ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এখন সময় প্রতিটি ইঞ্চিতে রুখে দাঁড়ানো -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

এখন সময় প্রতিটি ইঞ্চিতে রুখে দাঁড়ানো -স্বদেশ রায়

আবার গুপ্তহত্যা শুরু হয়েছে। কয়েক মাস আগেও এই গুপ্তহত্যা শুরু হয়েছিল। তখন টার্গেট ছিল শুধু বিদেশী নাগরিক। এখন টার্গেট বেশ বিস্তৃত বলে মনে হচ্ছে। অনেকে ধারণা করছেন, নিজামী ও মীর কাশেম আলী অধ্যায় শেষ হলে এগুলো কমে যাবে। কিন্তু এবারের লক্ষণটা একটু ভিন্ন। নিজামী ও মীর কাশেম আলী অবশ্যই ফ্যাক্টর। এর সঙ্গে আরও বড় বিষয় যোগ হয়েছে, জয় অপহরণ চেষ্টার চক্রান্ত উন্মোচন। চক্রান্তকারীরা সাধারণ মানুষের ধারণার বাইরের। গত সপ্তাহের লেখায়ও লিখেছি বঙ্গবন্ধু হত্যায় এক শ্রেণীর এলিট জড়িত ছিল কিন্তু জয় অপহরণ চেষ্টার এই চক্রান্তে যারা জড়িত এবং স্বীকার করছেন তাদের জড়িত থাকার কথা- এ তো কল্পনারও অতীত। মানুষ জীবনে বার বার বলে এবং বার বার দেখে, কল্পনা থেকে বাস্তব আরও বেশি ভয়ঙ্কর বা সুন্দর হয়, তারপরেও মানুষ বিশ্বাস করে কল্পনা অনেক বড়। এখানেও দেখা গেল বাস্তবই কল্পনার থেকে বড়। তাই জয় হত্যা চেষ্টার চক্রান্তে যাদেরকে দেখছি- এর পরে কেবল বলা যায়, শেখ হাসিনাকে আর কত বড় সাগর পাড়ি দিতে হবে! দেশের মানুষেরও এখন নিশ্চয়ই উপলব্ধি করার সময় দেশের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে কোন্ পর্যায়ের মানুষেরা, কী ধরনের ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রে নেমে গেছেন। জয় অপহরণ চেষ্টার চক্রান্তে হাত দেয়ার অর্থই একটি সাপের গলা চেপে ধরা। এ ধরনের সাপের যখন গলা চেপে ধরা হয় তখন ওই সাপ কিন্তু লেজ দিয়ে চেপে ধরা হাতটাকে দুর্বল করার চেষ্টা করে। বর্তমানে যে গুপ্তহত্যা চলছে, এগুলো কিন্তু এর বাইরে নয়। তবে এই চক্রান্ত পুরোপুরি উদ্ঘাটন, ষড়যন্ত্রকারীদের সকলকে বিচারের আওতায় আনা, মীর কাশেম আলী ও নিজামী অধ্যায় শেষ হওয়ার পরেও যে এগুলো বন্ধ হবে তা কিন্তু নয়। কারণ, এখন শেখ হাসিনার সরকারকে থামানোর জন্য একটিই উপায় আছে তাহলো- আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো। অর্থনৈতিকভাবে কোন কিছু করে শেখ হাসিনাকে তারা থামাতে পারবে না। একজন বিশ্বখ্যাত বাঙালীর মাধ্যমে তারা বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে অনেক চেষ্টা করেছিল। বিশ্বব্যাংকও অনেকটা তাদের সীমারেখার বাইরে গিয়ে বাংলাদেশকে শুধু অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করে। যে ভুল মনে হয় বিশ্বব্যাংক এখন বুঝতে পেরে বাংলাদেশের নতুন মেগা প্রজেক্টগুলোতে যোগ হতে চাচ্ছে। অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে এশিয়ায় শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্বের অবস্থান বর্তমানে যে উচ্চতায় সেখানে পশ্চিমাদের হাত দিতে হলেও অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হবে। এর পরে রয়েছে সময়ের প্রয়োজন। সত্যি অর্থে, হিসাব করলে এ মুহূর্তে শেখ হাসিনাই সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সব থেকে ‘যোগ্য ও প্রয়োজনীয় সময়ের সন্তান’। এ কারণে বাংলাদেশের ওই এক শ্রেণীর এলিট, একজন বিখ্যাত লেখকের ভাষায় এরা নাকি শহরের এলিট আর আওয়ামী লীগ গ্রামের এলিট- জানি না, বাংলাদেশে শহরের বয়স কত? যাহোক, ওই এক শ্রেণীর তথাকথিত শহরের এলিট যারা বঙ্গবন্ধু মারা গেলে ঢাকা ক্লাবে বসে হুইস্কি উৎসব করে বলেছিল- ‘চাষাটা মরেছে’। ওদের বাপ-দাদারা কী করতেন, সে খবর নেয়ার মতো রুচি কারও আছে বলে মনে করি না। তাই এখনও যদি শোনা যায়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে শহরের একশ্রেণীর এলিটের সংঘাত, আর তার স্বরূপ যখন জয় অপহরণ চেষ্টায় দেখা যায় তখন বুঝতে হবে- এই শ্রেণী অনেক খেলাধুলা করবে। তারা সব থেকে বেশি চেষ্টা করবে পশ্চিমা বিশ্বকে নিয়ে, পশ্চিমা বিশ্বের সামনে শেখ হাসিনার সরকারকে ভিন্নভাবে চিহ্নিত করতে। তারা যে কিছুটা সফলও হয়েছে তাও কিন্তু সত্য। কারণ, যে পশ্চিমা বিশ্ব এখন চল্লিশের দশকের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে তারা আমাদের ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। তারপরেও পশ্চিমা বিশ্ব শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে খুব বেশি দূর যেতে পারবে না- কারণ ওই প্রথমে উল্লেখ করেছি, শেখ হাসিনা এখন সব থেকে যোগ্য ‘সময়ের প্রয়োজনীয় সন্তান’। বাংলাদেশের এই চক্রান্তকারীরা এ বিষয়টি আমাদের থেকে অনেক বেশি বোঝে। তাই তারা প্রথম থেকেই কখনই শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেনি। তারা সব সময়ই সহিংস পথ নিয়েছে। বাংলাদেশকে একটি রক্তাক্ত বাংলাদেশ তৈরি করার চেষ্টা করে চলেছে। তারা বোঝাতে চাচ্ছে শেখ হাসিনা মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশটিকে শান্ত রাখতে পারবেন না। শেখ হাসিনার হাতে এ দেশ থাকলে আর দশটি মুসলিম দেশের মতো হবে। তাই পশ্চিমা বিশ্বের উচিত হবে অন্য পাঁচটি মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করা ও তাদের মতো এলিটদের দিয়ে একটি সরকার গঠন করা। তাদের এই লাভের জন্যই কিন্তু তারা এবং জঙ্গীরা এক হয়ে গেছে। তারা মানুষ পোড়ানো থেকে গুপ্তহত্যা সব কিছুকেই সমর্থন করছে শুধু নয়, সব ধরনের সহযোগিতাও করছে। বাংলাদেশকে এই রক্তাক্ত করার চক্রান্ত রুখেই এগোতে হবে। এর বিকল্প কোন পথ নেই। গত কয়েকদিন যাবৎ নানান ধরনের সোস্যাল ফোরামে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক তরুণ, যুবা বা বয়সীকে দেখছি- দেশে যে গুপ্তহত্যা চলছে এ জন্য সরকারকে দায়ী করছেন। তারা নানান ভাষায় সরকারকে ব্যঙ্গ করছেন। অনেকে সুলতানা কামালের ভাষায় কথা বলছেন। সুলতানা কামাল অনেক বড় মানুষের মেয়ে কিন্তু বাস্তবে তাকে কনফিউসড পার্সন মনে হয়। এঁদের চিন্তা মাথায় নিলে দেশকে রক্ষা করা যাবে না। এদের চিন্তা মাথায় নিলে বাস্তবে কী হবে সেটা আহমদ ছফা ভাই বেঁচে থাকলে লিখতে পারতেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির এখন কনফিউসড হওয়ার সময় নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোন মানুষ যদি এখন কনফিউসড হয়, তারা ইমরান এইচ সরকারের মতো অবস্থান নেয় তাহলে কিন্তু সেটা দেশের জন্য ক্ষতিকর। বরং তারা যখন দেশকে রক্তাক্ত করতে চাচ্ছে তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে রাস্তায়, পাড়ায়, মহল্লায়- প্রতিটি ইঞ্চিতে সুসংগঠিত হওয়ার সময়। তারা যে এ পথে এগোচ্ছে তা শেখ হাসিনার অজানা এমনটি ভাবলে ভুল হবে। বরং শেখ হাসিনা অনেক আগেই হুঁশিয়ার করেছেন। প্রায় এক মাস আগে যখন ঢাকা মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলো, কমিটির সকল সদস্য কর্নেল ফারুক খান ও ড. রাজ্জাকের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে দেখা করলেন, ওই তৃণমূল নেতাদের কিন্তু শেখ হাসিনা শুধু সংগঠন গড়ে তুলতে বলেননি। তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হোন। এলাকায় জঙ্গী খুঁজে বের করুন। তাদেরকে পুলিশে দিন। শেখ হাসিনা সেদিন তাঁর ভাষণে অনেক কথার ভেতর এ কথা বলেছিলেন। এখন মনে হয় নির্দেশ দেয়ার সময় এসে গেছে, রাজধানীর প্রতিটি পাড়া, মহল্লায় আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলের নেতৃত্বে নাগরিক সমাজকে নিয়ে জঙ্গীবিরোধী কমিটি গড়ে তোলা। কারণ, শুধু পুলিশের পক্ষে কখনই সম্ভব নয় প্রতিটি মানুষকে পাহারা দেয়ার। তাই এলাকাভিত্তিক এই কমিটি গঠন হলে এবং পুলিশ, র‌্যাব তাদেরকে সহায়তা করলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। আর এ কমিটি শুধু রাজধানীতে নয়, প্রতিটি শহরে গড়ে তুলতে হবে। সে নির্দেশ আওয়ামী লীগ থেকে, চৌদ্দ দল থেকে যথা প্রক্রিয়ায় দিতে হবে। তাছাড়া ইতোমধ্যে পৌরসভা নির্বাচন হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও শেষ হওয়ার পথে। বেশিরভাগ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির জয়লাভ হয়েছে। তাই প্রতিটি পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিশনারদের নেতৃত্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী নাগরিক কমিটি গড়ে তুলতে হবে। যেখানে জামায়াত-বিএনপি পাস করেছে সেখানে ভিন্নভাবে কমিটি গঠন করতে হবে। একইভাবে গ্রামে গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের নেতৃত্বে একই কাজ করা প্রয়োজন। তেমনিভাবে এখন এগিয়ে আসা দরকার প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর। তারা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মতো যেমন গণজাগরণে যোগ দিয়ে গণজাগরণ সৃষ্টি করেছিল সারাদেশে, শক্তিশালী করেছিল মানুষকে। এ মুহূর্তে তাদেরকেও আবার একত্রিত হতে হবে। আবার দেশজুড়ে তাদেরকে এই সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবিরোধী কমিটি গড়ে তুলে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ মুহূর্তে সাধারণ মানুষ, ছাত্র, শিক্ষক, রাজনীতিক সবার জন্য প্রয়োজন কিন্তু রুখে দাঁড়ানো। আর একা কখনও রুখে দাঁড়ানো যায় না। তাই প্রতিটি ইঞ্চিতে কমিটি করে, সংগঠিত হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। শুধু একবার রুখে দাঁড়ালে হলো, আর এখানে রবীন্দ্রনাথই সত্য, ‘যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে/ যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পলাইবে ধেয়ে’। [email protected]
×