ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ গ্রীষ্মের প্রখর রোদ। তবু অন্ধকার কাটছে না। অগ্নিস্নানে শুচি হওয়ার লক্ষণ নেই কোন। উপরন্তু মানুষরূপী হায়েনার দল প্রিয় শহর ঢাকাকে কলঙ্কিত করছে। একটার পর একটা খুন। নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকা-। ধর্মের নামে দিনে দুপুরে যারপরনাই অধর্ম করা হচ্ছে। উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর চাপাতির কোপে রক্তাক্ত হচ্ছে স্বাধীন চিন্তার মানুষ। শুরুটা অনেক আগেই হয়েছিল। কিন্তু শেষ হবে কবে? না, কেউ বলতে পারছেন না। বিশেষ করে ঢাকার কলাবাগানে গত সোমবার সংঘটিত হত্যাকা- নতুন করে শঙ্কিত করে তুলেছে নগরবাসীকে। এদিন বাসার ভেতরে ঢুকে দুই তরুণ জুলহাস মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয়কে হত্যা করে জঙ্গীগোষ্ঠী। জুলহাস সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতেন। ‘রূপবান’ নামে একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিলেন তিনি। তনয় নাট্যাঙ্গনের অত্যন্ত পরিচিত মুখ। তাদের মত পথের সঙ্গে মেলে নাÑ শুধু এ কারণে দুই তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এমন বর্বর ঘটনায় শোকস্তব্ধ নগরী। মানবিক মানুষ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। সর্বত্র ক্ষোভ পরিলক্ষিত হচ্ছে। যে কোন মূল্যে খুনীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে চলছে প্রতিবাদী কর্মসূচী। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক ব্যর্থতায় ভরসা পাচ্ছেন না অনেকেই। আর তাই বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার প্রস্তুতি চলছে। বাসা-বাড়ির নিজস্ব নিরাপত্তাও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন সতর্ক নাগরিকরা। এভাবে সবাই সচেতন হলে, সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারলে সাফল্য আসবে। আসার কথা বৈকি। দেখতে দেখতে এক বছর পূর্ণ হয়ে গেল। নির্বাচিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার এক বছর পূর্ণ করেছেন ঢাকার দুই মেয়র। গত বছরের ২৮ এপ্রিল নির্বাচিত হয়েছিলেন আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন। নতুন মেয়রদের কাছে প্রত্যাশাও ছিল প্রচুর। সেই চাওয়া পাওয়ার হিসাব এখন চলছে। না, খুব হতাশ হওয়ার মতো নয় পারফর্মেন্স বরং কিছু ভাল কর্মকা- দৃশ্যমান হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক তো দারুণ প্রশংসিত। কাজ করার মানসিকতা, সাহস, শক্তি সততা তার আছে বলেই বিশ্বাস করছেন নগরবাসী। আস্থা রেখেছেন মেয়রের ওপর। সাঈদ খোকনও দায়িত্ব পালনে পিছপা হচ্ছেন না। রাস্তায় নামলেই দুই মেয়রের কিছু না কিছু কাজ চোখে পড়ে। এই যেমন অতি সম্প্রতি ঢাকার ফুটপাথে ওয়েস্ট বাস্কেট স্থাপন করা হয়েছে। সংখ্যায় তা আট শ’র বেশি। মে মাসের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০০টি করে মোট ৫ হাজার ৭০০ বাস্কেট বসানোর কথা রয়েছে। উত্তর সিটি কর্পোরেশন প্রতি দেড় শ’ মিটার পরপর বসাচ্ছে একটি করে বাস্কেট। ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা জানিয়েছেন, যেসব স্থানে লোকসমাগম বেশি সেসব স্থানে ১৫০ মিটার পর পর বিন স্থাপন করা হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত কম জনসমাগম যেসব স্থানে, থাকবে প্রতি ৩০০ মিটার পর পর। আগামী মাসের মধ্যে দুই সিটি কর্পোরেশনে ১০ হাজার ৭০০ ওয়েস্ট বাস্কেট বসানো হবে বলে জানা গেছে। আর তা হলে পানি খাওয়ার পর শূন্য বোতল, চিপস আইসক্রিম চকোলেটের প্যাকেট হাতের কাছের ওয়েস্ট বাস্কেটেই ফেলবেন পথিক। নিজের শহরকে সুন্দর রাখার স্বার্থে একটু সচেতন হবেন সবাই, এটুকু আশা নিশ্চয়ই করা যায়। মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনের কাজটিও বেশ গতি পেয়েছে। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির প্রায় সর্বত্রই নিবন্ধনের জন্য দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ছে। বিভিন্ন দোকানে ভিড় করছেন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা। হঠাৎ ভিড় বেড়ে যাওয়ার কারণ, হাতে তেমন সময় নেই। শনিবারের মধ্যে সিম নিবন্ধন না করা হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। বৃহস্পতিবারও তিনি বলেছেন, শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত সিম নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে। এর মধ্যেই অনিবন্ধিত সিমগুলো পুনঃনিবন্ধন করে নিতে হবে। তা না হলে ব্যবস্থা! এর পর অনিবন্ধিত থাকার সুযোগ কই! হাতিরঝিল-গুলশান লেকের সংযোগস্থলে নির্মিত নতুন সেতুটি সাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। এই সেতু নির্মাণের ফলে মেরুল বাড্ডার সঙ্গে হাতিরঝিলের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলো। একইভাবে যোগাযোগ স্থাপিত হলো গুলশান লেকের ওয়াকওয়ের সঙ্গে। আশা করা হচ্ছে, নতুন এই সংযোগ সেতু খুলে দেয়ায় বাড্ডা ও গুলশান এলাকার ট্রাফিক জ্যাম কমে আসবে। যাতায়াতের সুবিধার্থে ঢাকার গুলশান লেকের ওপর সাত থেকে আটটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
×