ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও ম্যালেরিয়া

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

এখনও ম্যালেরিয়া

বিশেষ ধরনের মশার কামড়ের কারণে নানা রোগব্যাধি হয়ে থাকে। এক সময় ম্যালেরিয়া ছিল মারাত্মক একটি রোগ। কালের পরিক্রমায় ডেঙ্গু হয়ে ওঠে ম্যালেরিয়ার চাইতেও ভয়ঙ্কর। তবে ম্যালেরিয়া এখনও মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করার লড়াই চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এর অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ৩০টি দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলের যে লক্ষ্য ঘোষিত হয়েছে তা কিছুটা উচ্চাভিলাষী মনে হলেও অর্জনযোগ্য বলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মনে করে। পাশাপাশি, সামগ্রিকভাবে অর্জনের যে চিত্রটি সংস্থাটি তুলে ধরেছে তাও আশাব্যঞ্জক। লক্ষণীয় যে, ২০০০ সালের পর ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর হার ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বৈশ্বিকভাবেই। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই হার ৭১ শতাংশ। বাংলাদেশের চিত্রও ভিন্ন নয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর প্রদত্ত তথ্য মতে, ২০১৪ সালে যেখানে ম্যালেরিয়ায় মারা যায় ৪৫ জন, এক বছরের ব্যবধানে তা মাত্র ৯ জনে নেমে আসে। আক্রান্তের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব সর্বাধিক। সীমান্তবর্তী ১৩টি জেলার মধ্যে রয়েছে : রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কুড়িগ্রাম। ১৩ জেলার এক কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার ১৫ লাখ মানুষ। এ তিন জেলার ৭৫ শতাংশ মানুষ কীটনাশকযুক্ত মশারি দিয়ে রাতে ঘুমায়। তবে দিনে ঝোপ-ঝাড় থেকে বেরিয়ে আসা মশার আক্রমণ থেকে কিভাবে তারা রক্ষা পাবেন এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। দেশের অন্য ১০ জেলার মানুষ সংখ্যায় কম হলেও ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে। উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার জলবায়ু, সেখানকার জঙ্গল এবং পাহাড়ী ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ম্যালেরিয়ার মশা বিস্তারের জন্য বিশেষ উপযোগী। তাই এই এলাকাতে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবও বেশি। এটা সত্য যে, ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলো আর আগের মতো কার্যকর নেই। সার্বিকভাবে ম্যালেরিয়া নির্মূলে এটাই এখন অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বিশ্ব পরিসরে। তাই এই যুদ্ধে জয়ী হতে হলে নতুন অস্ত্রের উদ্ভাবন জরুরী হয়ে পড়েছে। ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন বা টিকা নিশ্চয়ই একটি উত্তম বিকল্প হতে পারে। তবে দৈশিক বিবেচনায় মনে রাখতে হবে পার্বত্য জেলাগুলোয় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মাত্রা সবচেয়ে বেশি হলেও বাস্তব কারণেই সেখানে কার্যকরভাবে ম্যালেরিয়াবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং তার সাফল্য ধরে রাখা খুবই কঠিন। প্রতিবেশী দেশগুলোর পার্বত্যাঞ্চলকে ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশকমুক্ত করা না গেলে আমাদের অর্জন যত ভালই হোক তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। সুতরাং, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই। এছাড়াও বাংলাদেশের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি। এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোয় নতুন করে ম্যালেরিয়া বিস্তারের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিগত বছরগুলোয় সরকার দেশের ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে আসছে। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সক্রিয় এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ একদিন বাংলাদেশকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা মানুষের।
×