ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি

মোবাইলে প্রতিদিন লেনদেন ৬০৮ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

মোবাইলে প্রতিদিন লেনদেন ৬০৮ কোটি টাকা

রহিম শেখ ॥ প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে বা অতিদ্রুত শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং কেবল টাকা আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং অনেক নতুন নতুন সেবা যুক্ত হয়েছে এতে। প্রতিমাসেই বাড়ছে বিভিন্ন সেবা বিল দেয়ার পরিমাণ। বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। মার্চ শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০৮ কোটি টাকা। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৫৫২ কোটি টাকা। মূলত কম সময়ে টাকা পাঠানোর সুযোগের ফলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার দ্রুত প্রসার হচ্ছে। লেনদেন বাড়লেও গত কয়েক মাস ধরে চালু (এ্যাকটিভ) এ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমছিল। সেই ধারা থেকে বেরিয়ে এসে মার্চে সচল এ্যাকাউন্ট বেড়ে এক কোটি ৪২ লাখে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী শুধু মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ মাধ্যমে লেনদেন করবে। তবে বেশিরভাগ এজেন্ট এ নিয়ম না মেনে নামে-বেনামে এ্যাকাউন্ট খুলে টাকা পাঠায়। এর ফলে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে ঘুষ-দুর্নীতিসহ অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। এর পর এ ক্ষেত্রে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে কয়েক লাখ এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় বিভিন্ন এজেন্ট। বাতিল করা হয় অনেকের এজেন্টশিপ। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত মার্চ পর্যন্ত মোট ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তবে এসব এ্যাকাউন্টের মধ্যে চালু রয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ। আগের বছরের একই মাস শেষে দুই কোটি ৫২ লাখ ৩৬ হাজার এ্যাকাউন্টের মধ্যে চালু ছিল এক কোটি ১০ লাখ ৫৩ হাজার। আর ২০১৩ সালে এক কোটি ৩১ লাখ এ্যাকাউন্টের মধ্যে চালু ছিল এক কোটির কম এ্যাকাউন্ট। কোন এ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোন ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-এ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। অবশ্য বড় কোন অনিয়ম না পাওয়া গেলে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। ব্যাংকগুলো সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং করতে পারে না বিধায় এ কার্যক্রমের জন্য এজেন্ট নিয়োগ করে। নির্ধারিত কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এজেন্ট নিয়োগ দেয়। মার্চ মাস শেষে ব্যাংকগুলোর মনোনীত এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৯১২। এর আগের বছরে এজেন্টর সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ৪১ হাজার। ২০১৩ সাল শেষে ছিল এক লাখ ৮৯ হাজার। মূলত নানা অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে অনেকের এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে। অনেক দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালিত হলেও বাংলাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ব্যাংকগুলো মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সহায়তায় এজেন্টের মাধ্যমে এ সেবা দেয়। সেবার বিপরীতে পাওয়া কমিশন ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর ও এজেন্ট এই তিন স্তরে ভাগ হওয়ার ফলে এখানকার চার্জ তুলনামূলক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগের মাসের তুলনায় মার্চে দৈনিক লেনদেনের সংখ্যা ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়ে ৪০ লাখ ৪৪ হাজার ছাড়িয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৪ লাখ ৮২ হাজার। আগের মাসের তুলনায় গত জানুয়ারিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছে দেয়ার হার ২৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। গত মাসে ক্যাশ ইন তথা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এ্যাকাউন্টে ৭ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা ঢোকানো হয়েছে। এ সময়ে ক্যাশ আউট তথা তুলে নেয়া হয়েছে ৭ হাজার ৫০ কোটি টাকা। আগের মাসের তুলনায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে পরিশোধ ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৮১২ কোটি টাকা হয়েছে। অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৫৭ কোটি টাকার বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। আগের মাসের তুলনায় যা ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ কম। এ সময় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ প্রায় ২৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে ১৮২ কোটি ৭০ লাখ টাকা হয়েছে। অন্যান্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ২৯৯ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে এখন সঠিক গ্রাহক ও লেনদেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর লেনদেন কিছুটা কমলেও এটা স্বাভাবিক রয়েছে, আগের মাসে ঈদের কারণে লেনদেন একটু বেড়েছিল। এ প্রসঙ্গে বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের কারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা ও লেনদেন যেমন বেড়েছে। তিনি বলেন, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস চালু হওয়ার ফলে ই-কমার্সসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বেড়েছে। অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পন্ন করছে, তেমনি অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ থেকে শুরু করে কর্মীদের বেতনও দিচ্ছে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে। প্রসঙ্গত, সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ সেবা দিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করলেও এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। বর্তমানে ১৮টি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা থাকলেও মোট লেনদেনের উল্লেখযোগ্য অংশ হয় বিকাশের মাধ্যমে।
×