ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলা

কৌশলের কাছে নিয়মের পরাজয়- চ্যাম্পিয়ন সামছু বলী

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

কৌশলের কাছে নিয়মের পরাজয়- চ্যাম্পিয়ন সামছু বলী

মাকসুদ আহমদ ॥ কৌশল আর বাহুবল বলী খেলায় কুপোকাতের অন্যতম শক্তি। সেয়ানে সেয়ানে লড়াইয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩২ মিনিট পর টেকনাফের সামছুর কাছে হেরে গেল ৭ বছরের চ্যাম্পিয়ন রামুর দিদার বলী। জব্বারের বলী খেলার ১০৭তম আয়োজনে চ্যাম্পিয়ন সামছু আর রানার আপ দিদার। পরাজয়টা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের কারণে এমন দাবি- দিদারের। কিন্তু প্রথমবারের মতো খেলতে এসে চ্যাম্পিয়ন সামছু দিদারের নানা অভিযোগ রেফারি ও বিচারকদের কাছে তুলে অমীমাংসিতভাবে মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করে বার বার। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় আধঘণ্টা খেলা চলার কারণে বিচারকরাও অনেকটা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন এই দুই বলীর ওপর। গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদে বলীদের মধ্য থেকে ওঠে আসা বলীরাই ক্রমশ চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে জব্বরের ঐতিহাসিক বলী খেলায় অংশ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশেষ করে চট্টগ্রামের কক্সবাজার, টেকনাফ ছাড়া তিন পার্বত্য অঞ্চল থেকেও আসছে বলীরা। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরে থাকা অনেক জেলার বলীরা বাংলার সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে টিকিয়ে রাখতে এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছে। তবে চট্টগ্রাম দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের অধ্যায়ে। সোমবারের এ আয়োজনে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে ১০৭তম জব্বারের বলী খেলায় উদ্বোধক ছিলেন সিএমপি কমিশনার মোঃ ইকবাল বাহার ও বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। বলী খেলায় রেফারি ছিলেন কাউন্সিলর আবদুল মালেক যিনি গত একযুগেরও বেশি সময় ধরে এ আয়োজনে বিচারকের ভূমিকা পালন করছেন। ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার এই খেলার আয়োজন করেন। ক্রমশ এ খেলাকে ঘিরে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বৈশাখীমেলার আয়োজনটাও এ লালদীঘি মাঠেই চলে। দেশীয় মিডিয়ার পাশাপাশি বিদেশীরাও এবার এ আয়োজনকে ঘিরে জমায়েত হয়েছিল সোমবার বিকেলে। সোমবার দুপুর ১২টা থেকেই দেখা গেছে, মেলা ছেড়ে খেলার দিকে মনোযোগ সবার। একে একে স্থান দখল করে নিচ্ছে দর্শনার্থীরা। ব্যান্ড পার্টি বাদ্যের তালে তালে বলীদের উৎসাহিত করতে প্রস্তুত দুপুর ১টা থেকে। রবিবার বিকেলে বলীদের জন্য ৪ ফুট উচ্চতায় প্রায় ১৫০ বর্গফুটের মঞ্চ বালির স্তরে তৈরি করা হয়েছে। সূর্য মাথার ওপর থেকে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে তখন প্রায় ৩টা। এ সময় অতিথি মঞ্চে উপস্থিত হলেন অতিথিরা। বিকেল সাড়ে ৩টায় সিএমপি কমিশনারের উদ্বোধনীর মধ্য দিয়ে সাধারণ বাউটে ৭৪ বলী অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে থেকে ৩৭ জন জয়ী হয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন বাউটে সামছু আর দিদার মিলে ক্ষেপণ করল ৩২ মিনিট। তবে শেষ ৫ মিনিট ছিল ঘোষণাকৃত সময়ের মধ্যে শেষ করার টার্গেট। তাই বলীর মঞ্চে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ নির্ধারিত হয়নি। দর্শকদের মানবিকতা কেড়ে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো টেকনাফের সামছু। জিতে নিলেন চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ও নগদ ২০ হাজার টাকা। আর রানার আপ রামুর দিদার বলী পরাজিত হয়ে ১৫ হাজার টাকা নগদ পেলেন বিচারকদের কাছ থেকে। এছাড়া আরও ৩৭ জন বলী নগদ ১ হাজার টাকা করে জুটিতে জেতার কারণে পেয়েছেন। সীতাকুন্ডের মহিউদ্দিন বলী একটি জুটিতে হেরেছেন কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিচারকদের মানবিকতার সুযোগ নিয়ে তিনিও ১ হাজার টাকা জিতেছেন। উল্লেখ্য, যদিও আয়োজকদের সংবাদ সম্মেলনের তথ্য অনুযায়ী ২শ’ বলী অংশ নেয়ার কথা কিন্তু শেষ পর্যন্ত শতকে পৌঁছায়নি। আর চ্যালেঞ্জিং বাউটে ৪ বলী সেমি ফাইনালে অংশ নেয়। এরা হলেন রামুর দিদার বলীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের হাবিব বলী। দুজনের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন বাউটে উঠে এসেছেন রামুর দিদার। অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অলির সঙ্গে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন টেকনাফের সামছু বলী। সেমি ফাইনাল থেকে উঠে আসা দিদার এবং সামছুর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন বাউট শুরু হয় বিকেল ৫টা ৪ মিনিটে। হাতের ওপর হাত রেখে পেশি শক্তির খেলা এক সময় জমে উঠেছে বাহুবলের মধ্য দিয়ে। দেহ শক্তিকে কাজে লাগাতে গিয়ে দিদার এগিয়ে গেলেও সময়ক্ষেপণের কারণে হেরে গেল দিদারের কৌশল। দফায় দফায় কুপোকাত করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে একে অপরের। দীর্ঘ প্রায় ৩২ মিনিট খেলার পর বিচারকরা অমীমাংসিতভাবে খেলা শেষ করতে না চাওয়ায় কৌশলের ওপর দক্ষতা বিচারে এনে টেকনাফের সামছুকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করলেন। তবে এক্ষেত্রে ৭ বছরের ইতিহাস ভেঙে দিয়েছে সামছু দিদারের। বিচারকদের সময়ক্ষেপণের কারণেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন রামুর দিদার বলী। যিনি সপ্তমবারের মতো চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে হটে গিয়ে রানার আপে নেমে এসেছেন। গত শনিবার থেকে যদিও শুরু হয়েছে আবদুল জব্বারের ১০৭তম ঐতিহাসিক বলী খেলাকে ঘিরে বৈশাখীমেলার আয়োজন। তিন দিনব্যাপী এ মেলা সোমবার এ খেলার সঙ্গে মেলা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। প্রতিবছরেই তিন দিনের মেলা গড়ায় ৭ দিন।
×