ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষকের আহাজারি

পানির নিচে হাওড়ের বোরো

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৭ এপ্রিল ২০১৬

পানির নিচে হাওড়ের বোরো

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ, ২৬ এপ্রিল ॥ হাওড় অধ্যুষিত উপজেলা মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রামে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কাঁচা ও আধাপাকা উঠতি বিস্তীর্ণ বোরো জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতির শিকার হয়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। একমাত্র অবলম্বন এই বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় হাওড়ের কৃষকদের মাঝে এখন চলছে আহাজারি। প্রায় প্রতিবছর আগাম পানি এসে কৃষকদের একমাত্র বোরো ফসল তলিয়ে যায়। তাই হাওড়ের কৃষকদের বাঁচাতে নদী খনন ও নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন হাওড়ের জনপ্রতিনিধি ও কৃষকরা। জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে হাওড় উপজেলা মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রামের উঠতি বোরো জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ী ঢলের পানি তীব্র স্রোত বিভিন্ন নদী দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সে পানি নদী ধারণ করতে পারছে না। ফলে অধিকাংশ এলাকায় সে পানি নদীর দুইপাড় ছাপিয়ে বোরো জমিতে প্রবেশ করছে। সামান্য কিছু জমির ধান কৃষক কাটতে পারলেও বেশিরভাগ জমিই পানির নিচে থাকছে। হাওড়ের ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েক কৃষক জানান, বোরো ফসলই হচ্ছে হাওড়বাসীর একমাত্র ভরসা। এ একটি মাত্র ফসলের ওপর তাদের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ, ধারদেনা করে এ ফসলের খরচ যুগিয়েছেন। কিন্তু উঠতি বোরো জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় তারা এখন কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন আর কিভাবে সারা বছর পরিবার-পরিজন নিয়ে চলবেন সে চিন্তায় কৃষকরা এখন অস্থির হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি কৃষক পরিবারের চলছে আহাজারি। জেলার মিঠামইনের কাটখালের হাসিনপুর গ্রামের কৃষক সাইজউদ্দিন জানান, এ বছর তিনি ৭ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। কিন্তু পাহাড়ী ঢলের পানিতে তার ৫ একর জমিই বিনষ্ট হয়েছে। পার্শ¦বর্তী ছত্রিশপুর গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন জানান, তিনি ১২ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। অকাল বন্যার পানিতে তার পুরো জমিই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ ভূঁইয়া জানান, আগে সময়মতো পানি আসত, আর যেত। এতে কৃষকদের কোন ক্ষতি হতো না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আগাম পানি এসে কৃষকের স্বপ্নের বোরো ফসল বিনষ্ট করছে। তা থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে হলে সরকারকে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকী ইউপি সদস্য ফজু মিয়া জানান, হাওড়ের কৃষককে বাঁচাতে হলে নদী খনন ও নদীর দুই পাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলার ১৩টি উপজেলায় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওড়ের তিন উপজেলাতেই আবাদ করা হয়েছে ৯৯ হাজার ৬শ’ ২০ হেক্টর জমিতে। পাহাড়ী ঢলের পানিতে ইতোমধ্যে ৪ হাজার ২শ’ ২২ হেক্টর বোরো জমি ক্ষতির শিকার হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রতিবছর হাওড়ের কৃষকদের ফসল বিনষ্ট হয়। হাওড়ের নদীগুলোর নাব্য বৃদ্ধি ও বাঁধ নির্মিত হলে হাওড়ের কৃষকদের কাক্সিক্ষত ফসল ঘরে তুলতে পারবে।
×