ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৬৬ ভাগ এখন কর্মক্ষম

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৭ এপ্রিল ২০১৬

বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৬৬ ভাগ এখন কর্মক্ষম

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশই এখন কর্মক্ষম। ধীরে ধীরে এই কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বাড়বে। আগামী ২০৩০ সালে এ সংখ্যা পৌঁছাবে ৭০ শতাংশে। বিরাট এই কর্মশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। তবে তাদের সঠিকভাবে কাজে লাগানোই বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে জনসংখ্যার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। ইউএনডিপি বলছে, বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা (১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী) ১০ কোটি ৫৬ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ। আর ২০৩০ সালে এটি বেড়ে দাঁড়াবে ১২ কোটি ৯৮ লাখে, যা মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এ জনশক্তি থাকা সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাদের কাজে লাগানোর মতো শিক্ষা, ব্যবস্থা, ভিন্নধর্মী কাজ, প্রশিক্ষণ বাংলাদেশে নেই। তবে ২০৩০ সালের পর কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমতে শুরু করবে। বাড়তে থাকবে কাজ করতে পারবে না এমন মানুষের সংখ্যা। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বয়স্ক মানুষ বা ৬০ বছরের বেশি মানুষের সংখ্যা এখন ৭ শতাংশ। ২০৩০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১২ শতাংশে। আর ২০৫০ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ২২ শতাংশে। এতে বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উভয় অঞ্চলেই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বড় ধরনের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। পরবর্তীতে তা কমতে শুরু করবে। যেহেতু কর্মক্ষম জনসম্পদ বৃদ্ধি পাবে তাই এই অঞ্চলের দেশগুলোকে পর্যাপ্ত যথাযথ কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবৃদ্ধি যাতে সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং মানব উন্নয়ন সহায়ক হয় সেভাবে তাদের অর্থনৈতিক পরিচালনা ও উদ্দীপ্ত করতে হবে। প্রতিবেদনে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪৫টি দেশের জনসংখ্যাভিত্তিক তথ্য, পরিবর্তনের ধরন ও করণীয় বিষয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার এই অঞ্চলের ৪৫টি দেশে একযোগে এই মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের এই বিরাট মানব সম্পদকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে হলে আরও বেশি ও ভাল কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সকল কাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। তবেই বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও চমক দেখাতে পারবে। ইউএনডিপির প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব হাওলিয়াং জু, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াকিন্স ও ইউএনডিপির সিনিয়র স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা ও প্রধান অর্থনীতিবিদ থাঙ্গাভেল পালানিভেল। অনুষ্ঠানে ড. মসিউর রহমান বলেন, উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সে কারণে ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করছে। তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের জন্য নারী-পুরুষের সমতার বিষয়েও প্রাধান্য দিতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা না থাকলে সামাজিক অগ্রগতি সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠান শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব হাওলিয়াং জু, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াকিন্স ও ইউএনডিপির সিনিয়র স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা ও প্রধান অর্থনীতিবিদ থাঙ্গাভেল পালানিভেল। তারা বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক নানা সূচকে তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আরও দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চাকরি সুযোগ, সুশাসন ইত্যাদি। এসব প্রতিবন্ধকতাকে ডিঙ্গিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে হাউলিয়াং জু বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি করছে। জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলা, সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সেনা পাঠানো ইত্যাদিকে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ। তবে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানে এখন বাংলাদেশকে জোর দিতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ইউএনডিপির বাংলাদেশ আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিনস বলেন, বাংলাদেশের যে বিশাল শ্রমবাজার তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে তা কাজে লাগানোর জন্য সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে দক্ষ জনগোষ্ঠী সৃষ্টিতে বিনিয়োগ এবং বহুমুখী শিল্পায়নের ওপর। প্রতিবেদনের বিষয়ে ইউএনডিপির অর্থনীতিবিদ তাসনিম মির্জা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে যে তরুণ জনশক্তি রয়েছে- তা যে কোন দেশের জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক। তবে এদেশের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো- কর্মক্ষেত্রের বৈচিত্র্য কম। তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংকিংসহ নানাক্ষেত্রে কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে। তার মতে, দেশে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। আর সেভাবে দক্ষ জনবলও তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোরও আহ্বান জানান তিনি। ইউএনডিপির এই গবেষক আরও বলেন, কিছুদিন পরেই এই তরুণ জনশক্তি বয়সের ভারে নুয়ে যাবে। তাই এখনই যদি তাদের কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন না করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়তে পারে। তিনি ইউরোপের উদাহরণ টেনে বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক লোক রয়েছে ইউরোপে। তবে তাদের এই বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী ধীরে ধীরে বেড়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ততটা সময় পাবে না। ফলে এখনই এই প্রজন্মকে কাজে লাগাতে হবে।
×