ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে রেল কোয়ার্টার চুক্তিনামায় ভাড়া

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

চট্টগ্রামে রেল কোয়ার্টার চুক্তিনামায় ভাড়া

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে রেলের কোয়ার্টার বরাদ্দ নিয়ে ভাড়া বাণিজ্যের বিষয়টি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু লিখিত চুক্তিনামায় ভাড়া বাণিজ্য গড়ে তোলা অস্বাভাবিক। চুক্তিনামায় ভাড়া বাণিজ্যের বিষয়টি চাকরি বিধিমালা ও সরকারী বাসা বরাদ্দ প্রক্রিয়াকে কলুষিত করেছে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা। এদিকে, এক রেল কর্মচারী আরেক রেল কর্মচারীর কাছে লিখিত চুক্তিনামায় ভাড়া দেয়ার ঘটনার তথ্য ফাঁসের পর আতঙ্কে রয়েছে বরাদ্দ গ্রহীতা। কোয়ার্টারটি বরাদ্দ পাওয়ার দিন থেকেই দীর্ঘ প্রায় দশ বছর ভাড়া বাণিজ্য চালাচ্ছে এ কর্মচারী। সম্প্রতি ভাড়া বৃদ্ধির লিখিত নোটিস দিয়ে ওই রেল কর্মচারীকে বের করার পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি বরাদ্দ গ্রহীতা মিথ্যা তথ্য দিয়ে থানায় অভিযোগ করার মতো ঘটনায় পুলিশী হস্তক্ষেপ মানহানিকর বলে দাবি করেছেন ভাড়াটিয়া। এদিকে, পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ও বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা (পাহাড়তলী) বরাদ্দ গ্রহীতা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অচিরেই প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। অথচ এ কর্মচারী পাহাড়তলীর রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি এলাকায় জায়গা দখল করে বিশাল ঘর নির্মাণ করার ঘটনাও ঘটেছে। জানা গেছে, পাহাড়তলী রেলওয়ে হাসপাতালের কর্মচারী আমির বক্স ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত পাহাড়তলীর ইঞ্জিনিয়ারিং কলোনির এম/৫৮১/এ কোয়ার্টারটিতে বসবাস করেছেন। আমির বক্সের মৃত্যুর পর তার ছেলে দীন ইসলাম ২০০৫ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩৬ বছর পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। দীন ইসলামের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী আয়েশা বেগম পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানার ডিসপেনসারিতে কর্মরত রবীন্দ্র চন্দ্র দাশের নামে বাসাটি বরাদ্দ দিতে সহায়তা করেন। সে সুবাদে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় দশ বছর এ বাসায় রবীন্দ্র চন্দ্রের ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন। ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর লিখিত চুক্তিনামায় রবীন্দ্র চন্দ্র অগ্রিম ঘর ভাড়া হিসেবে ৩৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি ঘর ভাড়া আরও এক হাজার টাকা বৃদ্ধির লিখিত নোটিস দিয়েছেন। উল্লেখ্য, দীন ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম পাহাড়তলীর রেলওয়ে কারখানায় খালাসী পদে চাকরি পেয়েছেন ২০১৪ সালের শেষের দিকে। তৎকালীন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রয়াত কামরুজ্জামানের হস্তক্ষেপে কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন ছাড়াই বাসাটি হস্তান্তর করা হয়েছিল। এমনকি দীন ইসলামের কোন ছেলে রেলওয়েতে চাকরি পেলে ওই বাসা ছেড়ে দেয়ার কথা ছিল রবীন্দ্র চন্দ্রের। এ বিষয়টি গত ১১ জানুয়ারির নোটিসেও রবীন্দ্র চন্দ্র উল্লেখ করেছেন। পাহাড়তলী থানা সূত্রে জানা গেছে, রবীন্দ্র চন্দ্র গত ২২ মার্চ কারখানা কর্মচারী সাইফুলের মাসহ পরিবারের সকলকে এই কোয়ার্টার থেকে বের করার জন্য থানায় মিথ্যা একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ অভিযোগে সাইফুলের মা আয়েশা বেগম, সাইফুল ও তার ভাই শাহীনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এমনকি রবীন্দ্র চন্দ্র ওই কোয়ার্টারের যে কক্ষে বসবাস করতেন গত ১৫ মার্চ ওই কক্ষটি দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পাহাড়তলী থানার এসআই সাখাওয়াতকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি তদন্ত না করে উল্টো বৈঠক বসিয়ে বাসাটি সাইফুলের নামে বরাদ্দ দিতে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য দরকষাকষি শুরু করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, থানায় মিথ্যা অভিযোগ করার কারণে সাইফুল বাসাটি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য মহাব্যবস্থাপক বরাবর আবেদন করেছেন গত ২৩ মার্চ। বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তার (পাহাড়তলী) দফতরে। এ বিষয়ে বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা (পাহাড়তলী) জানান, অবৈধভাবে ও চুক্তিনামায় বাসাটি ভাড়া দেয়ার বিষয় প্রমাণ হলে রবীন্দ্র চন্দ্রকে শোকজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বাসা ভাড়া নিয়ে থানায় অভিযোগ করার বিষয়টিও আইনসম্মত নয়। এ বিষয়ে প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা জানান, রবীন্দ্র চন্দ্রের বরাদ্দকৃত বাসা ভাড়া দেয়ার কোন নিয়ম নেই। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। এমনকি উভয়পক্ষকে বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তার দফতরে ডেকে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
×