ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকির মুখেও অবিচল সালাউদ্দিন

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

হুমকির মুখেও অবিচল সালাউদ্দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তিল তিল করে যদি কারও চল্লিশটা বছর লাগে একটা অবস্থানে যেতে, মাত্র দুই দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্য কেউ যদি তার আসনটা ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চান, তাহলে সেটা কি মেনে নেয়া যায়? অভিজ্ঞতার কি কোন মূল্য নেই? বুদ্ধিমান পাঠকমাত্রই অনুধাবন করতে পারছেন- বলা হচ্ছে কাজী মোঃ সালাউদ্দিন এবং কামরুল আশরাফ খান পোটনের কথা। আসন্ন বহুল আলেচিত বাফুফে নির্বাচনে এই দুজনকে নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়। সালাউদ্দিনকে বলা হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ফুটবলার। অনেকেই তাকে অভিহিত করেন ‘ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি’ হিসেবে। ছিলেন একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা। খেলেছেন ঐতিহাসিক স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে। আবাহনীতে খেলেছেন সবচেয়ে বেশি সময় ধরে। দাপটের সঙ্গে খেলেছেন জাতীয় দলেও। জাতীয় দলের কোচও ছিলেন তিন দফায়। পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক। ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গত আট বছর ধরে তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এবং সাফ ফুটবলের সভাপতির গুরুদায়িত্ব পালন করছেন। মূলত সার ব্যবসায়ী এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবেই পরিচিত পোটন। অনেকেই বলছেন, তিনি মানুষ মন্দ নন। তবে ফুটবল অঙ্গনের লোক নন। ব্যবসা করার সুবাদে প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক তিনি। আর এটাকেই তিনি ফুটবলের কাজে লাগাতে চান। অনেকেই বলেন, টাকা দিয়ে নির্বাচনে জেতা যায় না। গেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতেন মুসা বিন শমসের। বাফুফে নির্বাচনে যারা ডেলিগেট, যারা ফুটবলটা বোঝেন, তারা নিশ্চয়ই সালাউদ্দিনকেই আবারও বেছে নেবেন। যদিও সালাউদ্দিনসহ তাদের বুধবার ফোন কলের মাধ্যমে হুমকি দেয়া হয়েছে। এতে গুজব ছড়িয়ে পড়ে নির্বাচন বানচাল হয়ে যাচ্ছে, সালাউদ্দিন সরে দাঁড়াচ্ছেন। এ সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় যখন বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থীদের পরিচিতি সভা বাতিল করা হয়। পরে জানা যায়, এখানেও নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপার। বাফুফের ইতিহাসে যা ঘটেনি, এবার তাই ঘটে। নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকি। বৃহস্পতিবার নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে বাংলাদেশে আসেন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) কর্মকর্তা মি. সং। অনেক চেষ্টা করেও তার কাছ থেকে কিছু জানা সম্ভব হয়নি। সালাউদ্দিন জানান, বভিন্ন মহল থেকে তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে। তবে যে করেই হোক তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। কোন কিছুই তার লক্ষ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। নিয়ম হচ্ছে, নিরাপত্তার কারণে যদি নির্বাচন পিছিয়ে যায়, তাহলে যতই সময় লাগুকÑ সালাউদ্দিনকে এ নির্বাচন সম্পন্ন করে যেতে হবে। সচেতন ফুটবলবোদ্ধাদের মতে, এর সবকিছুই সালাউদ্দিনের পক্ষে যাচ্ছে। ভোটারদের সহানুুভূতি পাবেন তিনি। তাছাড়া তার প্লাস পয়েন্ট দুটিÑ সভাপতি পদে তার অন্যতম স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী গোলাম রাব্বানী হেলালের সালাউদ্দিনের পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ। আরেকটি হচ্ছে ফোরামের পূর্ণ সমর্থন আদায়। এ থেকেই পরিষ্কার অনুধাবন করা যায়Ñ আসন্ন নির্বাচনে বাফুফের বর্তমান সভাপতি সালাউদ্দিনের অবস্থানটা কোথায় বা কেমন পর্যায়ে। এক কথায় বলা যায়, নির্বাচনের দাঁড়িপাল্লা এখনও ঝুলে আছে সালাউদ্দিনের দিকেই। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদের যেখানে পূর্ণ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাঁচাও ফুটবল পরিষদের কিন্তু পূর্ণ প্যানেল নেই, সদস্যপদে বরং দুজন প্রার্থীই কম আছে। তাছাড়া সিনিয়র সহসভাপতি পদে তারা নিজেদের তিন প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে ওই পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী। অনেকেই বলছেন, এতে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গেছে সালাউদ্দিনের প্যানেল। এ বিষয়টা অবশ্যই প্রভাব ফেলবে ১৩৪ ভোটার বা ডেলিগেটদের মনে। যুদ্ধ করতে এসে যদি যুদ্ধ শুরুর আগেই একপক্ষ হাল ছেড়ে, ময়দান ছেড়ে চলে যায়, তাহলে অপরপক্ষ তো বিনাযুদ্ধেই জিতে গেল। সালাম মুর্শেদীর ক্ষেত্রে বিষয়টা তো অনেকটা এরকমই। পক্ষান্তরে, অনেকটাই ব্যাকগিয়ারে চলে গেছে ‘বাঁচাও ফুটবল পরিষদ’-এর প্রার্থীরা। নির্বাচনী প্রচারণায়ও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছেন সালাউদ্দিন এবং তার প্যানেল। নির্বাচন উপলক্ষে ভোট পাওয়ার জন্য গত কয়েক দিনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়িয়েছেন তিনি। অন্যদের চেয়ে প্রচার অভিযান অনেক আগেই শুরু করেছেন সালাউদ্দিন এবং ডেলিগেটদের সঙ্গে যোগাযোগ-সম্পর্কটাও অন্যদের চেয়ে তারই বেশি। দেশের ফুটবলের উন্নয়নে তিনি কতটা সফল বা ব্যর্থÑ তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে একটা ব্যাপারে সবাইকে একমত হতেই হবে, সেটা হলো গত আট বছরে সালাউদ্দিন কিন্তু ফুটবলকে মাঠে রেখেছেন। ফলে ফুটবলমোদীরা মনে করছেন নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সালাউদ্দিনের বিজয় কেউই ঠেকাতে পারবে না। এখন দেখার বিষয়- শেষ পর্যন্ত কী হয়।
×