ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনজিওগুলোর সঙ্গে উর্দুভাষী নেতারা জোটবদ্ধ হয়ে চালান মাদকসহ নানা ধরনের অবৈধ ব্যবসা;###;সরকারবিরোধী নানা অপতৎপরতায়ও এদের লিপ্ত থাকার অভিযোগ শোনা যায়

পুনর্বাসনের নামে বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ফান্ড

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৭ এপ্রিল ২০১৬

পুনর্বাসনের নামে বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ফান্ড

গাফফার খান চৌধুরী ॥ সারাদেশের উর্দুভাষী অবাঙালীদের ক্যাম্পগুলোতে শতাধিক এনজিও কাজ করছে। আর ঢাকার ক্যাম্পগুলোতে গড়ে কাজ করছে অন্তত ১৫টি এনজিও। এছাড়া প্রতিটি ক্যাম্পে উর্দুভাষী অবাঙালীদের একাধিক নিজস্ব সংগঠন রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট নয় ক্যাম্পগুলোতে কাজ করা এনজিও এবং উর্দুভাষী অবাঙালীদের নেতারা। তারা নানাভাবে সরকারবিরোধী অপতৎপরতাসহ সরকারকে ভুল বুঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিদেশ থেকে উর্দুভাষী অবাঙালীদের দেখিয়ে আনা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ফান্ড। এসব অর্থ পকেটস্থ করতেই উর্দুভাষী অবাঙালী নেতাদের বিভিন্ন সংগঠন এবং এনজিওগুলো মিলে মিশে সরকারবিরোধী নানা অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টায় নেমেছে। যাতে সরকার উর্দুভাষী অবাঙালীদের পুনর্বাসন না করে। ক্যাম্পে কার্যক্রম চালায় যেসব এনজিও ॥ মোহাম্মদপুর মার্কেট ক্যাম্প ঘুরে জানা গেছে, সেখানে কার্যক্রম চালানো এনজিওগুলোর নানা অপতৎপরতার কথা। এর মধ্যে রয়েছে শক্তি ফাউন্ডেশন, রিক, ঠেঙ্গামারা মহিলা সমবায় সমিতি, ব্যুরো বাংলাদেশ, সিপিডি, অব্যাট হেল্পার্স, আশা, ব্র্যাক, সেফ সেফ, ওয়ার্ল্ড মুসলিম এইড, হিড বাংলাদেশ, প্লান ইন্টারন্যাশনালের পার্টনার সুরভী, রাড্ডা, মেরিস্টোপসের ফুলকি, এ্যাওয়ার্ড, হুইটস্ট্রসহ বহু এনজিও। এছাড়া মিরপুরের ক্যাম্পগুলোতে ওয়ার্ল্ড ভিশন, সিরডাপ ও প্লান্ট নামের এনজিওসহ বেশ কয়েকটি এনজিও কাজ করে। এনজিও সম্পর্কে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের অভিযোগ ॥ মার্কেট ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ মেহেদীসহ অনেকের সঙ্গেই কথা হয়। মেহেদী বলছিলেন, তিনি তিনটি এনজিও থেকে মোট ৭০ হাজার টাকা ঋণ করেছেন। ঋণ দেয়ার পদ্ধতি এবং আদায় করার মধ্যে বিস্তর ফাঁকি রয়েছে। যখন ঋণ দেয়, তখনই প্রতি ১০ হাজার টাকার বিপরীতে ৩শ’ টাকা করে রেখে দেয় এনজিওগুলো। সে হিসেব অনুযায়ী ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিলে মূলত পাওয়া যায় ২৯ হাজার এক শ’ টাকা। ঋণ নেয়ার পরের সপ্তাহ থেকেই কিস্তি শুরু হয়। ৩০ হাজার টাকার বিপরীতে প্রতিসপ্তাহে এক শ’ টাকা সঞ্চয় এবং মাসিক ৮শ’ টাকা কিস্তি হিসেবে মোট ৯শ’ টাকা দিতে হয়। সর্বমোট ৪৫টি কিস্তি দেয়ার পর ২৯ হাজার এক শ’ টাকার ঋণ পরিশোধ হয়। প্রতিকিস্তির সঙ্গেই সঞ্চয় দিতে হয়। সঞ্চয়ের টাকা ঋণগ্রহিতার ফান্ডে জমা হয় বলে এনজিওগুলোর তরফ থেকে ঋণগ্রহীতাদের জানানো হয়। অথচ সঞ্চয়ের টাকা চাইতে গেলেই টাকার মালিকদের টাকা দিতে নানা টালবাহানা শুরু করে এনজিওগুলো। হিসেব মতে এক বছরের আগেই ২৯ হাজার এক শ’ টাকার পরিবর্তে ঋণগ্রহীতাকে দিতে হচ্ছে ৪০ হাজার ৫শ’ টাকা। সব মিলিয়ে ঋণের বিপরীতে এনজিওগুলো লাভ নিচ্ছে ১১ হাজার ৪শ’ টাকা। যা অনেকের পক্ষেই বহন করা কঠিন বলে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের দাবি। ক্যাম্পের অধিকাংশ পরিবারই কোন না কোন এনজিওর কাছে ঋণী। ঋণ নেয়া মহিলা ও পুরুষদের অভিযোগ, মৃত্যুর পরেও এনজিওর ঋণ থেকে মুক্তি মেলে না। ঘরে লাশ রেখে এনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধ করার ভূরি ভূরি নজির আছে। এনজিওগুলো এসব ক্ষেত্রে কিস্তির টাকা নিতে কোন দিনই অনাগ্রহ দেখায়নি। কিস্তির টাকা নিতে মানবিকতা পর্যন্ত ভুলে যায় এনজিওগুলো। ঋণগ্রহীতার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও কিস্তির টাকা নিতে সবচেয়ে কঠোর শক্তি ফাউন্ডেশন নামের এনজিওটি। অন্যান্য এনজিওগুলো এসব ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখালেও শক্তি ফাউন্ডেশন কোন সময়ই মানবিক দিক বিবেচনায় নেয় না। কিস্তি আদায়ের জন্য একজন এনজিও কর্মী সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত, কোন কোন সময় রাত পর্যন্ত বসে থাকেন। কোন ঋণগ্রহীতা পর পর কয়েক কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে তাদের দোকানপাটের মালামাল, বাড়ির আসবাবপত্র নেয়ারও নজির আছে। মূলত এসব করা হয় ঋণগ্রস্তকে মানসিকভাবে চাপে রাখতে। মানসিক চাপেই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি টাকা দিতে অনেকটাই বাধ্য হয়। এটি এনজিওগুলোর কৌশল। উর্দুভাষী অবাঙালী নেতাদের অপতৎপরতা ॥ অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক এনজিও তাদের ঋণ গ্রহীতাদের সরকারবিরোধী মিছিল মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য পরোক্ষভাবে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। আর তাতে মদদ দেয় ক্যাম্পের নেতারা। এসব এনজিও কোন সময়ই উর্দুভাষী অবাঙালীদের পুনর্বাসনের পক্ষে নয়। কারণ পুনর্বাসন হলে এনজিওগুলোর ব্যবসা মাঠেমারা পড়বে। এনজিওগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে একমত নেতারাও। এনজিওগুলোর সঙ্গে নেতাদের জোটবদ্ধ থাকার অন্যতম কারণ অবৈধ ব্যবসা। বিশেষ করে মাদক ব্যবসা থেকে আসা টাকার একটি বড় অংশ পেয়ে থাকে নেতারা। এছাড়া ক্যাম্পে বহুতল বাড়ি বানানোর সময় এসব নেতৃবৃন্দ টাকা পেয়ে থাকে। ক্যাম্পে ব্যবহৃত পানি ও বিদ্যুতের কোন খরচ দিতে হয় না সরকারকে। এমন সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে নেতৃবৃন্দ ক্যাম্পের বাইরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের লাইন দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। বিদু্যুত বিভাগের হিসেব অনুযায়ী প্রতি মাসে শুধু মোহাম্মদপুরের উর্দুভাষী অবাঙালীদের ক্যাম্পেই ১০ কোটি টাকার বিদ্যুত অপচয় হয়, যা হওয়ার কথা নয়। অন্যদিকে ক্যাম্পগুলোতে তৎপর থাকা এনজিওগুলো থেকেও মোটা অঙ্কের টাকাসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা পেয়ে থাকে এসব নেতারা। অব্যাট হেল্পার্স এনজিওর অপতৎপরতা ॥ ক্যাম্পে নানা অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে অব্যাট হেল্পার্স ইউএসএ নামের এনজিওটির বিরুদ্ধেও। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেরশাহ শূরী রোডের ৩২/৪ নম্বর চারতলা বাড়িটিতে এনজিওটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এনজিওটির নামের সঙ্গে এমনভাবে ইউএসএ লেখা রয়েছে, যে কেউ দেখলে ভাবতে বাধ্য এনজিওটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিচালনা করে থাকে। অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত এনজিওটি সেদেশটির সরকারের জানামতে বাংলাদেশে কর্মকা- পরিচালনা করছে। আসলে এর কোনটিই সত্য নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশের উর্দুভাষী অবাঙালী রংপুরের বাসিন্দা আনোয়ার খান আকমল এনজিওটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তার এক মেয়ে আরিশা খানও এনজিওটির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া এনজিওটির সহ-সভাপতি, উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য ও পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিতদের অধিকাংশই পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। কয়েকজন মার্কিন নাগরিকও রয়েছেন। এনজিওটির উচ্চ পর্যায়ে জড়িতদের সবাই উর্দুভাষী আবাঙালী। এনজিও এবং উর্দুভাষী অবাঙালী নেতাদের দাবি ॥ অব্যাট হেল্পার্স এনজিওটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ার খান আকমল জনকণ্ঠকে জানান, এনজিওটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী ও পাকিস্তানী নাগরিকসহ মার্কিন নাগরিকদের দেয়া অর্থে পরিচালিত হয়। প্রতিবছর এনজিওটির পেছনে সাড়ে তিন কোটি টাকার বাজেট রয়েছে। যা একেবারেই নগণ্য। ভবিষ্যতে বাজেট বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এজন্য বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। তিনি দূতাবাসের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই দফায় বৈঠক করেছেন। দূতাবাস কর্মকর্তারা এনজিওটিকে আর্থিক সহায়তাসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এনজিওটির ঋণ সহায়তাসহ সব প্রকল্প চালু আছে। বিদেশ থেকে আসা সব অর্থ যথাযথ খাতে খরচ হয়। কোন অনিয়ম হয় না। অনিয়মের অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলেও তিনি দাবি করেন।
×