ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খুন-খারাবির পর দুর্ধর্ষ ডাকাতি ॥ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ

অস্থির রাজশাহী ॥ নতুন শঙ্কায় এবার ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

অস্থির রাজশাহী ॥ নতুন শঙ্কায় এবার ব্যবসায়ীরা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীকে ‘শান্তির নগরী’ বলা হলেও সাম্প্রতিক একের পর এক নৃশংস হত্যাকা- ও সর্বশেষ বোমা ফাটিয়ে নগরে ত্রাস সৃষ্টি করে স্বর্ণের দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় অশান্ত হয়ে উঠেছে বিভাগীয় জেলা শহর রাজশাহী। ধারাবাহিক খুনের পর জনবহুল এলাকায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় এখন আতঙ্কিত নগরবাসী। বিশেষ করে এবার নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এ অবস্থায় রাজশাহী নগর পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রাজশাহীর এমপি, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন পুলিশের নিষ্ক্রীয়তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অদূরদর্শিতার কারণে রাজশাহী ক্রমেই ত্রাসের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। একের পর এক খুন ও ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের এখনও শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরজুড়ে ব্যাপক ত্রাস সৃষ্টি করে বোমা ফাটিয়ে একদল ডাকাত মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে এসে স্বর্ণের দোকান মালিককে কুপিয়ে লুটপাট করলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। এ নিয়ে রাজশাহী নগর পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন মহল। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাতে মহানগরীর গণকপাড়ায় এম রায় জুয়েলার্সের শোরুমে দুর্ধর্ষ ডাকাতির একদিন পেরিয়ে গেলেও জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি খোয়া যাওয়া প্রায় কোটি টাকার স্বর্ণালংকার। তবে নগরীর বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি ডাকাতদের শনাক্ত করে মালামাল উদ্ধারের। বিভিন্ন জায়গায় ইতোমধ্যেই খবর পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও তৎপর রয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নগরীর ব্যস্ততম এলাকা গণকপাড়ায় ১০-১২টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফিল্মিস্টাইলে কোটি টাকার স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায় সশস্ত্র ডাকাতদল। ওই সময় ওই এলাকা পুরো জনবহুল ছিল। সেখানে পুলিশের ডিউটি থাকার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে ঘটনার সময় পুলিশের উপস্থিতি ছিল না। সাধারণ হাজারো মানুষ যখন বোমার বিকট শব্দে দিগি¦দিক ছোটাছুটি শুরু করে তখনই ডাকাতদল সবকিছু লুট করে নির্বিঘেœ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর পুলিশ নগরীর সব প্রবেশপথে কড়া তল্লাশি ও বিভিন্ন থানায় বেতার বার্তা পাঠালেও সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের কাউকে ধরতে পারেনি। যেখানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে সেখান থেকে মাত্র ১শ’ গজ দূরেই মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি। অথচ ডাকাতদল প্রায় প্রকাশ্যে ত্রাস সৃষ্টি করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। নতুন শঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বলেন, এখন রাজশাহীর পুরো ব্যবসায়ী মহল শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। এদিকে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা আগে থেকেই রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহীর শান্তি রক্ষায় ‘এন্টি টেরোরিজম ফোর্স’ নিয়োগের দাবি জানিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে রাজশাহীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও তুলে ধরেন। তবে তার একদিন পরেই ডাকাতির ঘটনায় আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন সংসদ সদস্য বাদশা। তিনি বলেন, রাজশাহীর পুলিশ শৃঙ্খলা ফিরাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। শুধু পুলিশের অনিহায় রাজশাহীতে একের পর এক ঘটনা ঘটছে আর সারাদেশে রাজশাহীর ঘটনা সমালোচিত হচ্ছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অবিলম্বে ডাকাতদলের সদস্য ও সাম্প্রতিক শিক্ষক হত্যাসহ সকল হত্যাকা-ে জড়িতদের গ্রেফতার করতে হবে। এদিকে রাজশাহীর চলমান অস্থির পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহী নগর সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, রাজশাহীর পরিবেশ এত বেশি খারাপ ছিল না। কিন্তু আকস্মিকভাবেই পরপর তিন দিনে চারটি হত্যাকা- ও ডাকাতির ঘটনায় সারাদেশকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে। বিশেষ করে যারা শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী বা মুক্তচিন্তার চর্চা করেন তাদের বড় নাড়া দিয়েছে। এখন নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে ব্যবসায়ীদের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিমকে যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হলো, ঘাড়ের সঙ্গে তার মাথাটা অল্প লেগে ছিল। এটি ভয়াবহ-বীভৎস হত্যাকা-। অধ্যাপক হত্যার পরদিনই নিজ চেম্বারে গুলিতে নিহত হলেন আওয়ামী লীগ নেতা টুকু। সবকিছু মিলিয়ে হঠাৎ করে পরিবেশটা সবার জন্য উৎকণ্ঠার ও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লিটন বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতায় শৈথল্য, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ থাকা, প্রগতিশীল দলগুলোর ছাড়া ছাড়া ভাবসহ নানা নীরবতার কারণে আজকের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবস্থা।
×