ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোমরের মাংস পেশির আধুনিক চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

কোমরের মাংস পেশির আধুনিক চিকিৎসা

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক লোক জীবনের কোন না কোন সময় কোমর ব্যথায় ভুগে থাকেন। ঠিক এমনই একজন রোগী ৪৩ বছর বয়সী আজিজুল ইসলাম প্রামাণিক। কাজ করেন গার্মমেন্টস কোম্পানিতে লাইন চিফ হিসেবে। গত ১৭ মাস ধরে তার কোমরের ডান দিকে ব্যথা। ব্যথা কোমর থেকে বাম পায়ের গোড়ালিতে আসে। বসে থাকলে হাঁটুর নিচের মাংসে ব্যথা পায় এবং ঝিঁঝি করে। দাঁড়ালে ব্যথা গ্লুটিয়াল মাংস থেকে থাইয়ের পেছন দিকে নামতে থাকে এবং ঝিঁঝি করে। দাঁড়ালে কষ্ট অনেক কম বোধ করে। বাম পায়ের এসএলআর টেস্ট পজেটিভ। উপুর হয়ে শুয়ে হাতে চাপ দিয়ে মাথা-কাঁধ উঠালে বাম দিকের গ্লুটিয়াল মাসেলে ব্যথা হয়। একই অবস্থায় দুহাত কোমরের ওপর রেখে মাথা ও কাঁধ উঠালে কষ্ট আরও বেড়ে যায়। কিন্তু একই ভঙ্গিতে থেকে রেজিস্টেন্স বা বলের বা শক্তির বিপরীতে মাথা ও কাঁধ উঠালে কোন কষ্টই থাকে না। এই রোগীর মাংসের (সোয়াস, ইরেক্টো স্পাইনি এ্যাবস, টিভিএস এবং মাল্টিফিডাস) শক্তি কিছুটা কমে গেছে এবং সফ্ট টিস্যুর লেন্থও কমে গেছে। তার এমআরআই-তে দেখা গেছে, এল৩-৪-৫ ডিস্ক হার্নিয়েশন এবং ঐ লেভেলে নার্ভ রোট কম্প্রেশন আছে। এক্স-রে রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্রেট১ রেক্টোলিসথিসিস এল৩ ওভার এল৪। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ব্যথা যদি অনেক দিনের হয় তখন প্রেসক্রিপশন মেডিসিনের ব্যথার ওষুধে সাধারণত ব্যথা কমে না। আমার দীর্ঘ তিন যুগের চিকিৎসার অভিজ্ঞতায় দেশে-বিদেশে দেখেছি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এই রোগীর জন্য অত্যন্ত উপকারী। ফিজিওথেরাপি মোডালিটিসের আল্ট্রাসাউন্ড, লেজার, ওয়াক্সপ্যাক স্ট্রোকিং, স্ট্রেসিং, স্ট্রেন্দ্রেনিং, স্ট্যাবেলাইজেশন, মায়োফেসিয়াল রিলিজ এবং পরিশেষে, মাসেল এ্যাক্টিভেশন চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকরী। খাদ্য তালিকায় একটু পরিবর্তন আনতে হবে যেমনÑ প্রচুর পানি বা জুস, চেরিফল দিনে ৬টা, দিনে ২ গ্লাস দুধ খেতে হবে (খাবারের ১ ঘণ্টা পূর্বে অথবা খাবারের ২ ঘণ্টা পরে দুধ খাবেন)। দুধের বিকল্প হিসেবে তিলভর্তা খেতে পারেন। ২ চা চামচের আদার রস নিয়মিত খাবেন, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কাপ উষ্ম পানি খাবেন, পূর্ণ সিদ্ধ ডিম প্রতিদিন ১টি করে খেতে হবে, সেসঙ্গে প্রতিদিন গড়ে একটানা ৮ ঘণ্টা ঘুমালে এই রোগ থেকে আরও দ্রুত আরোগ্য পাওয়া যায়। বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আমরা যারা উপরোক্ত কষ্টে (কোমর ব্যথায়) ভুগছি তাঁরা যেন অতি শীঘ্রই সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। কেননা দেরিতে চিকিৎসা নিলে আমাদের কষ্ট আরও বেড়ে যেতে পারে, কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেক বেশি সময় লাগতে পারে, আরও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতা হতেই পারে, জীবনের অনেক মূলবান সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং অনেক আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। কোমর ব্যথার চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা অবশ্যই ভাল। সেজন্য সামনে ঝুঁকে এবং সামনে ঝুঁকে ও ডানে-বামে বাঁকা হয়ে কাজ করার সময় বেশি সতর্ক থাকবেন এবং পেটের মাংস শক্ত করে কাজ করবেন। প্রতিদিন জীবনে কাজকর্ম এবং চলাফেরায় সঠিক ভঙ্গি মেনে চলবেন। একই অবস্থায় বেশিক্ষণ কাজ করবেন না। মাংসের ট্রিগার পয়েন্ট রিলিফ করুন। সঠিক খাদ্যাভাস মেনে চলবেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক বিছানায় সঠিক নিয়মে ঘুমাবেন। ধকল বা কঠিন চাপ মুক্ত থাকুনÑ বি রিলাক্স। কোমরের মাংসের নিয়মিত স্ট্রেসিং ও স্ট্রেন্দেনিং করুন। ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী এক্সারসাইজ করুন। ধূমপান বর্জন করুন। ফিজিওথেরাপি বিজ্ঞানী এবং নন সার্জিক্যাল সলিউশন ফর দ্য স্পাইনের বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও এমন ওষুধ তৈরি হয় নাই যে ওষুধ খেলে আপনার দীর্ঘদিনের ব্যথা কমে যাবে, আপনার মাংসপেশি লম্বা হবে, শক্তিশালী হবে এবং আপনার জয়েন্ট মবিলিটি বেড়ে যাবে। তবে ফিজিওথেরাপি বা এক্সারসাইজ-ইজ এ মেডিসিন যা আপনাকে ওই কষ্টগুলো থেকে মুক্তি দেবে। সুতরাং সম্পূর্ণ চিকিৎসা পেতে হলে আপনাকে সঠিক মোবালাইজেশন, মেনুপুলেশন, স্ট্রেসিং এবং স্ট্রেন্দেনিংয়ের মতো চিকিৎসা করতেই হবে। প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার পান্থপথ, ঢাকা। ০১৭৬৫ ৬৬ ৮৮ ৪৬, ০১৭৮৫ ৯৯ ৯৯ ৭৭
×