ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ে সময় বাড়ানো প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২৭ এপ্রিল ২০১৬

বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ে সময় বাড়ানো প্রয়োজন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ে সময় বাড়ানো আবশ্যক বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এখন যদি কেউ এটাকে বাস্তবায়ন না করতে চায় তাহলে তার শক্ত যুক্তি দেখাতে হবে এতেÑ ‘অর্থনীতির ক্ষতি হবে।’ রাজধানীর পূর্বাণী হোটেলে সোমবার রাতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পুঁজিবাজার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মার্চেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মশিউর রহমান বলেন, এখন ব্যাংকে যে পরিমাণ অলস টাকা পড়ে আছে সেখানে আরও টাকা রাখলে অলস টাকা বাড়বে। অলস টাকা বাড়লে ব্যাংক আমানত নিতে অস্বীকার করবে। আমার মনে হয় এই মুহূর্তে বেশি টাকা ব্যাংকের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না। কাজেই প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়িয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত করা হবে। এরপর আমরা গেলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলে এটি আসতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। গেলাম অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কাছে চিঠি লিখলে আমরা ওকে করে দিব। এই করতে করতে এ বিষয়ে জড়িত হলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে গেলাম তিনি পুঁজিবাজারের স্বার্থে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গবর্নরের সামনে কথা দিয়েছেন বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়ানো হবে। সে সময় অর্থ সচিবও উপস্থিত ছিলেন। আমরা খতিয়ে দেখলাম যে আইনে বিনিয়োগ সমন্বয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, সেই আইন পরিবর্তন না করেই সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর সুযোগ আছে। ডিএসইর সাবেক পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগ সমন্বয় করা নিয়ে কেন এই খেলা খেলছে? আজ পর্যন্ত দেখি নাই কোন আইনে বিনিয়োগ সমন্বয়ের বিষয়ে তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কারণে ধীরে ধীরে পুঁজিবাজার ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুঁজিবাজারের গলা টিপে ধরে আছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজড করা হয়েছে। তবে অনেক বিজ্ঞ এ বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন। ডিমিউচুয়ালাইজড হয়েছে কিন্তু পুঁজিবাজারে ইতিবাচক না হওয়ায় তারা সমালোচনা করেন। সামাজিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি কারণে ২০১০ সালের পরবর্তী সময়ে ফোর্সড সেল করা সম্ভব হয়নি বলে জানান খায়রুল হোসেন। যাতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ভূমিকায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে গত ৫ বছরে বিভিন্ন আইন-কানুন করায় প্লেসমেন্ট, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ছে, বলেন খায়রুল হোসেন। দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি ও বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান বলেন, শুধু ফি নিতে কোন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতে মার্চেন্ট ব্যাংকের সুপারিশ করা ঠিক না। সম্পূর্ণ ডিউ ডেলিজেন্স পালন করে একটি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে হবে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিন ড. মোহাম্মদ মূসা। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা না বুঝে পুঁজিবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করে। আবার অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে শুধু একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তারা এক্ষেত্রে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারে।
×