ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে গম ক্রয় শুরু না হওয়ায় হতাশ চাষী

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

ঠাকুরগাঁওয়ে গম ক্রয় শুরু না হওয়ায় হতাশ চাষী

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ২৯ এপ্রিল ॥ খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য দিতে সরকার প্রতিবছর গম কেনার ঘোষণা দিলেও চাষীরা এতে খুব একটা লাভবান হচ্ছেন না। কারণ, চাষীর গোলা শূন্য হওয়ার পর শুরু হয় গম কেনার সরকারের কার্যক্রম। এতে চাষী নন, ফড়িয়া-ব্যবসায়ীরাই লাভবান হচ্ছেন। তাই চাষীবান্ধব ক্রয়সূচী প্রণয়ন ও সরকারী গুদামে চাষীর কাছ থেকে সরাসরি খাদ্যশস্য কেনার দাবি জানিয়েছেন কৃষক নেতা ও গমচাষীরা। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩ মার্চ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় অভ্যন্তরীণ গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সভায় ১ এপ্রিল থেকে প্রতি কেজি গমের দাম ২৮ টাকায় কৃষকদের কাছ থেকে সরকারী খাদ্যগুদামে সরাসরি কেনার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঠাকুরগাঁওয়ে ২১ হাজার ১১৭ টন গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। গম কেনা শুরু হয় ৫ মে। ততদিনে অনেক কম দামে গম বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন চাষীরা। এতে চাষীর কাছ থেকে কম দামে গম কিনে সরকারী গুদামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন ফড়িয়া-ব্যবসায়ীরা। রানীশংকৈলের ভবানন্দপুর গ্রামের গমচাষী রাজেন্দ রায় বলেন, গত বছর সরকারীভাবে গম কেনার কার্যক্রমে প্রকৃত কৃষক লাভবান হননি। কারণ, যখন সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়, তখন তাদের হাতে কোন গম ছিল না। পরে আবার মন্ত্রী-এমপিদের চাহিদায় গম কেনা হয়েছে। এ উদ্যোগে দলের নেতাকর্মীরা লাভবান হলেও কৃষকরা সুফল পাননি। চলতি বছর প্রতি কেজি ২৮ টাকা দরে ঠাকুরগাঁও থেকে ৩০ হাজার ২১০ টন গম সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ৫ এপ্রিল খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় ১০ এপ্রিল থেকে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত গম সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়। তবে শুক্রবার পর্যন্ত গম কেনা শুরু হয়নি। শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার খোঁচাবাড়ি হাটে কথা হয় বেগুনবাড়ি ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি গম বিক্রি করতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, এলাকার কৃষকরা অধিকাংশই ধারদেনা ও ঋণ করে জমিতে ফসল ফলান। ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তারা ফসল বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন। এ কারণে কৃষক গোলায় গম রেখে পরে তা সরকারী গুদামে বিক্রি করতে পারেন না। রানীশংকৈলের রাতোর গ্রামের কৃষক আবদুর রশীদ বলেন, ইচ্ছা করেই খাদ্য বিভাগ গম কাটার পর থেকে গম কেনে না। কারণ, এ সময় গম কেনা হলে বাজারে গমের দাম বেড়ে যাবে, লাভবান হবেন কৃষক। জেলা কৃষক লীগের সভাপতি সরকার আলাউদ্দিন বলেন, খাদ্যশস্য কেনার চলমান এ প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীরা নন, ব্যবসায়ী-ফড়িয়ারা লাভবান হন। ক্রয়সূচীতে পরিবর্তন এনে সংগ্রহ অভিযানকে কৃষকবান্ধব করতে হবে। জেলা খাদ্যশস্য ক্রয় কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক চৌধুরী মোছাব্বের হোসেন খান বলেন, মন্ত্রণালয়ে গম কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে মর্মে একটি চিঠি পেয়েছি। ৪-৫ দিনের মধ্যে সভা করে গম ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
×