ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আলুু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে ॥ নিয়ন্ত্রণেও বাধা

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

আলুু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে ॥ নিয়ন্ত্রণেও বাধা

ডায়াবেটিস ও আলু একটি বহুল আলোচিত বিষয়। এ আলোচনার বহুমাত্রিক কারণ আছে। শুরুতে ডায়াবেটিস নিয়ে সম্যক আলোচনা করা যাক। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের শক্তির জন্য প্রয়োজন গ্লুকোজ। খাবার খাওয়ার পর জটিল বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া গ্লুকোজ রক্তের মাধ্যমে শরীরের কোষ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এ গ্লুুকোজ কোষে প্রবেশ করার পর শক্তির উৎস হিসাবে কাজ করবে। তবে গ্লুকোজ কোষের ভেতরে প্রবেশের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় চাবি হলো ইনসুলিন নামক প্রোটিন হরমোন, যা অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হবার পর রক্তবাহিত হয়ে কোষের আবরণী পর্যন্ত পৌঁছে জৈব রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলস্বরূপ কোষের রুদ্ধদুয়ার খুলে দেয়। আর তারপরই গ্লুকোজ পৌঁছে যায় কোষের ভেতরে, শক্তি জুগিয়ে উজ্জীবিত করে তোলে দেহকে। কিন্তু যদি কোন কারণে গোলযোগ দেখা দেয় অগ্ন্যাশয়ে যার ফলে ইনসুলিন আর ঠিকমতো নিঃসৃত হতে পারে না, বা কোষীয় আবরণের কাছাকাছি পৌঁছে ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, তবে কোষে গ্লুকোজের জোগান ব্যাহত হয়; রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে থাকে, শক্তির অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে কোষ। মোদ্দা কথা অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেলে তখনই শরীরের ভেতর নানা জৈব-রাসায়নিকের বিপাকীয় কর্মকা-ের হেরফের হয়। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে ইনসুলিননির্ভর (ইনসুলিন ডিপেনড্যান্ট ডায়াবেটিস মেলাইটাস) ডায়াবেটিক মেলাইটাস বা টাইপ১ ডায়াবেটিস হয়। অন্যান্য দেশে টাইপ১ ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা মোট ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যার ১০% থেকে ১২%। আমাদের দেশে এর হার ৩%- ৮% এর মতো। অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় কিছুটা কম ইনসুলিন নিঃসরণ হলে বা প্রতিবন্ধকতার কারণে ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে হয় টাইপ২ ডায়াবেটিস মেলাইটাস (ইনসুলিন ইনডিপেনড্যান্ট ডায়াবেটিস মেলাইটাস)। আমাদের দেশে এটিই প্রধান ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস ও আলু মূলত শর্করা জাতীয় খাবারের জন্যই খাদ্য হিসেবে আলু ও ভাত আমাদের কাছে সমাদৃত। ছোলাসহ ১০০ গ্রাম আলুতে থাকে ৮০ ক্যালরি। শর্করা ১৯ গ্রাম, পানির পরিমাণ ৭৫ গ্রাম, আমিষ ২ গ্রাম, চর্বি ১০ মি. গ্রাম. ফাইবার ২.২ গ্রাম। আলুতে ভিটামিন সি বেশি-২০ মি. গ্রাম/১০০ গ্রাম, থায়ামিন, রিবফ্লেভিন, নায়াসিন, বি-৬, যথাক্রমে-০.০৮, ০৩, ১.১ ও ২৫ মি. গ্রাম। ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস যথাক্রমে ১২, ১৮, ২৩, ৫৭ মি. গ্রাম। পটাশিয়াম বেশি ৪২১ মি. গ্রাম, সোডিয়াম ৬ মি. গ্রাম। ৫০% এর বেশি খাদ্য উপাদান মূল আলুতে থাকে। অধিকাংশ আলুর খাবারই গরম পরিবেশিত হয়, যা অধিকতর স্বাস্থ্যসম্মত। শর্করার পরিমাণ ভাতে আলুর চেয়ে বেশি। কিভাবে খাবার সরবরাহ করা হয় তার উপরেও ঐ খাদ্যের ক্যালরির মাত্রা নির্ভর করে। রকমারি পরিবেশনার জন্য আলুর ক্যালরি তারতম্য হয়। ডায়াবেটিস ও আলু : ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। ভাত, আলু ইত্যাদি কমপ্লেক্স কার্বহাইড্রেট বেশি পরিমাণে খাওয়া যায়। চর্বি জাতীয় খাবার চিনি ও গ্লুকোজ না খাওয়া ভাল। দুধ, মাংস, মাংস জাতীয় খাবার যত কম তত ভাল। কোন খাবার খেলে রক্তে কতটুকু গ্লুকোজ বাডবে ঐ খাবারের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স দিয়ে তা বোঝা যায়। সে খাবারের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স যত বেশি সেই খাবার তত বেশি গ্লুকোজ বাডায়। ভাতের চেয়ে আলুর ইন্ডেক্স বেশি। লাল চালের ভাত, মধু, আলু পাকা কলা, পাকা আম, গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ৮০ থেকে ৯০। সাদা চালের (পোলিশড) ভাত, কর্ন, ফ্লেকস, আইসক্রিমের ইনেডেক্স ১০০। আলু, গাজর, এ্যাপিকটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৮০-৯০, গম, শিমের বিচির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭০-৭৯, কমলার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৪০-৪৯, আপেল, ফ্যাট ফ্রি দুধ -এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৩০-৩৯। যারা বেশি করে আলু খান তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আলু বা ভাত খেলে রুটি বা পাউরুটির মতো শর্করা হিসেবে নিতে হবে। আলু অতি দ্রুত রক্তের সুগার বাড়িয়ে দেয়। আলু ভাতের চেয়ে বেশি সুগার বাড়ায়। তাই তরকারি বা সবজি হিসেবে আলু খেলে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত রক্তের গ্লুকোজ কমাবার কোন পদক্ষেপ নেয়া থেকে আমরা বিরত থাকবো, এটি মোটেও কাম্য নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বৃহদাকার গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত আলু খান তাদের ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি, যারা আলু জাতীয় খাবার কম খান তাদের তুলনায় কমপক্ষে ৫০% বেশি। এ ঝুঁকি আবার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেলে সবচেয়ে বেশি। খাদ্য তালিকা থেকে আলু বাদ দিয়ে এক বছরে দুই তৃতীয়াংশ মানুষকে ডায়াবেটিস থেকে দূরে রাখা সম্ভব হয়েছে। সঙ্গতভাবেই আমাদের ভাবতে হচ্ছে, আলু কোন সবজি নয়; আলু ভাতের চেয়েও বেশি মাপের শর্করা। ডাঃ শাহজাদা সেলিম এমবিবিএস, এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম), এমএসিই (ইউএসএ) সহকারী অধ্যাপক এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় মোবা : ০১৭৩১৯৫৬০৩৩
×