ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিন খুনের নিন্দায় খালেদা জিয়া

রক্তপাত ঘটানো ছাড়া সরকারের আর কোন পথ খোলা নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৭ এপ্রিল ২০১৬

রক্তপাত ঘটানো ছাড়া সরকারের আর কোন পথ খোলা নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সহিংস রক্তপাত ঘটানো ছাড়া বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার অন্য কোন পথ খোলা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। রাজধানীর কলাবাগানে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল অফিসার জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয় এবং কারারক্ষী রুস্তম হত্যার নিন্দা জানিয়ে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে খালেদা জিয়া সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত জুলহাস মান্নান, মাহবুব রাব্বী তনয় এবং রুস্তম আলীর হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সেই সঙ্গে অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তিনি নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানান। বিএনপি চেয়ারপার্সন অভিযোগ করেন, মানুষের নিরাপত্তা, মানুষের অধিকার, ভোটাধিকার, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা এখন লাশবাহী গাড়িতে। দেশ পরিচালনায় সরকারের যেহেতু জনগণের সমর্থন নেই সেহেতু খুন-জখম টিকিয়ে রাখাকেই তারা পরিত্রাণের পথ মনে করছে। তিনি বলেন, দেশে যে কোন হত্যাকা-কে নিজেদের স্বার্থে অতি অবিশ্বাস্য কল্পকাহিনী রচনা করা আওয়ামী লীগের স্বভাবধর্ম। কিছুদিন ধরে দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায় ও বিদেশী হত্যার ঘটনাগুলোতেও তারা একের পর অপপ্রচার চালিয়েছে। বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছে। খালেদা জিয়া বলেন, সমস্ত অপকৌশল মূলত প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়া ও আসল অপরাধীদের আড়াল করা। সরকার প্রধান যতই উচ্চস্বরে বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করুন না কেন তাবেলা হত্যাকা- থেকে শুরু করে জুলহাস মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয় এবং রুস্তম আলী পর্যন্ত প্রতিটি হত্যাকা-ের দায় এ সরকারকেই নিতে হবে। তিনি যতই উদোরপি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা করুন না কেন, জাতীয় অর্থনীতির হরিলুট, রাজকোষ চুরির ঘটনা এড়াতে তিনি যতই অপকৌশল করুন না কেন জনগণের দৃষ্টিকে ঝাপসা করতে পারবেন না। তার অপকৌশল বাস্তবায়ন করতে তিনি যতই দূষিত পরিকল্পনা করুন না কেন সরকারকেই এর জন্য জনগণের নিকট একদিন জবাবদিহি করতেই হবে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন আরো বিপজ্জনক। দেশের মানুষ এক ভয়াল নৈঃশব্দের মধ্যে আতঙ্কে দিন যাপন করছে। ব্যাংকার, শিক্ষক, এনজিও কর্মী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, ছাত্র, নারী, শিশুসহ অনেককেই রাষ্ট্রযন্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে জীবন দিতে হয়েছে। সরকার সর্বক্ষেত্রে একচেটিয়াত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে গণতন্ত্রের পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক ভারসাম্যকেও চরমভাবে ভেঙ্গে ফেলেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। সুতরাং চারদিকে অরাজকতারই জয়জয়কার। দেশে হত্যা, হানাহানি, রক্তপাত, অপহরণ, গুম, মুক্তিপণ আদায়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- প্রচ- আধিপত্য বিস্তার করেছে। সুতরাং কর্তৃত্ববাদী শাসন এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, মানুষের মুখে টু শব্দ শুনলেই সেই মানুষের টুটি টিপে ধরার জন্য ধেয়ে আসে রাষ্ট্রযন্ত্র। মনে হয় আমরা যেন একটি পিশাচ দ্বীপে বসবাস করছি। বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, সুস্থ পরিবেশে গণতন্ত্র চর্চা এখন কেবলমাত্র কবরেই সম্ভব। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণেই ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা উৎসাহিত হয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করে, ব্যালট পেপারে বেপরোয়া সিল মারে এবং অস্ত্রের মুখে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়, খুন-জখমসহ নানাবিধ অনাচারে লিপ্ত থেকে দেশকে অতল গহব্বরের দিকে ঠেলে দেয়। তাই দেশে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ এখন আর স্বাভাবিক মৃত্যুর আশা করে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গতকাল দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু সাংবাদিক মাহবুব রাব্বী তনয় এবং কারারক্ষী রুস্তম আলীকে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান। তিনি নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। অপর এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সরকারের আমলে সংঘটিত সকল হত্যাকা-সহ রাজধানীর কলাবাগানে দুর্বৃত্তদের হাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে নৃশংসভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে এবং কাশিমপুর কারাগারের সামনে সাবেক প্রধান কারারক্ষী রুস্তম আলীকে গুলি করে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্য। গোটা দেশবাসী ঘরে-বাইরে আজ আর নিরাপদ নয়। তদন্তের আগেই প্রধানমন্ত্রী কি করে বললেন বিএনপি-জামায়াত জড়িত- রিজভী ॥ কলাবাগানে জোড়া খুনসহ সারাদেশে চলমান গুপ্তহত্যার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জড়িত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, তদন্তের আগেই প্রধানমন্ত্রী কি করে বললেন, হত্যাকা-ের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জড়িত। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
×