ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রওশনের বক্তব্যেও জবাবে এরশাদ

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

রওশনের বক্তব্যেও জবাবে এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দল পরিচালনায় এরশাদের সাম্প্রতিক সকল সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক উল্লেখ করে বিরোধী দলের নেতা রওশনের সংবাদ সম্মেলনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিলেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রবিবার জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে ২১ জন সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাপার আসন্ন কাউন্সিল পেছানো এবং পার্টির গঠনতন্ত্র থেকে ৩৯ ধারা বাতিলের দাবি জানিয়ে এরশাদের সহধর্মিণী রওশন বলেন, তার (এরশাদ) অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের কারণে দল আজ ছোট হচ্ছে। গণতন্ত্র অনুসরণ করে চালাতে হবেÑ এমন দাবি করে রওশন বলেন, এ পার্টি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা কোম্পানি নয়। নিজ দলের মাঝে যদি গণতন্ত্র চর্চা না থাকে দেশের গণতন্ত্রের কথা বলা যায় না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হওয়ার পরিবর্তে দিনকে দিন দুর্বল হচ্ছে, যে কারণে ইউপি নির্বাচনে আমাদের ভরাডুবি হচ্ছে। ৩৯ ধারার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ ধারা ব্যবহার করে যখন ইচ্ছা যাকে তাকে দল থেকে বের করে দেবে, পদোন্নতি দেবেÑ এভাবে দল চলতে পারে না। সোমবার স্ত্রীর এরকম বক্তব্যের জবাবে এরশাদ বলেন, সোমবার বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় এবং জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির অগণিত নেতাকর্মী এবং দেশবাসীর মধ্যে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছেÑ তা অবসানের লক্ষ্যে আমার বক্তব্য তুলে ধরছি। প্রথমেই জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতাকে মনে রাখতে হবে যে, সংসদীয় দল পার্টির একটি শাখা মাত্র। এই শাখার দায়িত্ব পার্টির নীতিমালা অনুসারে শুধুমাত্র সংসদীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা। নীতিনির্ধারণী কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা বা পর্যালোচনার ফোরাম হচ্ছে পার্টির প্রেসিডিয়াম। সুতরাং রওশন এরশাদ সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য রেখেছেনÑ এই ফোরামে এটা তার এখতিয়ার বহির্ভূত। তিনি পার্টিকে কারও ‘একক সম্পতি বা কোন কোম্পানি নয়’ বলে সংগঠনকে হেয় করেছেন। জাতীয় পার্টি একটি গঠনতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত এবং নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই গঠনতন্ত্র কোন বিশেষ ব্যক্তির আরোপিত বিষয় নয়। এটি জাতীয় পার্টির গণতন্ত্রের দলিল, যা পার্টির প্রতিষ্ঠাকালে জাতীয় কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এ গঠনতন্ত্রের একটি শব্দও পরিবর্তন করতে হলে জাতীয় কাউন্সিল থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এটাই হচ্ছে দলীয় গণতন্ত্রের ধারা। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে আমার সৃষ্টি করা নয়। এটা জাতীয় কাউন্সিলে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি ধারা। এই ধারা সম্পর্কে পার্টির কারও কোন আপত্তি থাকলে তা শুধুমাত্র জাতীয় কাউন্সিলেই উত্থাপন করা যেতে পারে। কাউন্সিল ভোটের মাধ্যমে এই ধারা বাতিল বা বহাল রাখার রায় দিতে পারে। তার আগে, যা গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটাকে ‘অগণতান্ত্রিক’ ধারা বলাটাই দলীয় গণতন্ত্রকে অবমাননা করা। এই ধারাবলে রওশন এরশাদকেও দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই ধারাবলে যারা ১৫-১৬ বছর দলের বাইরে ছিলেন তাদেরও দলে ফিরিয়ে এনে প্রেসিডিয়াম পদ দেয়া হয়েছে। পার্টির বর্তমান প্রেসিডিয়ামের অন্তত ৩৫ জন সদস্যই ৩৯ ধারা বলে প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ৩৯ ধারা যখন কারও পক্ষে যায়, তখন এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী ধারা হয়ে যায়। আর যখন ব্যক্তি স্বার্থের বিপক্ষে যায় তখন এটা ‘অগণতান্ত্রিক’ হয়ে পড়েÑ এই মানসিকতা থাকা উচিত নয়। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকরা তা গ্রহণ করবে না। এরশাদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টির কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা একক কোন সিদ্ধান্ত ছিল না। নির্বাচন কমিশন থেকে দুইবার সময় নেয়ার পর এবং তারপর সকলের মতামতের ভিত্তিতে দুইবার তারিখ পরিবর্তনের পর প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী ভেন্যু ভাড়া করা হয়েছে, প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে, ঢাকার বিদেশী মিশনসমূহে পত্র দিয়ে দাওয়াতও দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় ১৪ মে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পার্টির কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। এটা ঠিক যে, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ভাল ফল করতে পারেনি। তার পেছনে অন্যসব কারণের পাশাপাশি গত ২ বছরে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার দুর্বলতাও দায়ী ছিল। রওশন এরশাদ বিভিন্ন দলে চলে যাওয়া কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে বলেছেনÑ ‘পার্টির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তাদের হারিয়েছি।’ এ প্রসঙ্গে বলতে চাই যে, যেসব নেতা দল ছেড়ে চলে গেছেন তারা প্রত্যেকেই বিএনপি বা আওয়ামী লীগের মতো দল থেকে জাতীয় পার্টিতে এসেছিলেন। ওই সব দলের ভুলের কারণেই কি তারা দল ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে এসেছিলেন? জাতীয় পার্টি যখন ক্ষমতায় ছিল এবং তারা যখন উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রী, বা মন্ত্রী হতে পেরেছিলেন তখন মনে হয় দলের কোন ভুল ছিল না। যখন ক্ষমতায় ছিলাম না তখনই যেন পার্টির ভুল হয়ে গেল! আর তারা সুবিধার লোভে অন্য দলে চলে গেলেন। এসব সুবিধাভোগী নেতাদের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা কিভাবে গ্রহণ করবেন? রওশন এরশাদ কোন্ গণতন্ত্র অনুসারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানালেন তা স্পষ্ট করে বলুন? দল ভাগ করা কিংবা উপদল সৃষ্টি করা কি দলীয় গণতন্ত্রের আওতায় পড়ে? তাকে বলতে হবে এ পর্যন্ত কোনটা দলীয় গঠনতন্ত্রের বাইরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে? এরশাদ বলেন, ‘পরিশেষে আমি সকল ধরœের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অবসান ঘটিয়ে সকলের অবগতির জন্য সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, জাতীয় পার্টি সম্পূর্ণভাবে একটি গণতন্ত্র চর্চার রাজনৈতিক দল। এই দলে গঠনতন্ত্রের বাইরে কখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি; আর হবেও না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলাসমূহের সম্মেলন সমাপ্ত করে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ১৪ মে ২০১৬ শনিবার, রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। নির্দিষ্ট তারিখে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’
×