ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে!

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুত প্রকল্প রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে!

জোবাইর চৌধুরী, বাঁশখালী থেকে ॥ দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ চীনের দুটি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গ-ামারায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ নিয়ে চলছে রাজনীতির খেলা। প্রথম থেকেই সকল দলের নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের সমন্বয় করে এবং তাদের অনুপ্রেরণায় এস আলম গ্রুপ বাঁশখালীতে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সকল প্রক্রিয়া শেষ করেছে। প্রকল্পের কাজ শুরুর মুহূর্তেই রাজনীতির নোংরা খেলা চলছে। রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছে বাঁশখালীর উন্নয়ন। বেসরকারী পর্যায়ের দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্পটির কাজের শুরুতেই বাদ সেধেছে বিএনপি নেতা লেয়াকত ও তার দোসররা। তার সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন সরকারী দলের কতিপয় নেতা। সরকারী দলের কতিপয় নেতার ইন্ধনে আবার বিএনপি নেতা লেয়াকত আলীর ‘বসতভিটা রক্ষা কমিটি’ ফের সমাবেশ করে স্থানীয় জনগণকে উস্কানি দিচ্ছে। এদিকে সরকারের সহযোগিতায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাঁশখালীর সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লাগত বলে মতামত ব্যক্ত করে স্থানীয় সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গরা বলেন, কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থান্বেষী খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশের উন্নয়ন বিরোধী সংগঠনগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজ স্বার্থ চরিতার্থের লক্ষ্যে এই প্রকল্প নির্মাণে বাধা দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রকল্পের কাজে হাত দিলে সেই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়বে বলেও তারা জানান। গ-ামারার কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র বর্তমানে রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছে। তারা আরও বলেন, এই বৃহৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া কখনই সম্ভব নয়। তাই তারা কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। গ-ামারায় সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় ৩ মামলাসহ একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বিএনপি নেতা লেয়াকত প্রকাশ্যে এলাকায় সমাবেশ করায় স্থানীয় সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে আলোচনার ঝড় চলছে। তারা পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গরা প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি কিভাবে প্রকাশ্য এলাকায় সমাবেশ করে সাধারণ জনগণের মাঝে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে? এদিকে হঠাৎ করে এই বিদ্যুত প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কারী মোঃ নাছির উদ্দিন প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তার অব্যাহতির ঘোষণায় জমিদাতা ও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বুধবার (২৭ এপ্রিল) জমিদাতাগণ জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন আমরা এই প্রকল্প সমন্বয়কারীকে বিশ্বাস ও ভালবেসে কয়লা বিদ্যুত নির্মাণের জন্য পৈত্রিক জমি অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছি। সে যদি এই মুহূর্তে প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায় আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হব। তাছাড়া তারা আরও বলেন, জমি বিক্রির সময় এস আলম গ্রুপের সঙ্গে আমাদের মৌখিক চুক্তি ছিল সমন্বয়কারী মোঃ নাছির উদ্দিনকে আমাদের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে রাখবে। তাই আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত ভেবে এস আলম গ্রুপ তার অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করবেন না আশা রাখি। এই ব্যাপারে কয়লা বিদ্যুত প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কারী মোঃ নাছির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা ব্যবসায়ী। রাজনীতি বুঝি না। গ-ামারা বড়ঘোনাবাসীর আমন্ত্রণে সকলকে সমন্বয় করে বিগত ৩ বছর যাবত জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করেছি। জমি দাতাগণ আন্তরিকভাবে অর্থের বিনিময়ে তাদের জমিগুলো ন্যায্য মূল্যে এস আলম গ্রুপকে বিক্রি করেছে। এই প্রকল্পের কাজ শুরুতেই স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করছে। তাছাড়া তিনি আরও বলেন, আমি গ-ামারা বাসীর কোন ধরনের উপকার করতে পারিনি। তাই হয়ত স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিবর্গ আন্দোলন করছে। গ-ামারাবাসীর ভবিষ্যত উন্নয়ন চিন্তা করে আমি নিজ থেকে এই প্রকল্প হতে অব্যাহতি চেয়েছি। উল্লেখ্য, বাঁশখালীর গ-ামারা এলাকায় এস আলম গ্রুপ ও কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছিল। কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকায় সম্প্রতি ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জন নিহত ও পুলিশের ১৩ সদস্যসহ কমপক্ষে আহত হয়েছে ৬০ জন।
×