ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী ৩-৪ দিন তাপমাত্রা বাড়বে না, বৃষ্টিও নামবে না

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

আগামী ৩-৪ দিন তাপমাত্রা বাড়বে না, বৃষ্টিও নামবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃষ্টি না হলে প্রকৃতির দাবদাহ কমার কোন লক্ষণ দেখছে না আবহাওয়া অফিস। সেই সঙ্গে দেশের অব্যাহত তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন থাকবে বলে আভাস দিয়েছে তারা। তবে তারা বলছেন, বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি উন্নতির কোন সম্ভবনা নেই। আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতেরও কোন সম্ভবনা নেই। তবে একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, এ সময়ে তাপমাত্রা বর্তমানের চেয়ে বাড়ার সম্ভাবনা নেই। আবাহাওয়া অফিসের রেকর্ড অনুাযায়ী গত রবিবারের চেয়ে সোমবার সারাদেশে তাপমাত্রা কিছু কমেছে। রবিবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও সোমবার তা নেমে এসেছে ৪০.২ ডিগ্রীতে। সৈয়দপুরে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বজলুর রশিদ বলেন, মার্চ-এপ্রিলে সাধরণত এত বেশি তাপমাত্রা দেখা না গেলেও মাঝেমধ্যে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। কখনও কখনও এ সময়ের তাপমত্রা ৪১ ডিগ্রী পার হয়ে যাচ্ছে। সাধারণত মে মাসে তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড থাকলেও এপ্রিল মাসে এ ধরনের ঘটনা খুব কমই দেখা যায়। তিনি বলেন, গত ১৫ সালের রেকর্ড বাদ দিলে দেখা যাবে ২০১৪ সালেও ঢাকায় এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রীতে উঠে যায়। ২০১৩ সালেও দেশের তাপমাত্রা এপ্রিল মাসে ৪১ ডিগ্রীতে উঠতে দেখা গেছে। মূলত এ সময় বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আবহাওয়াবিদরা উল্লেখ করছেন, এল নিনোর কারণেই আবহাওয়া এমন আচরণ করছে। এই এল নিনোর প্রভাবে দুই থেকে সাত বছর পর পর প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝ বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে উত্তাপ বেড়ে যায়। এতে বিশ্বের বায়ুপ্রবাহের গতিবিধি উল্টেপাল্টে যায়। এ কারণে বাংলাদেশেও ১৮ দিন ধরে দাবদাহ চলছে। পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতেও এ থেকে মুক্তি মিলছে না। এ কারণে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিশাল এলাকাজুড়ে এল নিনোর প্রভাবে এই সময়ের স্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে না। এই সময়ে বঙ্গোপসাগর থেকে দখিনা বাতাস দেশের ভূখ-ে প্রবেশ করে বজ্রবৃষ্টি সৃষ্টি করে। এবার হঠাৎ করে পশ্চিমা বায়ু এই সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ওই দখিনা বায়ুকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, মৌলভীবাজারসহ কয়েকটি জেলার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ফলে ওই এলাকায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে আর সারাদেশে শুষ্ক খটখটে আবহাওয়া বিরাজ করছে। আবহওয়াবিদরা বলছেন, জুনে মৌসুমি বায়ু আসার আগ পর্যন্ত দেশে কম-বেশি শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করবে। তবে এ সময়ে মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে কিছুদিন কম থাকবে। বৃষ্টিপাত কমে গেলে তাপমাত্রা আবার বৃদ্ধি পাবে। তাদের মতে, এপ্রিল মাসের মতো মে মাসেও বৃষ্টিপাত না হলে এ সময়ের তাপমাত্রা এপ্রিলের চেয়ে বেশি হতে পারে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ৬ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দাবদাহটি ১৮ দিন অতিক্রম করে গেছে। তিন দিন ধরে তাপপ্রবাহটি ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠছে। প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে গড় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস করে বাড়ছে। তারা বলছেন, মাঝেমধ্যে এপ্রিলে দাবদাহ বেড়ে গেলেও সচরাচর এ সময়ে তাপমাত্রা এত বৃদ্ধি পায় না। সম্প্রতি কয়েক বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড বাদ দিলে এপ্রিলে সাধারণ এত পরিমাণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় না। আগের রেকর্ড অনুযায়ী এপ্রিলের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা থাকে মূলত ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অথচ তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে এ সময়ে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা অনেক উপরে উঠে যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছর যাবতই মার্চ-এপ্রিলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে গড় এপ্রিল মাসের ঢাকার তাপমাত্রা ৪০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। এ বছর এপ্রিলের ২৪ তারিখে যশোরের তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। তাদের হিসাব অনুযায়ী স্বাভাবিক অবস্থায় মার্চ মাসের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩২ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সম্প্রতি কয়েক বছরের তাপমাত্রায় এ স্বাভাবিক অবস্থার ব্যত্যয় ঘটছে। এদিকে অব্যাহত তাপপ্রবাহের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। কর্মব্যস্ত মানুষের বাইরে বের হওয়াই দায় হয়ে পড়ছে। গত ক’দিনে অতিষ্ঠ এমন গরম আর দেখা যায়নি। শুধু ঢাকা নয়, এমন অসহনীয় গরম রাজধানীর বাইরেও প্রায় জেলাতেও বয়ে যাচ্ছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা তাপপ্রবাহে রাজধানীসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
×