ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রূপগঞ্জে ধরাশায়ী গাজী গ্রুপ ॥ আয়েশি জয় ব্রাদার্সের

মুশফিকের সেঞ্চুরিও বাঁচাতে পারেনি মোহামেডানকে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

মুশফিকের সেঞ্চুরিও বাঁচাতে পারেনি মোহামেডানকে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। চমক জাগাচ্ছে। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) একের পর এক প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করছে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল হয়েও প্রথম ম্যাচে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে টাই করার পর বৃহস্পতিবার শক্তিশালী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে হারিয়েই দিয়েছে। মুশফিকুর রহীম শতক করলেন। অথচ তার পরও ২ উইকেটে ভিক্টোরিয়ার কাছে হারল মোহামেডান। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের মধ্যকার যে জমজমাট একটি লড়াই হতে পারে, সমান শক্তির দল হওয়ায় সেই ভাবনা সবার ভেতরই ছিল। তা হয়েছেও। শেষপর্যন্ত ৩ উইকেটে জিতল রূপগঞ্জই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যে ব্রাদার্সই জিতবে, তা আগে থেকেই অনুমিত ছিল। ঘটলও তাই। ৬ উইকেটে কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমিকে অনায়াসেই হারাল ব্রাদার্স। মুশফিকের শতকের জবাবে তিন অর্ধশতক দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন মুশফিক। ফর্মহীনতা যেন পুরোপুরি দূর করে ফেলেছেন। অফ ফর্মে থাকা এই ব্যাটসম্যান যেন ঢাকা লীগে খেলতে নামতেই ছন্দে ফিরে এসেছেন। প্রথম ম্যাচে ৭২ রান করার পর বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ম্যাচেই ১০৮ বলে ৪ চার ও ৫ ছক্কায় ১০৪ রানের ইনিংস খেলেছেন। লিস্ট এ ম্যাচে সপ্তম শতক করলেন মুশফিক। ব্যাটিং ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠলেন। মোহামেডানও মুশফিকের ইনিংসের ওপর ভর করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৪৭ রান করে। কিন্তু মোহামেডান এরপরও জিততে পারল না। মুশফিকের এক শতকের বিপরীতে যে তিন অর্ধশতকের জবাব মিলেছে। ভিক্টোরিয়ার সোহরাওয়ার্দী শুভ দুর্দান্ত বোলিং করেন (৪/২৯)। বিকেএসপিতে হওয়া ম্যাচটিতে জিতলে টানা দ্বিতীয় জয় পেত মোহামেডান। কিন্তু তা হলো না। হারের স্বাদ পেল সাদা-কালো শিবির। মুমিনুল হকের ৬৭, আব্দুল মজিদের ৫৫ ও নাদিফ চৌধুরীর অপরাজিত ৫১ রানে ৪৮.৪ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫০ রান করে জয় তুলে নেয় ভিক্টোরিয়া। প্রথম ম্যাচে ‘টাই’য়ের স্বাদ মিলে ভিক্টোরিয়ার। ১ পয়েন্ট পায়। এবার জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে। মিঠুন-আসিফ দ্যুতিতে রূপগঞ্জের জয় ফতুল্লায় জমজমাট একটি ম্যাচই মিলে। এক ওভার বাকি থাকতে খেলা শেষ হয়। তাতে বাজিমাত করে রূপগঞ্জই। দুই দলই সমশক্তির ছিল। খেলাও হয় পাল্লা দিয়ে। আগে ব্যাট করে পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ার জুনিয়রের ৭০, শামসুর রহমান শুভ’র ৬৯ ও এনামুল হক বিজয়ের ৪২ রানে ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫৫ রান করে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। ম্যাচটিতে সৌম্য সরকার যেন বল হাতে আবার নিজেকে ফিরে পেলেন। জাতীয় দলে পেস অলরাউন্ডার হিসেবেই সুযোগ মিলেছিল সৌম্যের। কিন্তু ব্যাটিংটা শুরুতে দুর্দান্ত করলেও বোলিংটাতে অনুজ্জ্বলই ছিলেন। বৃহস্পতিবার গাজী গ্রুপের বিপক্ষে ২ ওভার বল করে ১৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে আবার বোলিং ঝলক দেখান। রূপগঞ্জের ব্যাটসম্যানরাও হতাশ করেননি। প্রথম ম্যাচে ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে হারতে হারতে ‘টাই’ করে রূপগঞ্জ। এবার জয়ই তুলে নেয়। মোহাম্মদ মিঠুন দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। ৭৫ রানের ইনিংস খেলেন। মিঠুনের পর আসিফ আহমেদ রাতুল অপরাজিত ৫৪ রান করেন। আসিফের সঙ্গে আলাউদ্দিন বাবু (৩৪*) যে ৪৭ রানের জুটি গড়েন, তাতে রূপগঞ্জের জয় পেতে বেগ পেতে হয়নি। ৪৯ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান করে জিতে যায় রূপগঞ্জ। তুষার ঝলকে ব্রাদার্সের প্রথম জয় ব্রাদার্স-কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি (সিএ) ম্যাচে যে ব্রাদার্স জিতবে, তা আগে থেকেই সবার ধারণা হয়ে যায়। কারণ কলাবাগান সিএ দলটি যে দুর্বল দল। তরুণ ক্রিকেটারদের দিয়েই গড়া হয়েছে দলটি। সে তুলনায় ব্রাদার্সে অভিজ্ঞ-তরুণের সংযুক্তি এমনভাবে ঘটানো হয়েছে যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিপক্ষে জয় পাওয়া কঠিন হওয়ার কথা নয়। সেই অভিজ্ঞতার জয়ই যেন হলো। তুষার ইমরান বল হাতেও যেমন জ্বললেন, ব্যাট হাতেও দেখালেন ঝলক। কলাবাগান সিএ আগে ব্যাট করে মাহমুদুল হাসানের ৫৪ রানে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২১৩ রান করে। তুষার ৫ ওভার বল করে মাত্র ১৬ রান দেন। কলাবাগান সিএ ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখেন। এরপর ব্যাট হাতে অপরাজিত ৬৭ রানের ইনিংসও খেলেন। জিম্বাবুইয়ের শন উইলিয়ামসের (৭০) সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে আবার ১২৫ রানের জুটিও গড়েন। এ জুটিতেই মূলত ব্রাদার্সের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় ম্যাচ। ১৯৭ রানে উইলিয়ামস আউটের পর রুমান আহমেদকে (৬*) নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তুষার। ব্রাদার্সকে প্রথম জয়ও এনে দেন ম্যাচ জয়ের নায়ক তুষার। ৪৫.৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান করে ম্যাচ জিতে ব্রাদার্স। স্কোর ॥ ভিক্টোরিয়া-মোহামেডান ম্যাচ-বিকেএসপি-৩। মোহামেডান ইনিংস ২৪৭/৯; ৫০ ওভার (মুশফিক ১০৪, আরিফুল ৪২*, ডিকেন্স ২৬, মিলন ১৯; সোহরাওয়ার্দী ৪/২৯)। ভিক্টোরিয়া ইনিংস ২৫০/৮; ৪৮.৪ ওভার (মুমিনুল ৬৭, মজিদ ৫৫, নাদিফ ৫১*; হাবিবুর ২/৪৩)। ফল ॥ ভিক্টোরিয়া ২ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা ॥ মুশফিকুর রহীম (মোহামেডান)। রূপগঞ্জ-গাজী গ্রুপ ম্যাচ-ফতুল্লা গাজী গ্রুপ ইনিংস ২৫৫/৮; ৫০ ওভার (সাঈদ আনোয়ার জুনিয়র ৭০, শামসুর ৬৯, বিজয় ৪২, ফারুক ৩০*; সৌম্য ২/১৪)। রূপগঞ্জ ইনিংস ২৫৬/৭; ৪৯ ওভার (মিঠুন ৭৫, আসিফ ৫৪*, জাইদি ৩৭, বাবু ৩৪*; দেলোয়ার ২/২৮)। ফল ॥ রূপগঞ্জ ৩ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা ॥ মোহাম্মদ মিঠুন (রূপগঞ্জ)। ব্রাদার্স-কলাবাগান সিএ ম্যাচ কলাবাগান সিএ ইনিংস ২১৩/৭; ৫০ ওভার (মাহমুদুল ৫৪, ইরফান ৪২, তাপস ৩০; সঞ্জিত ২/২৩)। ব্রাদার্স ইনিংস ২১৪/৪; ৪৫.৩ ওভার (উইলিয়ামস ৭০, তুষার ৬৭*, শাহরিয়ার ২৬, নাফিস ১৩)। ফল ॥ ব্রাদার্স ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা ॥ তুষার ইমরান (ব্রাদার্স)।
×