ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহাসিক জলবায়ু চুক্তি

প্রকাশিত: ০৩:১৯, ২৭ এপ্রিল ২০১৬

ঐতিহাসিক জলবায়ু চুক্তি

ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন আর প্রচুর পরিমাণ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিষ্কাশনের ফলে দিন দিন পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে বায়ুম-ল এবং জলবায়ুও। যার ফলস্বরূপ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিমজ্জিত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো নিচু দেশগুলো এবং অদূর ভবিষ্যতে তলিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কাসহ পৃথিবীর নিম্নভূমির দেশসমূহ। জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশকে একটি বিপন্ন অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। একই সঙ্গে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি উপকূলীয় জনগণের জীবনধারায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। আশার কথা, বিগত বছরগুলোয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়কণ্ঠে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য বরাবর উন্নত ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে দায়ী করে তাদের নিজ নিজ দেশে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এনে প্রতিশ্রুত তহবিলের অর্থ দ্রুত ছাড় দেয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে আসছেন। বিশ্ববাসীর জন্য স্বস্তিকর এবং বাংলাদেশের জন্য গৌরবের সংবাদ এই যে, দীর্ঘকাল সহিষ্ণু প্রতীক্ষার পর শেষ পর্যন্ত জলবায়ু চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার ছিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। আর ওই দিনই ধরিত্রী রক্ষার অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করলেন বিশ্বনেতৃবৃন্দ। দেড় শতাধিক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান বা তাদের প্রতিনিধিরা নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতরে সমবেত হয়ে ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন। এর মাধ্যমে শুরু হলো পৃথিবীর ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। বিশ্বকে রক্ষা করার সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ এ প্রয়াস অবিস্মরণীয় ও প্রশংসাযোগ্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী। প্রসঙ্গত দেশের দিকে চোখ ফেরানো যাক। ভয়াবহ পরিবেশ দূষণে অস্বাস্থ্যকর অবস্থার মধ্যে বসবাস করছে দেশের মানুষ। পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণে হুমকির মুখে মানব স্বাস্থ্য। তবে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সব কিছুর আগে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের বৈরী কর্মকা- প্রতিহত করা সম্ভব হয়। এর পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগাতে হবে ব্যাপকহারে। সবুজ প্রকৃতি গড়ে তোলা জরুরী, কারণ তা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, সুস্বাস্থ্য ও সুখী জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মতো জলাভূমি ভরপুর বহুল বৃষ্টিপাতের দেশটিতে প্রাকৃতিকভাবে সুপেয় পানির সঙ্কট থাকার কথা ছিল না। সমস্যা হয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে। চুক্তি স্বাক্ষর তো হলো। এখন প্রয়োজন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই চুক্তির বাস্তবায়ন। চুক্তি বাস্তবায়িত হলেই ধরিত্রী বাঁচবে। এমন আশাবাদ আমাদের পরিবেশমন্ত্রীর কণ্ঠেও ধ্বনিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশ আন্তরিকভাবেই গতিশীল ভূমিকা রাখবে।
×