ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ হ্যাকিং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

রিজার্ভ হ্যাকিং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিপুল অর্থ পাচারের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনা দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে কোন প্রভাব ফেলবে না। মুদ্রানীতি বাধাগ্রস্ত হওয়ারও কোন আশঙ্কা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনায় দেশের অর্থনীতিতে আপাতত ক্ষতি হলেও গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে ইতোমধ্যে কিয়দংশ অর্থ ফেরত পাওয়া গেছে। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাকি অর্থও ফেরত আনা যাবে বলে আশা করা যায়। বুধবার ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, হ্যাকিংয়ের ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে আরও বড় রকমের হ্যাকিং বন্ধ করা গেছে। একই সঙ্গে ফিলিপিন্স সরকারের সহযোগিতায় অর্থ ফেরত আনার তৎপরতার ফলে এ বিষয়ে সম্ভাব্য রিরূপ পরিস্থিতি ঠেকানো গেছে। তিনি জানান, এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য গঠিত কমিটি অন্তর্র্বর্তীকালীন একটি রিপোর্ট দিয়েছে। সে মোতাবেক নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ সকল তৎপরতার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনা দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে কোন প্রভাব ফেলবে না। সংসদ নেতা আরও জানান, মুদ্রানীতি গ্রহণের প্রাক্কালে জুন ২০১৬ এর শেষে যে পরিমাণ নিট বৈদেশিক সম্পদের (১ হাজার ৮৬৬ বিলিয়ন টাকা) লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে, তার তুলনায় মার্চ’ ২০১৬-এর শেষে প্রকৃত নিট বৈদেশিক সম্পদের পরিমাণ উক্ত রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের পরও দাঁড়িয়েছে অনেকে বেশি। অর্থাৎ ১ হাজার ৯৮১ বিলিয়ন টাকা। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনার ফলে মুদ্রানীতি বাধাগ্রস্ত হওয়ারও কোন আশঙ্কা নেই। কোন অফশোর ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দেয়া হয়নি ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন অফশোর ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে প্রবাসীদের জন্য তিনটি ব্যাংক খোলা হয়েছে। অনেক উন্নত দেশেই এমন অফশোর ব্যাংক রয়েছে। তিনি বলেন, অনেকে বিদেশেই টাকা রাখেন। দেশে আনেন না। আবার অনেকে দেশে থেকে বিদেশে টাকা নিয়ে গেছেন। এটা বেশি ঘটেছে ২০০৭ সালে জরুরী অবস্থার সময়। সে সময় ব্যবসায়ীদের ওপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। তারা দেশে টাকা রাখতে ভরসা পাচ্ছিলেন না, ওই সময় বিদেশে টাকা পাঠিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ৫ বছরে বিপুল অর্থ পাচারের ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা ওই সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, যা অনেক ধরা পড়েছে। ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। বর্তমান সরকার তাদের পাচারকৃত অর্থ কিছুটা ফেরত এনে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধ করা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য নাবিল আহমেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ রোধে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, সব ধরনের জঙ্গীবাদ, নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ও হুকুমদাতাদের আইনের আওতায় আনতে ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহকে নির্দেশ প্রদান করেছে। পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিকভাবে দেশী-বিদেশী নাগরিকগণ তাদের জীবন-যাপন ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকার ফলে দেশে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দৃঢ়তর হচ্ছে। নৌকা সোনার ধানে ভরে গেছে ॥ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইসলামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ভাঙ্গা নৌকা সেচে সেচেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলছিলেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সময়ই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। এরপরই শুরু হয় হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্র ও অবৈধ ক্ষমতা দখলের রাজনীতি। ’৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা জনগণের নয়, নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। নিজেরা অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। ২১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় পরই দেশ প্রকৃত অগ্রগতির পথে যাত্রা শুরু করে। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে সোনার ফসল ফলিয়েছি, দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। বর্তমানে সোনার ধানে নৌকা এখন ভরা। আমরা ভাঙ্গা নৌকা মেরামত করেছি। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশকে নিয়ে যারা ঠাট্টা-মশকরা করত, আজ তারাই বলতে বাধ্য হচ্ছেন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেল। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। তিনি বলেন, দেশের এই উন্নয়ন-অগ্রগতি কোন ম্যাজিক নয়, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, দেশের মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ, সততা, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতা নিয়ে কাজ করছি বলেই বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ এখন অপার সম্ভাবনার দেশ। সরকারী দলের একেএম শামীম ওসমানের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা এটাই আমার শক্তি। এই শক্তি নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। শোককে শক্তি করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেছি বলেই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে তাঁর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারিÑ এটাই আমাদের লক্ষ্য। উন্নয়নের অগ্রযাত্রার বহির্প্রকাশ একের পর এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ॥ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সুরক্ষা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দৃশ্যমান ভূমিকা রেখে গেছে। পূর্বের ধারাবাহিকতায় আমাদের সরকারের বর্তমান আমলেও উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি, যার বহির্প্রকাশ ঘটছে একের পর এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য ফরচুন ম্যাগাজিনে বিশ্বের শীর্ষ ৫০ নেতাদের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অন্তর্ভুক্ত, যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রভাবশালী সাময়িকী ‘ফরেন পলিসি’তেও তাঁকে (শেখ হাসিনা) বিশ্বের চিন্তাবিদদের একজন হিসেবে ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এসব অর্জন এদেশের সকল মানুষের। আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিনগুলোতেও এদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এদেশের উন্নয়নে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হব। আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতিগুলো আমার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আমরা যে সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, ফরচুন ম্যাগাজিনের এই স্বীকৃতি তার আরেকটি প্রমাণ। অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট সক্রিয় বলেই ভেজাল উৎপাদনকারী ২০ কোম্পানি ধরতে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে সেইগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে সব জায়গাতেই কিছু লোক আছে যারা অল্প সময়ে বেশি মুনাফা অর্জন করতে চায়। বাংলাদেশেও এসব কোম্পানিগুলো সে রকম। দেশে যে কোন কিছু উৎপাদন হলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা আন্তর্জাতিক মানসম্মত কি না, তা দেখে নেয়া হয়। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিএসটিআইকে আরও আধুনিক ও সক্রিয় করা হয়েছে।
×