ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেওয়ানী মামলায় নিম্ন আদালতের আর্থিক এখতিয়ার বাড়াতে বিল পাস

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

দেওয়ানী মামলায় নিম্ন আদালতের আর্থিক এখতিয়ার বাড়াতে বিল পাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ দেওয়ানী মামলায় নিম্ন আদালতের আর্থিক এখতিয়ার বাড়াতে ‘সিভিল কোর্ট (এ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১৬’ নামের একটি বিল পাস করা হয়েছে। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এ ছাড়া কোন প্রকার হয়রানি ছাড়া অনলাইনে কোর্ট ফি জমা দেয়ার বিধান রেখে কোর্ট ফিস (এ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১৬ পাস হয়। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিল দুটি সর্বসম্মতিতে পাস হয়। বিল দুটির ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর কণ্ঠভোটে নাকচ হয়। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম, মোঃ নূরুল ইসলাম ওমর, বেগম মেহজাবীন মোরশেদ ও মোঃ আব্দুল মতিন এবং স্বতন্ত্র সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী। জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ‘সিভিল কোর্টস (এ্যামেন্ডমেন্ট) সংশোধন বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আইনে পরিণত হবে। এরপর হাইকোর্টে বিচারাধীন সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা মূল্যমানের মামলা ৯০ দিনের মধ্যে জেলা জজ আদালতে স্থানান্তরিত হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা জজ তা নিষ্পত্তি করবেন। তবে যেসব মামলার শুনানি শুরু হয়েছে, তা হাইকোর্টেই থাকবে। অর্থাৎ হাইকোর্টে আপীল বা আংশিক শুনানির পর্যায়ে রয়েছে, তা নিম্ন আদালতে স্থানান্তরিত হবে না। এখন থেকে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যমানের মামলা জেলা জজ আদালতেই দায়ের করা যাবে। বিলে বলা হয়েছে, দেওয়ানী মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সহকারী জজ সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা মূল্যমান, সিনিয়র সহকারী জজ ২৫ লাখ টাকা এবং জেলা জজ ৫ কোটি টাকা মূল্যমানের মামলা গ্রহণ করতে পারবেন। বিদ্যমান আইনে সহকারী জজ সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা মূল্যমান, সিনিয়র সহকারী জজ চার লাখ টাকা এবং জেলা জজ পাঁচ লাখ টাকা মূল্যমানের মামলা গ্রহণ করতে পারবেন। জাতীয় সংসদে পাস হওয়া অপর বিলে কোর্ট ফি আদায়ের জন্য সরকার তফসিলী ব্যাংক, মোবাইল অপরেটর, মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রোভাইডার অথবা সরকার নিয়োজিত এজেন্ট নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। সরকার অনুমোদিত কোন এজেন্ট ছাড়া অপর কেউ স্ট্যাম্প বিক্রি করলে অথবা বিক্রির চেষ্টা করলে ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্যে ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারী বিভিন্ন সেবা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন প্রকার ফি দেয়ার প্রয়োজন হয়। নামজারি, জমির পর্চা ইত্যাদি সেবাসহ সকল প্রকার মামলার কার্যক্রমে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষকে কোর্ট ফি জমা দিতে হয়। কিন্তু সহজলভ্য না হওয়ায় কোর্ট ফি প্রদানের সময় সাধারণ জনগণ অনেক ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হয়। জনগণের হয়রানি রোধে, সহজেই এবং দ্রুততার সঙ্গে জনসেবা পৌঁছে দেয়ার স্বার্থে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে বা অনলাইনে কোর্ট ফি জমার সুযোগ সৃষ্টি করতে বিদ্যমান আইনে সংশোধনী আনা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা গেলে কোর্ট ফি ছাপানো, সংরক্ষণ ও পরিবহনের বিশাল ব্যয়-হ্রাসসহ জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে তা দেশের সকল শ্রেণীর মানুষকে বিভিন্ন প্রয়োজনে কোর্ট ফি জমা দিতে অহেতুক ভোগান্তি থেকে রক্ষা করবে। সাধারণের ই-সেবা প্রাপ্তি সহজলভ্য হবে। বিলে বলা হয়েছে, স্ট্যাম্পের সঙ্কট দেখা দিলে অনলাইনে স্টাম্পের জন্য জমা দেয়া টাকার রশিদ কার্যকর বলে গণ্য হবে। আবার চাইলে নগদ জমা দেয়া যাবে। আরও বলা হয়েছে, দেশের বিচারপ্রার্থী জনগণ যাতে সহজে, কম খরচে, দ্রুত ও কোন হয়রানি ছাড়া কোর্ট ফি জমা দিতে পারেন সেজন্য ১৪৬ বছর পর এ আইনের সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×