ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ

কীর্তনখোলা ভরাট

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

কীর্তনখোলা ভরাট

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ কীর্তনখোলা নদীর তীর থেকে ৪০-৪৫ ফুট ভেতরে নদী ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে শহর রক্ষাবাঁধ। ফলে নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকার বধ্যভূমি থেকে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত প্রায় কিলোমিটার এলাকার নদীর প্রশস্ততা কমে গেছে। সূত্রমতে, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই কীর্তনখোলা নদী ভরাট করে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদফতর কার্যালায় সূত্রে জানা গেছে, ছাড়পত্র ছাড়াই শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হলে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্তসহ হুমকির মুখে পড়বে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বধ্যভূমি এলাকার কীর্তনখোলা নদীর ভেতরে ৪০ থেকে ৪৫ ফুট ভরাট করে বাঁধের নির্মাণ কাজ করছেন শ্রমিকরা। বধ্যভূমি এলাকার সাগরদী খাল থেকে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত এক কিলোমিটার নদী এলাকায় এ কাজ চলছে। বরিশাল নদী-খাল ও জলাশয় রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, নদী রক্ষা করেই বাঁধ নির্মাণ করার সুযোগ ছিল। তিনি আরও বলেন, নদী, খাল বা যে কোন জলাশয় ভরাট করে উন্নয়ন কাজ না করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনা অমান্য করে সিটি কর্পোরেশন কীর্তনখোলা নদী ভরাট করে নগর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করছে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার বলেন, শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে সিটি কর্পোরেশন নদীর মধ্যে বাঁধ নির্মাণ করছে। ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া হুমকির মুখে পড়বে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। এ ব্যাপারে গত ১১ এপ্রিল সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দেয়া সত্ত্বেও এখনও ওই চিঠির কোন উত্তর দেয়া হয়নি। পরিবেশ অধিদফতর বরিশাল কার্যালয়ের পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস বলেন, পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি কীর্তনখোলা নদীর পাড় বরাবর ৪০ থেকে ৪৫ ফুট নদীর ভেতরে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরকে না জানিয়ে ছাড়পত্রহীন এই কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে চিঠি দেয়া সত্ত্বে¡ও তার কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যার ২৪ কোটি টাকা বাঁধ নির্মাণে এবং বাকি ছয় কোটি টাকা ব্যয় হবে সড়ক নির্মাণে। কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র একেএম শহীদুল্লাহ বলেন, সাগরদী খালের পশ্চিম পাড়ে শহররক্ষা বাঁধ নদীর মধ্যে দিয়ে নেয়া হয়েছে। এটি কীভাবে করা হচ্ছে, তা আমাকে জানানো হয়নি। তিনি আরও জানান, কাজটি পেয়েছে নিয়াজ ট্রেডার্স। শ্রমিকরা জানান, আদতে বাঁধ নির্মাণের কাজ করছেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র মোশাররফ আলী খান। এ ব্যাপারে মোশাররফ আলী খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ওই কাজের ঠিকাদার এ কথাটা সঠিক নয়। তবে কাউন্সিলর হিসেবে আমি তো তদারকি করতেই পারি। তাছাড়া সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীরা যেভাবে এ্যালাইনমেন্ট দেখিয়ে দিয়েছেন, সে অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোতালেব হাওলাদার বলেন, নদী ভরাট করা হচ্ছে, কথাটা সঠিক নয়। ওই এলাকায় চরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কারণে নদীর প্রবাহে কোন সমস্যা হবে না।
×