ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিশেষ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একই স্টাইলে রাবি শিক্ষক হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

বিশেষ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একই স্টাইলে রাবি শিক্ষক হত্যা

সংসদ রিপোর্টার ॥ দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি বিশেষ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীসহ নানা স্থানে একই স্টাইলে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যাকা- চালানো হচ্ছে। কিন্তু খুনী-ষড়যন্ত্রকারীরা কেউ-ই রেহাই পাবে না। দেশী-বিদেশী জঙ্গী-সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্র আমরা বানচাল ও ধূলিসাত করে যাচ্ছি, আগামীতেও করে যাব। যতগুলো এ ধরনের খুন হয়েছে সবই আমরা তদন্ত করে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি। সব ক্ষেত্রেই আসামিকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাইÑ বাংলাদেশে আইএস নামের কোন জঙ্গীগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই। সোমবার স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাসদের নাজমুল হক প্রধান ও সরকারী দলের পংকজ দেবনাথের দুটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব কথা বলেন। একই স্টাইলে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করার পরই কথিত আইএসের দায় স্বীকারের ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাইÑ বাংলাদেশে আইএসের কোনই অস্তিত্ব নেই। এসব হত্যাকা-ের পর যারাই গ্রেফতার হয়েছে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে তাদের কেউ আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তারা হোম গ্রোন (দেশে উদ্ভূত) কিছু জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে থেকে এসব তৎপরতা চালাচ্ছে। দেশী-বিদেশী কিছু গোষ্ঠী দেশকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করতে এসব করছে। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সকল ষড়যন্ত্র বানচাল করেছে, আমরা তাদের ষড়যন্ত্র ধূলিসাত করেছি। মন্ত্রী বলেন, এসব জঙ্গীগোষ্ঠী মাঝে মধ্যে মাথাচাড়া দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা নেয়। তাবেলা সিজার হত্যাকা-, নেভির মসজিদে আক্রমণ, শিয়া মসজিদের মুয়াজ্জিনকে হত্যা করাÑ এর সবই একটা পরিকল্পনার অংশ। আমরা সব চিহ্নিত করে সমস্ত জঙ্গীদের ধরেছি, যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা সবাই স্বীকার করেছে তারা আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। দেশেই এসব জঙ্গীর উত্থান। এখান থেকেই তারা এধরনের কর্মকা- করে যাচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যথার্থভাবেই এদের চিহ্নিত করেছে। জনগণ সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ পছন্দ করে না বলে তাদের নিয়ে আমরা জঙ্গীদের সব কিছুই ব্যর্থ করেছি। এজন্যই আমরা জঙ্গী দমনে সক্ষম হচ্ছি। তিনি আরও বলেন, জঙ্গী দমনে আমরা নিরাপত্তা বাহিনী ঢেলে সাজাচ্ছি। আমরা কাউন্টার টেররিজম নামে একটি নতুন ইউনিট চালু করেছি, যার দায়িত্ব থাকবে এ সমস্ত সন্ত্রাস, জঙ্গীদের নিয়ন্ত্রণ করা। আক্রমণ করার আগেই তাদের আস্তানা দখল করা, তাদের গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করা। এছাড়া সাইবার ক্রাইম নামে আর একটা ইউনিট গঠন করেছি। কাউন্টার টেররিজম আর সাইবার ক্রাইম বলেন সবই জঙ্গী দমনে করা হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েই আমরা সবকিছু পরিচালনা করছি। বিএসএফের হাতে ১৪৬ বাংলাদেশী খুন ॥ গত ৪ বছরে সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে ১৪৬ জন বাংলাদেশী হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত হত্যার শিকার হয়েছে ৫ জন। অন্যদিকে অবৈধ পারাপারসহ বিভিন্ন অপরাধের কারণে গত আড়াই বছরে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) হাতে আটক ৪২৩ ভারতীয় নাগরিককে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি আরও জানান, সীমান্ত হত্যা বন্ধের জন্য দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রাণঘাতী মারণাস্ত্রের পরিবর্তে সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবারবুলেট ব্যবহার করছে। ঢাকা কারাগার খুলে যাবে জনগণের জন্য ॥ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোঃ সেলিমের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাক্ষীস্বরূপ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তিনি জানান, নাজিমউদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন অনুযায়ী, জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। প্রতœতাত্ত্বিক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ করে সেখানে বিনোদনের জন্য একটি পার্কসহ কারা কর্মচারীদের কল্যাণে কনভেনশন সেন্টার, সিনেপ্লেক্স, সুইমিংপুল, জিমনেসিয়াম, ফুডকোর্ট, মাল্টিস্টোরিড কার পার্কিং ইত্যাদি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ সুবিধাগুলো সাধারণ জনগণও ভোগ করতে পারবে।
×