ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অসহনীয় শব্দদূষণ

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

অসহনীয় শব্দদূষণ

শব্দদূষণ হলো নীরব ঘাতক। অথচ দেশের অধিকাংশ মানুষই এর ক্ষতিকর দিকটি সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন নয়। উচ্চ শব্দে বা জোরে আলাপচারিতা চালানোর প্রবণতা রয়েছে বহু মানুষের ভেতর। এটাও যে শ্রুতি ও মস্তিষ্কের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারেÑ এমন কথা উচ্চারিত হলে হয়ত তারা হেসেই উড়িয়ে দেবেন। পাবলিক প্লেসে চেঁচিয়ে সেলফোনে কথা বলার মতো বদভ্যাস থেকে মুক্ত নয় অনেক শহুরে ও শিক্ষিত মানুষও। এমন একটি সামাজিক পরিস্থিতিতে শব্দদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনা একটি চ্যালেঞ্জই বটে। আজ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের প্রেক্ষাপটে মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে ‘শব্দদূষণ’। বিশেষ করে শব্দদূষণের কারণে নতুন প্রজন্ম মানসিক ও শারীরিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শব্দদূষণের ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘিœত হওয়া, ঘুমের ব্যাঘাতসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শব্দদূষণে কান ঝালাপালা হয়, আমরা বিরক্ত হইÑ কিন্তু এই দূষণের মাত্রা দিন দিন কী পরিমাণ বাড়ছে, কী ভয়ানক ক্ষতি করছে আমাদের শরীর ও মনের, সে ব্যাপারে আমরা যেনবা নির্বিকার। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণের মাত্রা বিপদসীমার উর্ধে বহুদিন ধরেই। উত্তরোত্তর তা ভয়াবহ মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানীর প্রধান সড়কসমূহ তো বটেই, বিভিন্ন অলিগলির বাসিন্দা ও পথচারীদের জীবনও অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে। এমনকি নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত স্কুল-কলেজ-হাসপাতালগুলোয়ও উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ ঘটছে ভীষণ মাত্রায়। শ্রুতিযোগ্য স্বাভাবিক মাত্রা ৫০ ডেসিবেলের অনেক ওপরে শব্দদূষণ ঘটছে রাজধানীর সব স্থানেই। ঢাকায় শব্দদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত সপ্তাহে পরিবেশ অধিদফতরের এক তথ্যে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হয় ধানম-ির শংকর মোড়ে। এ এলাকায় দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা ১১৪ দশমিক ৭ ডেসিবেল। কম দূষণের এলাকা সচিবালয়ের সামনের রাস্তা। এখানে দূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ ৮৮ ডেসিবেল। অথচ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুসারে রাজধানীর মিশ্র (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) এলাকায় দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা ৬০ ডেসিবেল। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ঢাকার শব্দ নিয়ে জরিপ শুরু করেছে। জরিপে দেখা যায়, ঢাকায় নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে প্রায় দেড় গুণ শব্দ সৃষ্টি হচ্ছে। শব্দদূষণ রোধে আইন আছে, কিন্তু তার কোন কার্যকর প্রয়োগ দেখা যায় না। ২০০২ সালে উচ্চ আদালত থেকে হাইড্রোলিক হর্ন এবং বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী যে কোন ধরনের হর্ন গাড়িতে সংযোজনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এবং গাড়িতে বাল্ব হর্ন সংযোজনের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এই আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধানও রয়েছে। তাছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এর ২৫, ২৭, ২৮ ধারা মতে শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদ- ও কারাদ- উভয় প্রকার শাস্তির বিধান আছে। শব্দদূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নাগরিকদের সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে শব্দদূষণ বিষয়ে ‘বধির’ ব্যক্তিদের শিক্ষা দেয়াটাও জরুরী হয়ে পড়েছে।
×