ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্ভিদস্বভাব

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

উদ্ভিদস্বভাব

গাছপালার ভেতর বড় হওয়া লেখক জায়েদ ফরিদ গাছকে আত্মীকরণ করে যেন নিজেই গাছ হয়ে গেছেন। গভীর পর্যবেক্ষণ থেকে লেখা ‘উদ্বিদস্বভাব’ তার উদ্ভিদবিষয়ক প্রথম বই। রিয়াদের বিজ্ঞান জাদুঘরে কর্মরত লেখক বইটিতে আমাদের পরিচিত দেশজ উপাদানে তৈরি এক আকর্ষণীয় রচনারীতি ব্যবহার করেছেন। এতে মূলত উদ্ভিদ ও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রাণীকে নিয়ে লেখা ৫০টি প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত আছে। তাতে প্রাসঙ্গিকভাবে গাছের পাশাপাশি অবতারণা করা হয়েছে কাচপোকা, লেডিবাগ, এফিড, প্রজাপতি, বাঁদুড়, পরাগায়নকারী কীটপতঙ্গ, ইত্যাদি প্রাণীর। লেখক সর্বস্তরের মানুষের জন্যে বাঁশঝাড়ে গণপুষ্পায়ন, কিমেরা, বাস্তুম-লের উপাখ্যান, ইত্যাদি জটিল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলো অত্যন্ত সহজবোধ্যভাবে লিখেছেন। রহস্যময় সমুদ্রফল, জীবন্ত সেতু, ফিবোনাচ্চি রহস্য, নাইটক্লাব ও তাপক উদ্ভিদ, আমপাতা থেকে ভ্যানগোর ছবি, লতাবট ও টোপিয়ারি ইত্যাদি অভিনব ও বৈচিত্র্যময় প্রবন্ধের সমাহার উদ্ভিদ বিষয়ে লিখিত গ্রন্থে ইতিপূর্বে আর কখনো এভাবে দৃষ্টিগোচর হয়নি। গবেষণামূলক মনোভাবসম্পন্ন এই লেখক রচনা করেছেন পরাগায়নে ভ্রমরকুঞ্জের আবশ্যকতা, কৃষি বিপ্লবে সনাতন দেবধান, ফাইটোলিথ গবেষণা, আদি জবা ও সঙ্কর জবা, অ্যালিলোপ্যাথি, বৃক্ষের শিলীভবন, আমের পাতায় উরুশিয়লের মতো প্রবন্ধ। আমাদের সবার চেনা গাঁদা, ঘাস, নটে, ভাদ্রা, রুদ্রপলাশ, শীতলপাটি, কালমেঘ, ভুঁইওকরা, দাঁতরাঙা, পদাউক নিয়ে তার রচনাগুলো পড়লে নতুনভাবে আমাদের চারপাশকে জানা হবে। সমসাময়িক বিষয়ের উপরও কিছু প্রবন্ধ তিনি লিখেছেন যার ভেতরে রয়েছে, উইলো থেকে ক্রিকেট ব্যাট, আজকের দইগোটা ভবিষ্যতের ঠোঁটরঞ্জনী, তুন্দ্রাঞ্চলের অভিযোজন ও হিমজমাট মৃত্তিকা ইত্যাদি। অনেক প্রবন্ধের নিচে তিনি ব্যক্ত করেছেন, ইঙ্গিত করেছেন জাতীয় পর্যায়ে ভেষজ ব্যবহারের কিছু টিপস, যা আমাদের একান্ত নিজস্ব। বৃক্ষগুরু অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা এই বইয়ের ভূমিকায় যে অসাধারণ কথাগুলো বলেছেন তা উদ্ভিদপ্রেমী জায়েদ ফরিদের প্রাপ্য এবং তার লেখা সম্বন্ধে যথার্থ। কেননা দীর্ঘকাল তিনি একজন সায়েন্স কমিউনিকেটর হিসেবে কাজ করে আসছেন যে কাজ বৈজ্ঞানিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক মেলবন্ধন সৃষ্টি করছে। এই বই পাঠের পর নিশ্চিতভাবে বদলে যাবে উদ্ভিদ জগতের প্রতি নিসর্গী, বৃক্ষপ্রেমী, গবেষণাকারী ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। বইটির একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এর প্রতিটি প্রবন্ধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছবির ব্যবহার যা এর আগে এ দেশের উদ্ভিদ সংক্রান্ত বইয়ে নজরে পড়েনি। ছবিসূত্র উল্লেখের জন্যে লেখকের সততাকে সাধুবাদ জানাই। এর আধাবিমূর্ত আকর্ষণীয় প্রচ্ছদটি নিজস্ব স্টাইলে তৈরি করেছেন চারুকলা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক গুপু ত্রিবেদী। প্রায় ২০০ পৃষ্ঠার ২০০ রঙিন চিত্র সংবলিত বইটি আকারে রয়াল সাইজ, সাধারণ সাড়ে ৫-সাড়ে ৮ সাইজ থেকে বড়, হয়ত চিত্র সমাবেশের সুবিধার্থেই এটা করা হয়েছে। বইটির মূল্য ৭০০ টাকা, যা বলতেই হচ্ছে, ছাত্র বা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। সাদা-কালোতে বইটির সুলভ সংস্করণ প্রকাশ করার প্রয়োজন অনুভব করছি। বইটির প্রচার ত্বরান্বিত হোক, দেশ-দশের কাজে লাগুক, এই কামনা করি। বেণুবর্ণা অধিকারী সোনালী সিঁড়ি র.আমিন-এর ‘সোনালী সিঁড়ি’ উপন্যাসটি মূলত ধর্ম-দর্শন-রাজনীতি ইত্যাদির সমন্বয়ে রচিত এক নতুন দিকনির্দেশনা। উপন্যাসটির অন্যতম চরিত্রÑ ইবনে আলফ্রেড শ্রমিক আন্দোলনে শ্রেণী সংগ্রামকে শাণিত করার লক্ষ্যে আনলেন এক নবতর দর্শন ‘ভারসাম্য তত্ত্ব’। অন্যদিকে, সত্যের সন্ধানে সচেষ্ট- আল ইমরান ধর্মীয় অপসংস্কৃতির বুকে কুঠারাঘাত করে, তার ধর্মীয় দর্র্শনের মূল্যবোধের দ্বার উন্মোচন করলেন। এদের সঙ্গে আবার যুক্ত হলেন, ছন্দ ও ভাবের এক নবীন কাব্যিক প্রতিবিম্ব- বিকাশ মাহমুদ। লেখকের কল্পনার ‘সোনালি সিঁড়ি’, ত্রি-মাত্রিক এই চরিত্রগুলোর স্বপ্নের সোনালী সিঁড়ি- যেখানে ইচ্ছে পূরণের প্রতিফলন ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায়, উল্লেখিত ত্রি-মাত্রিক শক্তির সম্মিলিত রূপ, রাজাকার তথা এজিদের বংশধর-সাম্রাজ্যবাদী ‘আনন্দ চক্র’-এর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ল। ‘সোনালী সিঁড়ি’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছিল শিরিন পাবলিকেসন্স ২০১৬-এর বইমেলায়, প্রচ্ছদ এঁকেছেন সেতু মির্জা। হারুন-অর-রশীদ
×