ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় সঙ্গীতপ্রেমীদের মিলনমেলা ভাঙছে আজ

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৩০ এপ্রিল ২০১৬

শিল্পকলায় সঙ্গীতপ্রেমীদের মিলনমেলা ভাঙছে আজ

সাজু আহমেদ ॥ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সম্মিলিত সঙ্গীত শিল্পী সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত সঙ্গীত প্রেমীদের মিলনমেলা ‘সঙ্গীতমেলা-২০১৬’ শেষ হচ্ছে আজ। ‘গানে হোক জীবন সুন্দর’ এই শ্লোগানে গত ২৩ এপ্রিল ৮ দিনের এ মেলা শুরু হয়। মেলা উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে কয়েকদিন ধরেই অনেকটাই উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সারাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শিল্পী কলাকুশলী ও সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। নবীন প্রবীণ অসংখ্য জনপ্রিয় শিল্পীর স্বকণ্ঠে গান উপভোগ করতে পেরে অনেকটাই আপ্লুত দর্শকরা। গান শোনার জন্য দুপুরের পর থেকেই শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে দর্শক শ্রোতাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। মেলায় তাদের আগ্রহ এবং সাড়া পেয়ে উচ্ছ্বসিত আয়োজক কর্তৃপক্ষ। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় তারা এ ধরনের আয়োজন আরও করবেন বলে জানিয়েছেন তারা। তবে মেলা আয়োজনে কিছু ত্রুটি নিয়ে অভিযোগও রয়েছে। বিশেষ করে সঙ্গীতমেলায় সঙ্গীতের এ্যালবাম ও সিডি বিষয়ক স্টলের চেয়ে খাবারের স্টলের সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া মেলার আয়োজনের আগে দর্শক শ্রোতাদের জন্য যে সব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার অনেক কিছুরই দেখা মেলেনি। শুধু তাই নয় সবচেয়ে বড় অভিযোগ মেলায় নতুন এবং অপেক্ষাকৃত কম পরিচিতি শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনের নামে এমন সব শিল্পীকে গান গাইতে দেয়া হয়েছে যাদের সুর তাল লয়ের বিষয়ে যথেষ্ঠ ঘাটতি লক্ষ করা গেছে। তবে মেলায় অনেক জনপ্রিয় এবং প্রবীণ শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশনের বিষয়টি প্রশংসা করেছেন অনেকেই। মেলার অন্যতম চমক প্রতিদিন সঙ্গীত বুলেটিন প্রকাশ। এ বিষয়টির অনেকেই প্রশংসা করেছেন। প্রথমবারের মতো এ ধরনের আয়োজন প্রসঙ্গে সম্মিলিত সঙ্গীত শিল্পী সোসাইটির সভাপতি ও মেলার আহ্বায়ক আশরাফ উদাস জনকণ্ঠকে জানান, প্রথমবারের মতো এ ধরনের আয়োজনে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন তারা। এই সাফল্যে আগামীতে জেলা পর্যায়ে এ ধরনের আয়োজনের উদ্যোগ নেবেন। এ আয়োজন সঙ্গীত সংশ্লিষ্টরা ছাড়াও সাধারণ দর্শক শ্রোতাদেরও অনেকটাই চমকিত করেছে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের পাশাপাশি প্রতি ছয় মাস বা প্রতি তিন মাস পর পর এ ধরনের আয়োজনের চেষ্টা করবেন তারা। তবে নতুন শিল্পীদের সুযোগ দেয়ার নামে অশিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশন প্রসঙ্গে আশরাফ উদাস বলেন, দেখুন এত বড় আয়োজন হলেও সাড়া দেশের শিল্পীদের সংখ্যাও কম নয়। নবীন প্রবীণ সবাই চায় এখানে একটা হলেও গান গাইতে। তাই আমার চেষ্টা করছি প্রায় সবার অনুরোধ রক্ষা করতে। তবে সবার গান যে ভাল লাগবে এমন তো কথা নেই। আমরা চেয়েছি নবীনরাও পরিচিতি পাক। সে জন্যই তাদের সুযোগ দেয়া। আশা করছি তারা এর মাধ্যমে উৎসাহিত হবে। সঙ্গীত মেলায় নবীনদের পাশাপাশি অনেক প্রবীণ শিল্পীকে গাইতে দেখা গেছে। মেলার ষষ্ঠ দিন গাইতে এসেছিলেন আশির দশকের জনপ্রিয় মরমী কণ্ঠশিল্পী ইব্রাহিম। তিনি গান গাওয়ার পর এ মেলা প্রসঙ্গে বলেন, খুব ভাল লাগল গান গেয়ে। দর্শক শ্রোতারা যে আমাকে মনে রেখেছে তা টের পেয়েছি আমার দুটি গান গাওয়ার পর। আসলে মৌলিক কিছু যে শ্রোতারা গ্রহণ করে তার প্রমাণ আজকের এই মেলা। এ ধরনের আয়োজন আরও হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। সঙ্গীত মেলা উপলক্ষে বিশেষ প্রকাশনা ‘সঙ্গীতমেলা প্রতিদিন’ এর উদ্যোক্তা, ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের পরিচালক জনপ্রিয় শিল্পী ধ্রুব কুমার গুহ মেলায় সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। মেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ আয়োজনে আমি অভিভূত। দর্শকের সাড়ায় আমি আপ্লুত। তবে আমি মনে করি যে কোন ভাল উদ্যোগে সবার সহযোগিতা থাকা উচিত। শিল্পীদের মধ্যে বিভাজন থাকা উচিত নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। মেলায় আসা দেশের একমাত্র ভাওয়াইয়া পরিবারের সদস্য ভাওয়াইয়া শিল্পী একেএম মোস্তাফিজুর রহমান এবং সালমা মোস্তাফিজ এসেছিলেন তাদের দুই সন্তান সাহস মোস্তাফিজ ও মনিফা মোস্তাফিজ মনকে নিয়ে। মেলা প্রসঙ্গে তারা বলেন, মেলায় আমাদের মতো শিল্পীদের গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ। এদিকে আজ মেলার শেষ দিনে জি-সিরিজ এবং অগ্নিবীণার ৩০টি এ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এরপর গুনিজনদের সম্মানা দেয়া হবে। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করবেন হাসান মতিউর রহমান, মাহাদী, মেহরাব, ব্যান্ডদল আর্টসেল, আর্ক, দুরবীন, চাতক, চক্র এবং সমুদ্র। প্রসঙ্গত, ২৩ এপ্রিল সঙ্গীত মেলার উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। মেলায় বাংলা গানে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপত গীতিকার কুটি মুনসুর, সুরকার সুজেয় শ্যাম, শিল্পী আব্দুল জব্বার, শিল্পী সাদী মহম্মদ, ফকির আলমগীরসহ ২৫ গুণী ব্যাক্তিকে সম্মাননা দেয়া হয়। এছাড়া মেলায় বেশকিছু নতুন এ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সঙ্গীতমেলায় প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পী, ব্যান্ড শিল্পীসহ শতাধিক শিল্পী সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
×