ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেন এসব খুন!

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

কেন এসব খুন!

গত তিন দিনে উপর্যুপরি ৪ খুনের ঘটনা রীতিমতো উদ্বেগজনক ও রোমহর্ষক। ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে জুলহাস মান্নান ও মাহবুব তনয়কে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় চাপাতির কোপে। ২২ এপ্রিল টুঙ্গিপাড়ায় পরমানন্দ রায় নামের এক সাধু নিহত হন ঘাতকের ছুরিকাঘাতে। এর পাশাপাশি ২৫ এপ্রিল কাশিমপুর কারাগারের ফটকের সামনে এলপিআরে থাকা কারারক্ষীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। এর বাইরেও প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের অন্যত্র এক বা একাধিক খুনের ঘটনা ঘটছে। তবে রাজশাহী ও কলাবাগানের ঘটনাটি ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের কাজ বলে ধারণা করছে পুলিশ। হত্যার ধরনও প্রায় একরকম। ভারি চাপাতির কোপে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকা-। খুন করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধর্মীয় সেøাগান দেয়ার খবরও আছে। এর আগে শাহবাগে প্রকাশক হত্যাসহ বিভিন্ন সময়ে ব্লগার হত্যার ধরনের সঙ্গে এসব খুনের মিল রয়েছে। দু’একটি ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন দু’এক জনকে ধরে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদের খবর মিললেও সার্বিক তদন্ত কাজে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতির খবর নেই। অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। যদিও ইউপি নির্বাচনে সংঘাত-সংঘর্ষ-গোলাগুলি-বোমাবাজি সর্বোপরি খুনোখুনির ঘটনা নতুন নয়। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব অনেক বেশি। সংশ্লিষ্ট কমিশন কঠোর ও নিরপেক্ষ হলে নির্বাচনী সহিংসতা কমিয়ে আনা সম্ভব অনেকাংশে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ অবশ্যই লক্ষ্য করার মতো। কলাবাগানে জোড়া খুনের মতো বিভিন্ন হত্যাকা-ের জন্য জামায়াত-বিএনপি চক্রকে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবকিছুতে ব্যর্থ হয়ে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। সবাই মিলে এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। সত্য বটে, বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট গত জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে থেকেই দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক সময় তারা ক্রমাগত হরতাল-অবরোধসহ সারাদেশে গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, রেলের বগিতে আগুন, সর্বোপরি পেট্রোলবোমা ছুড়ে অসংখ্য মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হাতে সেসব দমন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলে পরবর্তীতে তারা বেছে নেয় গুপ্তহত্যার পথ। বিশেষ করে একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে তারা আরও বেপরোয়া ও নৃশংস হয়ে উঠেছে। বর্তমানে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী ও মীর কাশেমের রিভিউ শুনানি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই রায় বানচাল তথা প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য জামায়াত-বিএনপি চক্র আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগসহ হেন কোন চেষ্টা নেই, যা করছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে দেশ তথা সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা তো আছেই। যে কারণে ঘটছে একের পর এক নৃশংস গুপ্তহত্যা ও নাশকতা কার্যক্রম। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর সবার সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার মাধ্যমে যাবতীয় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার আহ্বান প্রণিধানযোগ্য। এর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগকে আরও তৎপর এবং কঠোর হতে হবে। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। যে কোন অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে সবাইকে।
×