ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কর্মক্ষম জনশক্তি

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

কর্মক্ষম জনশক্তি

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশই কর্মক্ষম শীর্ষক সংবাদটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আরও আশার কথা, দিনে দিনে বাড়ছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা পৌঁছাবে ৭০ শতাংশে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার এহেন অগ্রগতির খবর প্রকাশিত হয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) প্রতিবেদনে। সংস্থাটি মঙ্গলবার এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে এই অঞ্চলভুক্ত ৪৫টি দেশের জনসংখ্যাভিত্তিক তথ্য, পরিবর্তনের ধরন ও করণীয় বিষয়েও অল্পবিস্তর আলোকপাত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে জনসংখ্যার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগানোর মতো উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভিন্নধর্মী কাজ, কারিগরি দক্ষতা, সৃজনশীল জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ বাংলাদেশের নেই। সত্য বটে, এক অমিত ও অসীম সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদান ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জন করেছিল লাল-সবুজের অমলিন পতাকা। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র তথা সামাজিক ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে রচিত হয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের জন্য যে সময় ও শক্তি প্রয়োজন, স্বাধীনতাপরবর্তী সরকার তা পায়নি। পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক হত্যাকা-ের পর সামরিক শাসনের ধারায় দেশের উন্নয়ন হয় বাধাগ্রস্ত এবং শ্লথগতিসম্পন্ন। জাতীয় নীতিনির্ধারণেও কিছু বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়। এ অবস্থা থেকে দেশকে টেনে তোলা খুব একটা সহজসাধ্য ছিল না। বর্তমান সরকার ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সর্বাগ্রে মনোনিবেশ করে খাদ্য উৎপাদনে। পরিকল্পিত কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের সুবাদে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতোমধ্যে ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে বাংলাদেশ আগামীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে যাচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্পে দেশের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। আয়ও অসামান্য। এ খাতে কয়েক লাখ নারীর কর্মসৃষ্টি হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বিশ্বে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে ৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে ধাবমান বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ শতাংশ অতিক্রম করা। সেটা অতিক্রম করতে হলে ইউএনডিপি উল্লিখিত ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। অদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর। বাড়াতে হবে শিক্ষার মান। জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের দিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ওপর। ভারি ও বহুমুখী শিল্পায়ন করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংক-বীমাসহ কারিগরি উৎকর্ষ অর্জনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, মহাকাশ গবেষণা পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে দেশেই। একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি বর্তমান সময়ের দাবি। পরিহার করতে হবে ধর্মীয় কূপম-ূকতা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন এবং তা অব্যাহত রাখতে হলে সুশাসনসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে এই দিকটির দিকেও নজর দিতে হবে সরকারকে।
×