ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গলাচিপা ত্রাণ দফতরে টেন্ডারে ঘাপলা

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

গলাচিপা ত্রাণ দফতরে টেন্ডারে ঘাপলা

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা ত্রাণ দফতরে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ সেতু নির্মাণের টেন্ডারে চরম অনিয়ম ও ব্যাপক ঘাপলার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি সেতু নির্মাণের টেন্ডার কাগজপত্রে লটারি দেখানো হলেও বাস্তবে ‘গুছ’ করে নেয়া হয়েছে। অপর চারটি সেতুর টেন্ডার ‘চাপা’ দিয়ে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কয়েক ঠিকাদারকে টেন্ডারে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, চাপা ও গুছ টেন্ডারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরুতেই ৫০ লাখ টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ অবশ্য টেন্ডার স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্নের দাবি করেছেন। জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর গত ২ মার্চ ‘গ্রামীণ রাস্তায় কম-বেশি ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু/কালভার্ট নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৪শ’ ৮৯ উপজেলা ও তেজগাঁও উন্নয়ন সার্কেলে কেন্দ্রীয়ভাবে সেতু নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করে। তবে ওই টেন্ডার নোটিসে কোন উপজেলায় কতটি সেতু নির্মাণ করা হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি। কয়েক ঠিকাদারের অভিযোগ, টেন্ডারে উপজেলাভিত্তিক সেতুর সংখ্যা উল্লেখ না করায় দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়। ওই টেন্ডারের আওতায় গলাচিপা উপজেলায় প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ সেতু নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ‘অজ্ঞাত কারণে’ এক চিঠিতে ১০ সেতুর নক্সাসহ প্রাক্কলন অনুমোদন না করে ১৫ মার্চ এক চিঠিতে ৬টি এবং ২৪ মার্চ অপর এক চিঠিতে ৪ সেতু নির্মাণের উল্লেখ করে। একই দিনে টেন্ডার আহ্বান করা হলেও পৃথক চিঠিতে আলাদাভাবে সেতুর সংখ্যা উল্লেখ করায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় বরাদ্দের চারটি সেতুর টেন্ডার ‘চাপা’ দেয়ার সুযোগ গ্রহণ করে। প্রথম ৬টি সেতু নির্মাণে যেখানে প্রতিটি সেতুর বিপরীতে গড়ে ৩৭ জন হিসেবে মোট ২২২ ঠিকাদার অংশগ্রহণ করে, সেখানে পরের চারটি সেতুর টেন্ডারে মাত্র ৬-৭ ঠিকাদার অংশ নেয়। এর মধ্যে স্থানীয় ঠিকাদার মাত্র একজন। বাকিরা সকলেই পটুয়াখালী, বরিশাল ও বরগুনার। ঠিকাদারদের অভিযোগ পরের চারটি সেতু কর্তৃপক্ষ নিজেরাই বেনামে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। অপর ৬ সেতুর টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়েও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কাগজপত্রে টেন্ডার লটারি পদ্ধতি দেখানো হলেও বাস্তবে তা হয়নি। বরং প্রতিটি সেতু বরাদ্দ অর্থের শতকরা ১৭ ভাগের বিনিময়ে কয়েক নির্দিষ্ট ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার অভিযোগ করেন, তিনি নগদ ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দের একটি সেতু কিনে নিয়েছেন। এভাবে ৬টি সেতুর নির্মাণ কাজ রীতিমতো নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শতকরা পাঁচ ভাগ নিম্ন দরে গত ২১ এপ্রিল সেতুর নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। টেন্ডারে ব্যাপক ঘাপলা ও অনিয়ম প্রসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আমিরুল ইসলাম জানান, টেন্ডারে কোন ধরনের অনিয়ম- দুর্নীতি হয়নি। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সবকিছু হয়েছে। টাকা লেনদেনের অভিযোগও মিথ্যা।
×