ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়...

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়...

এস এম মুকুল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সুনাম আছে। মানুষ মানুষের পাশে এগিয়ে আসার বড় ধরনের উদাহরণও আছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলার অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু সুনামি ও ভূমিকম্পের মতো বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা নেই। সাভারের ভবন ধস প্রমাণ করেছে দ্রুততম সময়ে বিপর্যয় সামলানোর মতো প্রযুক্তি, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা আমাদের একেবারেই নেই। আমরা জানি, ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম উপকূলে ভয়াবহ সুনামিতে নিহত হয় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। ২০০৮ সালে চীনের সিচুয়ান প্রদেশে ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে স্কুল ও হাসপাতালসহ বহু সরকারী ভবন ধসে পড়ে। হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সের ভূমিকম্প দেশটির জন্য চরম মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ আর পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে শোকে হতবিহ্বল হয়েছিল পোর্ট অব প্রিন্সের জনগণ। স্কুল, হাসপাতাল, সরকারী অফিস, আবাসিক এলাকা, সুপার মার্কেট সবই বিধ্বস্ত। দেশটির পার্লামেন্ট, প্রেসিডেন্ট ভবন, অর্থ মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অফিস ভেঙ্গে পড়ে। মনে রাখা দরকার, কয়েক বছর আগে ভূমিকম্পে তুরস্কের একটি অঞ্চল ব্যাপক ধ্বংসলীলার শিকার হয়। দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ; যেমন- ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারত, থাইল্যান্ড, মাল™^ীপ উপকূলে যে ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাস হয় তাতে হাজার হাজার কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও দেড় লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এমন না হোক, ৮ মাত্রার ভূমিকম্প যদি হয়েই যায় তবে কি পরিস্থিতি তৈরি হবে এই ভেবে ভয়টা হয়। কে কাকে সাহায্য করবে? পুরান ঢাকার অবস্থা কী যে ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ ভাবাই যায় না। নতুন ঢাকার আধুনিক ভবনগুলোর অবস্থা নাজুক। জলাশয়ের ওপর নির্মিত হয়েছে- বনশ্রী, আফতাবনগর, বসুন্ধরা, উত্তরা ইত্যাদি এলাকা। শক্তিশালী একটা ভূমিকম্প ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে যে কোন সময়। এ বিষয়ে প্রায়ই সতর্ক করা হচ্ছে। জাপানী সংস্থা সিডিএমপি দুই বছর গবেষণার পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, মিয়ানমার-বাংলাদেশ বর্ডারে যে কোন সময় উচ্চ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের উৎপত্তি হবে। এই মাত্রার ভূমিকম্প বাংলাদেশ বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ভূমিকম্প ঝুঁকি থেকে বাঁচতে বাড়িঘর নির্মাণের সময় প্রকৌশলীদের দিয়ে নকশা তৈরি, তত্ত্বাবধান ও জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসরণের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতেÑ ১. ভূমিকম্পের পরে ভেঙ্গে পড়া ভবনের নিচে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার ও আগুন নেভানোর জন্য দমকলকে প্রস্তুত রাখতে হবে। ২. বিদ্যুত, পানি সরবরাহ ইত্যাদি সার্ভিসকে নিয়ে সমন্বি^ত ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। ৩. ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পাড়ায়, মহল্লায় স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া। সেখানে জনসাধারণের পাশাপাশি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নার্স, টেকনিশিয়ান, মিস্ত্রি ইত্যাদি পেশায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করা। ৪. স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, পূর্ত বিভাগ, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গ্যাস, টিএ্যান্ডটি বোর্ড, অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ ইত্যাদি সংস্থাগুলোর উদ্ধারকারী দল, প্রয়োজনীয় লোকবল ও সরঞ্জামাদিসহ সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত এবং সমন্বিত থাকা। ৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস ও বাসাবাড়ির জনসাধারণকে ভূমিকম্প মোকাবেলায় সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক মহড়া অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। ৬. দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞ টিমের সাহায্য নেয়া উচিত। ঢাকা থেকে
×