ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামসহ বড় বড় পাইকারি বাজারে

বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস বন্ধ ॥ অস্থির হতে পারে খাতুনগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস বন্ধ ॥ অস্থির হতে পারে খাতুনগঞ্জ

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশব্যাপী নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘটে নৌপথে সব ধরনের পণ্য পরিবহন সোমবার পর্যন্ত গত ৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে আমদানির পণ্যবাহী জাহাজের লাইন পড়েছে। মাদার ভেসেলসহ এসব জাহাজ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে বহির্নোঙ্গরসহ সাগরের সন্নিহিত বিভিন্ন পয়েন্টে। খাদ্যসহ আমদানির কোন পণ্য খালাস হচ্ছে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের একক বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। এর পাশাপাশি তা দেশের বড় বড় পাইকারি বাজারেও আঘাত হানতে শুরু করেছে। সমস্যা সমাধানে সরকার, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের বৈঠকে কোন সমঝোতা হয়নি। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে ধারণা দেয়া হয়েছে, আজ বুধবার পুনরায় বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সরকার ও মালিক পক্ষের কেউ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। প্রসঙ্গত, দেশের আমদানি পণ্যের ৭০ শতাংশ পরিবাহিত হয় নৌপথে। এসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেলসহ অন্যান্য বড় বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়ে থাকে। লাইটারিং কাজে জড়িত রয়েছে সহস্রাধিক ছোট ছোট জাহাজ। এসব জাহাজ এখন সম্পূর্ণ অলস অবস্থায় রয়েছে। অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশের ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি রমজানের আগে এ ঘটনা বাজারকে নেতিবাচক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে বলেও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বেতন বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে অভ্যন্তরীণ জলপথে পণ্য পরিবহনে। বিরূপ প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য লাইটারিংয়ের ক্ষেত্রে। ধর্মঘটের পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও এই অচলাবস্থা নিরসনের আলামত দৃশ্যমান নয়। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যেতে অনড় রয়েছে নৌপরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নৌযান শ্রমিকদের জন্য নতুন কাঠামো ঘোষণা ও তা গেজেট আকারে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে পিছু হটবেন না। এমন অনিশ্চিত অবস্থায় উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন আমদানি-রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে তার প্রভাব পড়তে পারে ভোগ্যপণ্যের বাজারেও। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বানে ১৫ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান ধর্মঘট শুরু হয় গত বুধবার রাত বারোটা থেকে। সোমবার ধর্মঘটের পঞ্চম দিন অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে একাধিক দফায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হলেও কোন সুরাহার পথ বেরিয়ে আসেনি। অগ্রগতি বলতে যা হয়েছে তা হলোÑ নতুন বেতন কাঠামো ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন। সোমবার চট্টগ্রামে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন আন্দোলনরত নৌযান ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ। এতেও সমাধান বেরিয়ে আসেনি। তবে আশ্বাস মিলেছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী প্রায় ৮ হাজার নৌযান রয়েছে। এছাড়া বালু ও স্বল্প আকারের পণ্যবাহী নৌযান আছে আরও প্রায় ৮ হাজার। এ সকল নৌযানে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। যেহেতু ইঞ্জিনচালিত সকল নৌযানই ধর্মঘটের আওতায় রয়েছে সেহেতু অভ্যন্তরীণ জলপথে কোন যানবাহনই চলছে না। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যাত্রীবাহী নৌযানগুলোকে ধর্মঘটের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। আন্দোলনের ফলে অর্জিত অগ্রগতি প্রসঙ্গে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের শীর্ষ পর্যায়ে এক নেতা জানান, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে এক বৈঠকে নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি হয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আশরাফুজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটির প্রতি আগামী ১০ মে’র মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো প্রস্তাব করার নির্দেশনা রয়েছে।
×