ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন ;###;খসড়াটি আইনে রূপান্তরের আগে বিচারপতিদের মতামত নেয়া বাঞ্ছনীয় ॥ আইনমন্ত্রী ;###;সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে এ আইন ;###;সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এ সংক্রান্ত প্র

বিচারক অপসারণ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

বিচারক অপসারণ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণে তদন্তের জন্য ‘বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন, ২০১৬’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খসড়াটি আইনে রূপান্তরের আগে বিচারপতিদের মতামত নেয়া বাঞ্ছনীয়। তিনি বলেন, আইনের এই খসড়ায় বিচারপতিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারীর জন্য শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অপসারণের (অভিশংসনের) ক্ষমতা সংসদের হাতে দিতে ২০১৪ সালে ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) আইন, ২০১৪’ করেছে সরকার। সেখানে অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি আইন করার কথা বলা হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী বিচারপতিদের অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের জন্য তদন্ত হবে। এছাড়া বিচারপতিদের বিরুদ্ধে কেউ মিথ্যা অভিযোগ করলে দু’বছরের জেল ও সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে খসড়া আইনে। তিনি বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে এ আইনটি করা হচ্ছে। ষোড়শ সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে বিচারপতিদের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত ও তদন্তের জন্য আইন করার বিধান রাখা হয়েছে। মূলত বিচারপতিদের অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের বিষয়টি তদন্তের জন্য আইনে আনা হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূত কোন বিষয় নেই। খসড়া আইনে বিচারপতিদের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে দু’টি কমিটির কথা বলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিচারপতিদের জন্য কিছু আচরণ বিধি তৈরি করা আছে। এর ব্যত্যয় হলেই মনে করা হবে তিনি অসদাচরণ করেছেন। বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রক্রিয়ার বিষয়ে আইনে বিস্তারিত বলা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, কোন ব্যক্তি কোন বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে অভিযোগ আনতে চাইলে তা সংসদের স্পীকারের কাছে লিখিতভাবে দাখিল করতে হবে। আবেদনে অসদারণ বা অসামর্থ্যের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। অভিযোগের নিচে অভিযোগকারীর সত্যপাঠ (অভিযোগ মিথ্যা নয় এ মর্মে) থাকতে হবে। অভিযোগের বিষয়ে কিভাবে জানলেন তা উল্লেখ করতে হবে। খসড়া আইন অনুযায়ী, স্পীকার অভিযোগ পাওয়ার পর এর প্রাথমিক সত্যতা নিরূপণে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ১০ জন নিয়ে একটি কমিটি গঠন করবেন। এরপর অভিযোগটি কমিটির কাছে পাঠাবেন। কমিটি গোপনীয়তা রক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে প্রাথমিক সত্যতা নিরূপণ করবে। তবে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা না পাওয়া গেলে কমিটি তা স্পীকারকে জানাবেন, তিনি (স্পীকার) এ প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দেবেন। আইন অনুযায়ী কোন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হলে সেই প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর জাতীয় সংসদে গোপন বৈঠক হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেই বৈঠকে উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন মনে করলে আরেকটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের সাবেক একজন বিচারপতি এ কমিটির চেয়ারম্যান হবেন। এছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশের একজন সম্ভ্রান্ত নাগরিক বা আইনজ্ঞ। এ ক্ষেত্রে এ্যাটর্নি জেনারেলের বয়স সর্বনিম্ন ৬৭ বছর হতে পারবে, অন্যদের বয়স ৬৭ বছরের বেশি হতে হবে। তদন্ত কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সিদ্ধান্ত কমিটির সিদ্ধান্ত বলে গণ্য করা হবে। কমিটি তদন্ত করতে সাক্ষ্য তলব, দলিল উপস্থাপনের জন্য বলাসহ এ ধরনের কার্যক্রম করতে পারবে। খসড়া আইন অনুযায়ী তদন্ত গোপনীয়ভাবে করা হবে। অভিযোগ গঠনের পর অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে। যদি মনে হয় বক্তব্যের ভিত্তি নেই তবে কমিটি স্পীকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। বক্তব্যের ভিত্তি থাকলে সংসদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে, যার প্রতিলিপি বিচারকের কাছে পাঠানো হবে। বিচারপতিদের শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের ক্ষেত্রে ভিন্ন একটি তদন্ত পদ্ধতির কথাও আইনে বলা হয়েছে, মেডিক্যাল বোর্ডের মাধ্যমে তিনি যদি আনফিট হন তবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। খসড়া আইনে জাতীয় সংসদে যখন অভিযোগ উপস্থাপন করা হবে, সংসদের কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় যে প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন বা অসত্য অভিযোগ করলে বড় দ-ের বিধান রয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ করলে দু’বছরের জেল ও অনুর্ধ ৫ লাখ টাকা জরিমানা হবে। এ আইন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করবে কিনা জানতে চাইলে- মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্বের কোন বিষয় নেই। প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ (অভিশংসন) করার সিসটেম আছে, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদেরও ইমপিচ করার বিধান আছে। এ বিষয়টি বিচারপতিদের জন্য ভিন্ন রকম ছিল। এ কাজটি নামে ছিল সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে। অনেক সময় দেখা গেছে, এজলাসে বসা অবস্থায় বিচারপতিকে ইমপিচ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আপনি আর নেই। এটি একটি ব্যালেন্সড আইন। বিচারপতিদের যাতে কোন ধরনের অসম্মান না হয় সেজন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা রেখে আইনটি করা হচ্ছে। এখন এটি নীতিগত অনুমোদন দেয়া হলো। আইনটি নিয়ে সশ্লিষ্টদের সঙ্গে আরও আলোচনার সুযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত ১৯৭২ সালের সংবিধানে ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অদক্ষতা, অযোগ্যতা, দুর্নীতিসহ অসদাচরণের কারণে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ছিল। ওই সংবিধানের ৯৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা ছিল, প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের ভোটে সমর্থিত প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ করা যাবে। আর ৯৬ (৩) অনুচ্ছেদে বলা ছিল, অপসারণের প্রস্তাব সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কিন্তু সংবিধানের এই বিধানের আলোকে কোন আইন প্রণয়ন করতে পারেনি তৎকালীন সংসদ। এর মধ্যেই দু’বার সংশোধন হয়েছে সংবিধান। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে ৯৬ (২) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের পরিবর্তে সরাসরি রাষ্ট্রপতির হাতে দিয়ে দেয়া হয়। আর আইন-সংক্রান্ত ৯৬ (৩) অনুচ্ছেদটি বিলুপ্ত করা হয়। ১৯৭৭ সালে বিচারকদের অপসারণের পদ্ধতিতে আবার পরিবর্তন আসে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এক সামরিক আদেশে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাত থেকে নিয়ে গিয়ে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে দিয়ে দেয়া হয়। পরে ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১০ সালে আপীল বিভাগ পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করলেও সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে অনুমোদন দিয়েছিল। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাহাত্তরের সংবিধানের অনেক বিষয় ফিরিয়ে আনা হলেও সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি রেখে দেয়া হয়। সুপ্রীমকোর্টের জমি নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে দেয়া হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে ২০১২ সালের ২৯ মে তৎকালীন স্পীকার আবদুল হামিদ সংসদে বলেছিলেন, দেশের মানুষের বিচারের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর লেগে যাবে আর নিজেদের বিষয় বলে বিচার বিভাগ ঝটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন, এটি ভাল দেখায় না। আদালতের রায়ে ক্ষুব্ধ হলে জনগণ বিচার বিভাগের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াতে পারে। এরপর হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে স্পীকারের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এরপরই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা জনপ্রতিনিধিদের হাতে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন। আইন কমিশনও বিচারপতিদের আপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়া বিষয়ে মতো প্রকাশ করেন। পরে ২০১৪ সালে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা আবার সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়। একইসঙ্গে ’৭২-এর মূল সংবিধানের বিধান হুবহু প্রতিস্থাপন করা হলেও ৯৬(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হয়নি। দু’বছর ধরে বিষয়টি পড়েছিল। এ নিয়ে আইন কমিশন ও আইন মন্ত্রণালয় দুটি খসড়া বিল প্রণয়ন করে। এ বছরের শুরুর দিকে আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে বিলের খসড়াটি তার হাতে দেন। খসড়া সম্পর্কে বিচারকদের অভিমতও জানতে চান আইনমন্ত্রী। সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি মামলা হয়েছে। একটি বৃহত্তর বেঞ্চে মামলার শুনানিও হয়েছে। আগামী ৫ মে রায়ের জন্যও বিষয়টি ধার্য রয়েছে। মামলা বিচারাধীন থাকায় সুপ্রীমকোর্ট এ বিষয়ে কোন মতামত পাঠানো থেকে বিরত থাকে। এদিকে বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভা অনুমোদিত ‘বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’-এর খসড়াটি আইনে রূপান্তর করার আগে এ বিষয়ে বিচারপতিদের মতামত বাঞ্ছনীয় বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। এ আইনের খসড়ায় বিচারপতিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারীর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা আইনের খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দেয়া মানে এই না, ওনারা (বিচারপতি) কোন পরিবর্তন চাইলে তা হবে না। যুক্তিসঙ্গত পরামর্শে পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে। এ রকম আইনে তাদের (বিচারপতিদের) মতামত নেয়ার বাধ্যবাধকতা আইনে নেই। কিন্তু এটা যেহেতু তাদের ব্যাপার, তারাই একমাত্র স্টেকহোল্ডার, তারা (বিচারপতিরা) পাবলিকলি এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন না। সেহেতু আমি মনে করি, তাদের অভিমত নেয়াটা বাঞ্ছনীয়। এর আগে খসড়াটি তাদের কাছে দেয়া হলেও বিচারপতিরা কোন মতামত দেননি। তবে তাদের মতামতের অপেক্ষায় থাকবেন বলেও জানান আইনমন্ত্রী। মিথ্যা অভিযোগের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, যদি কেউ কোন মিথ্যা অভিযোগ করেন এবং সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে তারও শাস্তির বিধান রয়েছে। এটি দুই বছর পর্যন্ত কারাদ- হতে পারে। আইনমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তার নাম উল্লেখ এবং ঘটনার সত্যতার দায়িত্ব নিয়ে অভিযোগ করতে হবে। কোন কারণে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীকে শাস্তি পেতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকেও যদি কেউ অভিযোগ করেন তার ক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য। আনিসুল হক বলেন, গত ২ মার্চ আইন কমিশনের এ খসড়াটি প্রধান বিচারপতির কাছে আমি নিজ হাতে তুলে দিয়েছি এবং আনুষ্ঠানিকভাবেও পাঠিয়েছি। ওখান থেকে কোন মতামত না আসায় একটা রিমাইন্ডার দিয়েছিলাম। তার জবাবে তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে একটি মামলা হয়েছে। যেহেতু এ মামলা এখন চলছে এবং আগামী ৫ মে রায় হবে, সেহেতু এ আইনের ব্যাপারে আমরা অভিমত দিতে পারি না। সেটাকে সম্মান করি। সোমবার মন্ত্রিসভা থেকে এ আইনের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে বিচারকদের অভিমত নেয়ার যে সুযোগ ছিল, তা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তারাই যেহেতু একমাত্র স্টেকহোল্ডার, আইনটাই করা হচ্ছে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের ব্যাপারে, তাই তাদের সঙ্গেই আমরা আলাপ-আলোচনা করব। তারা যে সাজেশন দেন, তা নিশ্চয়ই আইন প্রণয়নের সময় বিবেচনা করব। আইনমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের আইন অনেকদিন আগে করা উচিত ছিল। করা হয়নি। এর ফলশ্রুতিতে আমাদের ১৯৭২ সালের সংবিধানে যখন ৯৬ অনুচ্ছেদ যখন ছিল, ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কোন সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিকে রিমুভ করা হয় নাই। কিন্তু ১৯৭৬ সালের পর থেকে অন্ততপক্ষে ৮-৯ জন বিচারপতিকে অপসারণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বিচারপতি কেএম সোবহান, বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি এসএম হোসেন- এ তিনজনকে বলা হলো- ‘আজ থেকে আপনারা তিনজন বিচারপতি নন। হয় পদত্যাগ করুন, নইলে চাকরি খাবো’। এ হুমকি তাদের দেয়া হয়েছিল। আবার বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। সকালে তার এজলাসে মামলা চলছে। রেজিস্ট্রার সাহেব আইনজীবীরা যেখানে দাঁড়ান, সেখানে গিয়ে তাকে একটা ফোন করা হলো কোথা থেকে- ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আজকের পত্রিকা তিনি পড়েছেন কি-না। যদি পড়ে থাকেন, উনি কি আছেন?’ তখন রেজিস্ট্রার প্রধান বিচারপতিকে গিয়ে বললেন, ‘আপনি আজকে একটু এডজর্ন করুন।’ তিনি বুঝতে পেরেছেন। কারণ, রেজিস্ট্রার এসে জিজ্ঞাসা করছেন। এরপর কোর্ট এডজর্ন করে তার খাস কামরায় গিয়ে তাকে পত্রিকাটা দেয়া হলো। ‘মার্শাল ল’র আজকে যে আইনটা করা হয়েছে, এটা পড়ে আপনি একটু দেখুন, আপনি আছেন কি-না?’ সেটা পড়ে দেখা গেল তিনি নাই। সেদিনের স্মৃতিচারণ করে আইনমন্ত্রী বলেন, আমারও সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য- আমার বাবা তখন সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তাকে খবর দিয়ে দ্রুত এ্যারেঞ্জমেন্ট করে প্রধান বিচারপতিকে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হলো। এটা হচ্ছে, কোন ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অসম্মান করে বিদায় করা। এটা হচ্ছে, দি হাইট অব আর্বিট্রেইনেস। তিনি বলেন, আমরা মনে করলাম যে, বিচারপতিদের অসম্মান করতে আর দেয়া যেতে পারে না। তাদের অধিকার সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের। আনিসুল হক বলেন, এ আইনের খসড়ায় অভিশংসনের কথা বলা হচ্ছে না। প্রমাণিত অসমর্থতা আর অসদাচারণের ক্ষেত্রে তাদের বিদায় করার কথা বলা আছে। পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি জানান, এ আইনের মধ্যে আছে প্রথমে স্পীকারের কাছে একজন নালিশ করবেন। স্পীকার ১০ জন সংসদ সদস্যকে নিয়ে একটা প্রাথমিক তদন্ত করাবেন। সে তদন্তে যদি প্রমাণিত হয়- এটার কোন ভিত্তি নেই, তাহলে এটা আর এগোবে না। তবে ভিত্তি আছে মনে হলে তিনি এটা সংসদে আলাপ-আলোচনা করবেন। যেহেতু এটা একজনের মান-সম্মানের ব্যাপার, দরকার হলে সংসদে ক্যামেরা আলোচনায় হবে। এরপর তদন্তের কথা পাস করা হলে একটা স্বাধীন তদন্ত সংস্থা গঠন করা হবে। যেখানে একজন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি, একজন প্রাক্তন এ্যাটর্নি জেনারেল এবং একজন সুশীল সমাজের সদস্য থাকবেন। এখানে কোন এমপি নাই, সরকারেরও কেউ নাই। এ তদন্তের সময় যে বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তার লিখিত এবং উপস্থিত হয়ে মৌখিক বক্তব্য দেয়ার সুযোগ থাকবে। এ তদন্ত শেষ হওয়ার পর তা সংসদে যাবে। সংসদেও ওই বিচারপতির লিখিত এবং মৌখিক বক্তব্য দেয়ার সুযোগ থাকবে। তার মানে প্রতিটি ধাপে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকবে। এবং তারপর অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংসদে দ্বিতীয়বার আলোচিত হবে। সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য যদি মনে করেন, ওই বিচারপতিকে অপসারণ করা হবে, সেই প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতি তাতে স্বাক্ষর করলে তিনি অপসারিত হবেন।
×