ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হুমকির মুখে সম্মিলিত পরিষদের পরিচিতি সভা বাতিল

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

হুমকির মুখে সম্মিলিত পরিষদের পরিচিতি সভা বাতিল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এ এক নজিরবিহীন, আতঙ্কজনক এবং গুমোট পরিস্থিতি। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ইতিহাসে এতদিন যা ঘটেনি, এবার তাই ঘটেছে। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত বাফুফেতে কোন ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এ্যাডহক কমিটি দিয়ে চলতো বাফুফের কার্যক্রম। বাফুফেতে নির্বাচন ও ভোটপ্রথা আরম্ভ হয় ২০০৮ সাল থেকে। সেই ধারাবাহিতায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালেও। সেই অর্থে এটা হবে বাফুফের তৃতীয় নির্বাচন। আগের দুই নির্বাচনে অনেক কিছুই হয়েছে। যেমন অবাধ অর্থের ছড়াছড়ি, কাদা ছোড়াছুড়ি ...। এবারের নির্বাচনেও তার ব্যত্যয় হচ্ছে না। তবে আগের দুই নির্বাচনে যা ঘটেনি, এবার তাই ঘটেছে। নির্বাচনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। প্রতিদিনই নির্বাচন নিয়ে নানা চমক পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় চমকটা বোধকরি দেখা গেল বুধবার। সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে! ফলে বাফুফে নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি প্রার্থী কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। বুধবার বাফুফে ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটি জানান তিনি। বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে সালাউদ্দিনের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানের কথা ছিল। নিরাপত্তাহীনতার কারণে সেই অনুষ্ঠানটি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সম্মিলিত পরিষদ। জানা গেছে, এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কয়েকজন ডেলিগেটকেও। তারাও নাকি নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় অনুষ্ঠানস্থলে আসার জন্য অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আজকের সভা বাতিল করা হয়েছে শুধু নিরাপত্তাজনিত কারণে। আমি চাই না দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগঠকরা এ সভার উদ্দেশ্যে ঢাকায় এসে কোন ঝামেলায় পড়ুক। আমার মেয়াদকালে এই গত সাত- আট বছরে এমনটা হয়নি। কয়েকদিন আগেও আমিও এরকম কল পেয়েছি। আমাকে বলা হয়েছে, যেন একা ঘোরাফেরা না করি। যখন চট্টগ্রামে গেলাম (২৪ এপ্রিল) তখন বলা হলো, সাবধানে থাকতে। আজ আমাদের অনুষ্ঠান স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি, আমি বলবো এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। হোটেল কর্তৃপক্ষও আমার নিরাপত্তার ব্যাপারে শঙ্কিত। তাই তারা সেখানে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে চায়নি। বিভিন্ন মহল থেকে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে। তবে যে করেই হোক আমি নির্বাচনে অংশ নেব।’ কারা সালাউদ্দিনকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানেন না বলে জানেন। তবে ৩০ এপ্রিলের নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন এটাই তার সিদ্ধান্ত। আর এর জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য চান। সালাউদ্দিন আরও জানান, ফিফা ও এএফসি নিশ্চয়ই আমাদের এ বিষয়টি মনিটরিং করছে। সার্বিক পরিস্থিতি জানানো হবে নির্বাচন কমিশনকেও। উল্লেখ্য, আজ বাংলাদেশে আসছেন ফিফা-এএফসির বাফুফে নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। তারা যদি এসে দেখেন পরিস্থিতি গুরুতর, তখন কি হবে? এ প্রশ্নের জবাবে সম্মিলিত পরিষদের সদস্য পদপ্রার্থী হারুনুর রশীদ বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই ফিফা-এএফসি আমাদের নির্বাচনী পরিবেশের ওপর নজর রাখছে। তারা যদি মনে করে পরিস্থিতি নির্বাচনের অনুকূলে নয়, তখন তারা যে কোন সিদ্ধান্ত নেবে। সেটা হতে পারে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেয়া। এটা বাফুফের হাতে নেই। আর সরকারও এ বিষয়ে কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। কেননা হস্তক্ষেপ করলেই ফিফা নিষিদ্ধ করে দেবে বাফুফেকে। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে বাফুফের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসছেন ফিফা ও এএফসির কর্মকর্তারা। সকাল থেকেই বাফুফে ভবনে বিরাজ করছিল চাপা উত্তেজনা। বিশেষ করে দেশের নিরাপত্তা বিষয়ক একটি সংস্থার কাছে থেকে সালাউদ্দিন প্যানেলের সদস্যরা ফোন পাচ্ছেনÑ এমন কথা শোনা যাচ্ছিল। প্যানেলের সদস্যদের মুখেও দেখা গেছে আতঙ্কের চিহ্ন। সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘ফিফা ও এএফসির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রতিনিধি ঢাকায় আসবেন। তার আগমনের আগে এ ধরনের পরিস্থিতি কাম্য নয়। এএফসি থেকে বাফুফেতে ফোন করে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে এখানে কোন সমস্যা নেই বলেই জানানো হয়েছে। আমি মনে করি না এখন পর্যন্ত ৩০ এপ্রিলের নির্বাচন নিয়ে কোন সমস্যা আছে। তবে এ পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে এবং ভোটার ডেলিগটরা যদি হুমকির মুখে থাকেন তবে কি অবস্থা দাঁড়ায় তা বলা যাচ্ছে না।’
×