতি কলাবাগানে জোড়া খুন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হত্যাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাসদের শিরীন আখতার, জাতীয় পার্টির জেপির এজাজ আহমেদ মুক্তা, বাসদের রেজাউর রশিদ খানসহ বেশ কয়েকজন ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতারা। দেশকে অস্থিতিশীল ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এসব হত্যাকা- পরিকল্পিতভাবে ঘটনো হচ্ছে এমন দাবি করলেও এসব গুপ্তহত্যার ঘটনা বেড়ে চললেও খুনী-ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে গুপ্তঘাতকরা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেই যাচ্ছে। বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা দ্রুত দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত, গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি এবং সারাদেশে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিলে আওয়ামী লীগ নেতারা তাতে সম্মতি দেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে কলাবাগানে জোড়া খুনের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বক্তব্যে এবং জোটের শরিক দুই মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের কিছু মন্তব্যের সমালোচনা করেন কয়েক নেতা। তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আগ বাড়িয়ে সহযোগিতার প্রস্তাব উদ্বেগজনক। এ সময় তথ্য ও বিমানমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, সরকারের মন্ত্রীরাই যখন সরকারের সমালোচনা করেন, দেশে প্রশিক্ষিত জঙ্গী থাকার বলেন, তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত তো এসব কথা বলবেনই। তাই সরকারে থাকা মন্ত্রীদের আরও সতর্ক হয়ে কথা বলা উচিত। বৈঠকে গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন গণপরিবহনের ভাড়া কমাতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারমূল্যের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে তেলের দাম কমিয়েছে। কিন্তু এতে গণপরিবহনের দাম কমেনি। এ ব্যাপারে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। এ দাবির সঙ্গে জাসদের অপর অংশের শরিফ নুরুল আম্বিয়াসহ আরও কয়েক শরিক দলের নেতারা একাত্মতা প্রকাশ করেন। বৈঠকে বিভক্ত জাসদ নিয়েও প্রশ্ন উঠে। বৈঠকে উপস্থিতি দুই অংশের নেতারাই নিজেদের আসল জাসদ বলে দাবি করেন। এ সময় বৈঠকের সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম দু’পক্ষকেই থামিয়ে দিয়ে বলেন, এ আলোচনা এখানে করবেন না। নিজেদের বিরোধী নিজেরাই আলোচনা করে মিটিয়ে নেবেন। আর মীমাংসার প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে করা যেতে পারে। যার পরবর্তীতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ নাসিম সকল হত্যাকা- নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক ও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে। আমাদের নির্বাচিত সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এ ধরনের ঘটনা মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, যারা নৈরাজ্য করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারাই গুপ্তহত্যার মাধ্যমে একাত্তরের ঘাতকদের বিচার বন্ধ করতে চায়। জাতীয়-আন্তর্র্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করেও এ বিচার বন্ধ করা যায়নি। এই বিচার হচ্ছে, হবে। অতীতের ভবিষ্যতেও বিএনপি-জামায়াত জোটের যে কোন চক্রান্ত জনগণকে সঙ্গে নিয়েই মোকাবেলা করবে ১৪ দল। সভার এক প্রস্তাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতিরা জয় হত্যার চেষ্টার দায়ভার ও শাস্তি থেকে রেহাই পেতে ভিত্তিহীন, কল্পিত ও বানোয়াট কুৎসা চালাচ্ছে। সভায় সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, কুমিল্লা, গোপালগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি স্থানে কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী অপতৎপরতার মাধ্যমে কয়েক বিশিষ্ট নাগরিকের প্রাণহানিতে গভীর ক্ষোভ, শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে নিহতদের পরিবার পরিজন সহকর্মী-শুভান্যুধায়ীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানো হয়। সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়, অনতিবিলম্বে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক। সভায় দেশের সকল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, স্ব-স্ব অবস্থান থেকে এ অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ফরিদুর নাহার লাইলী, ফজিলতুননেসা ইন্দিরা, আফজাল হোসেন, মৃণাল কান্তি দাস এমপি, সুজিত রায় নন্দি, জাতীয় পার্টির (জেপি) এ এইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ, এজাজ আহমেদ মুক্তা, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের শিরিন আক্তার, অপর অংশের শরীফ নূরুল আম্বিয়া, নাজমুল হক প্রধান, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, গণআজাদী লীগের এস কে সিকদার, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির কামরুল আহসান, ডাঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, গণতন্ত্রী পার্টির শহীদুল ইসলাম বাবলু, মজদুর পার্টির মোঃ জাকির হোসেন প্রমুখ।
×