ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধ বাণিজ্যের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

চট্টগ্রামে পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধ বাণিজ্যের অভিযোগ

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে পুলিশের মদদে অপরাধ বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে সপ্তাহব্যাপী অপরাধের স্বর্গরাজ্য। নগরব্যাপী অপরাধ দমনে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোতে। সিএমপি কমিশনারও বিট পুলিশিং সিস্টেমের আওতায় মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যদের ১০টি টিমে ভাগ করেছেন অপরাধ দমনে। অথচ নাকের ডগায় চলছে অপরাধের জাঁকজমক আয়োজন। যেখানে অবস্থান নিয়েছে শিশু থেকে পৌঢ় পর্যন্ত সকল বয়সী মানুষ মাত্র ঘণ্টাখানেকের নগ্ন নৃত্য ও অশ্লীল দেহ প্রদর্শনের নামে বৈশাখী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। প্রশ্ন উঠেছে, এই অপরাধ বন্ধ করার দায়িত্ব কাদের ওপর ন্যস্ত। কেনইবা তারা নিশ্চুপ। অভিযোগ রয়েছে, ঐতিহাসিক লালদীঘির ইতিহাস বিকৃত করতে পুলিশের ছত্রছায়ায় একটি চক্র বৈশাখী মেলা ও জব্বারের বলীখেলাকে ঘিরে নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত। সিটিএসবি থেকে অনুমতি নিয়েই প্রায় এক হাজার বর্গফুটের জায়গা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। বেষ্টনীর নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত এমনকি চতুর্দিকে ত্রিপল আর কাপড়ের শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। আচ্ছাদিত করা হয়েছে এমনভাবে যাতে বাইরে থেকে কিছুই দেখা না যায়। এর পেছনে মূল কারণ হলো দর্শকরা কোনভাবে বাইরে থেকে ভেতরের কিছু যেন দেখতে না পায়। তবে অনেকের ধারণা, পুলিশ থেকে লুকানোর জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ম্যানেজ হয়েছে অর্থ বাণিজ্যে। আর চড়া দামে টিকেট কিনে দর্শকরা মেতে উঠছে অপরাধে। বিগত বছরগুলোতে অশ্লীল নৃত্যশিল্পীদের ছবি সংবলিত ব্যানার টাঙানো হলেও এ বছর ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে অপরাধ ঢেকে রাখতে। অভিযোগ আছে, পুলিশের অর্থ বাণিজ্যের এ নীলনক্সা সমাজকে অধঃপতনে ঠেলে দিলেও বৈশাখী মেলা কমিটি চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে জব্বারের ঐতিহাসিক বলীখেলার আয়োজনকে ঘিরে। গত শনিবার থেকে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে শুরু হওয়া বলীখেলা উপজেলা মেলার তিন দিনব্যাপী আয়োজন সাত দিনেও শেষ হয়নি। আজ শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তাও অপরাধ বাণিজ্য বন্ধ না হলে আগামী রবিবার পর্যন্ত অর্থাৎ ১ মে পর্যন্ত গড়াতে পারে। বৈশাখ মাসকে ঘিরে বাঙালী সংস্কৃতির কথা বলে সিএমপির সিটিএসবি থেকে অনুমতি নিয়েছে আয়োজকরা। মেলা কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বৈশাখী মেলার জন্য তিন দিনব্যাপী পরিক্রমা ঘোষণা করেছেন সংবাদ কর্মীদের উদ্দেশ্যে। সে অনুযায়ী গত শনিবার থেকে তিন দিনব্যাপী তথা গত সোমবার জব্বারের বলীখেলার পর পরই মেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিগত বছরগুলোর অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করতে গিয়ে মঙ্গলবার যথারীতি মেলা শেষ হওয়াটা ছিল স্বাভাবিক। কারণ কোতোয়ালি মোড় থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত সিনেমা প্যালেস থেকে লালদীঘি পর্যন্ত গত কয়েক দিন ধরে মেলা কর্তৃপক্ষ দখলে রেখেছে সড়ক ও ফুটপাথ। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এমন আয়োজনকে ১০৭ বছর ধরে চট্টগ্রামবাসী বাহবা দিলেও মেলাঙ্গনে বৈশাখী মেলা উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যানারের অন্তরালে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। দিনের শুরুতে বা বিকেলেও এ ধরনের আচ্ছাদিত জায়গায় কোন ধরনের আয়োজন না থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে অশ্লীল নৃত্য ও দেহ প্রদর্শনের মহড়া। আচ্ছাদিত ওই অবস্থান থেকে বের হওয়া কয়েক জানিয়েছেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তো নয়, চলছে দেহ প্রদর্শনী। একের পর এক নর্তকীরা মঞ্চে উঠে আসছে আর চালাচ্ছে দেহ প্রদর্শনে নানা কসরত। সিনেমার পর্দায় বা টেলিভিশনে এ ধরনের পর্নোছবি কখনই প্রদর্শিত হয় না। তাই আকর্ষণের মাত্রা অনেক বেশি। কারণ নর্তকীরা দেহ প্রদর্শন করতে গিয়ে অনেকটা মুখের ওপর চলে আসে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের নৃত্যে উত্তেজনা বাড়াতে নর্তকীদেরসহ পুরুষরাও তাদের সঙ্গে শামিল হয়। এ ব্যাপারে সিএমপির এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অপরাধ বন্ধে সদ্য যোগদান করা সিএমপি কমিশনার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সদরের নাকের ডগায় চলমান অশ্লীল নৃত্যের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি। সিটি এসবি থেকেও অনুমতি দেয়া হয়েছে ৩ দিনের। অথচ চলছে সপ্তাহের বেশি। এতে যুব সমাজ বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া ছেলেরা অধঃপতনে যাচ্ছে।
×