ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ভার্জিলের মহাকাব্য ‘এনইড বুক সিক্স’

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

ভার্জিলের মহাকাব্য ‘এনইড বুক সিক্স’

বড় বড় কবির কাছে কি অন্য কবিদের কাব্য অনুবাদের কাজটা খুব একটা উপভোগ্য ব্যাপার? এর উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ এবং না। ‘বিওউলফ’ এক প্রাচীন ইংরেজী মহাকাব্য। ৩১৮২ লাইনের এ কবিতাটি প্রাচীন ইংরেজী সাহিত্যের সবচেয়ে লম্বা কবিতা। সিমাস হিনি সেই কবিতাটি অনুবাদ করে বহুল প্রশংসিত হয়েছিলেন। তার অনূদিত কাজটি ১৯৯৯ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। পরে তিনি স্বীকার করেন যে কাব্যটি অনুবাদ করতে গিয়ে তার মনে হয়েছিল তিনি যেন সশ্রম কারাদ-প্রাপ্ত একজন কয়েদি। তার মৃত্যুর তিন বছর পর আজ আমরা পাঠ করার সুযোগ পেতে চলেছি তারই অনূদিত আরেকটি মহাকাব্যের খ-িত অংশের। সেটি প্রাচীন রোমান কবি ভার্জিল রচিত ‘এনইড’। ‘বিওউলফ’ ছিল এক অজ্ঞাতনামা এ্যাংলো-স্যাক্সন কবির রচিত কাব্য। তার সঙ্গে ‘এনইউ’ এর পার্থক্য এটি লাতিন ভাষায় রচিত কাব্যই শুধু নয় উপরন্তু এই কাব্য সুমিষ্ট সুললিত ছন্দে নিত্য বহমান। ফাদার মাইকেল ম্যাকগ্লিঞ্চের লাতিন ক্লাসের ছাত্র থাকার সময় থেকেই হিলি ‘এনইউ’র ষষ্ঠ পর্বের প্রতি তীব্র মুগ্ধতা পোষণ করে আসছিলেন। এর বিষয়বস্তু সর্বক্ষণ তাকে তাড়া করে ফিরত। সেখানে অলৌকিকভাবে সোনার বৃক্ষশালা ভেঙ্গে নেয়ার কথা আছে। শ্যারনের বিষণœ বজরার কথা আছে। পাতালে নেমে এনইয়াসের বকবকিয়ে পিতা এলাইসের ছায়ার সঙ্গে সাক্ষাতের অন্বেষার কথা আছে। ১৯৮৬ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডের গবাদিপশু ব্যবসায়ী তার বাবার মৃত্যুর কারণে কাহিনীর ওই ঘটনাগুলো হিলির মনকে আরও তীক্ষèভাবে বিদ্ধ করেছে। ২০১০ সালে হিলি ভার্জিলের মহাকাব্যের এ অংশটি নিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে লেখালেখি করতে শুরু করেন। ২০১৩ সালে মৃত্যুর আগে প্রকাশিত হয় তার শেষ পূর্ণাঙ্গ কাব্য সংগ্রহ ‘হিউম্যান চেইন’। এতে রয়েছে ‘রুট ১১০’ নামে কিছু অনুক্রমিক কবিতা, যা তার এই নাতনির জন্ম উদযাপনের জন্য রচিত হয়নি। এতে ভার্জিলের ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ থেকে কিছু কিছু ঘটনাÑ তীর্যকভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। হিলির অনূদিত ভার্জিলের মহাকাব্য ‘এনইড বুক সিক্স’ আগামী মাসে আমেরিকায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। প্রকাশনা সংস্থা ফেবার এ্যান্ড ফেবার। যিনি মৃত্যুর তিন বছর পর তার অনূদিত কাব্যগন্থ প্রকাশ করতে পারা প্রায় অলৌকিক ঘটনা বলে মনে হয়। ব্যাপারটা এমন যে মৃত্যুর পরও হিলি পাঠকদের অমূল্য জিনিস উপহার দিতে সক্ষম। তার এই অনুবাদকর্মটি হিলি শেষ করেছিলেন সেই ২০১০ সালে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থে তার এই অনুবাদকর্মের একটি ট্রান্সক্রিপ্টও যোগ করা হয়েছে যার ওপর তিনি লিখে রেখেছিলেন চূড়ান্ত। এমনকি অনুবাদকের কথাটাও তৈরি করা হয়েছিল সেই ২০১০ সালের প্রথমদিকে। ফেবারের অনুপক্ষ উপস্থাপনায় হিলির এ কথাগুলো মুখবন্ধ হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে। সেই সঙ্গে আছে হিলির কন্যা ক্যাথরিন হিলির সম্পাদকীয় মন্তব্য এবং ম্যাথ হোলিসের এপিগ্রাফ। সম্ভবত হিলি বেঁচে থাকলে তার অনুবাদকর্মটি আরেকবার রিভিশন দিয়ে নিতেন। ক্যাথরিন ‘এনইড’কে এমন এক পরশমণি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সেটার কাছে তার বাবা বারবার ফিরে যাবেন। কাব্যগ্রন্থটির প্রকাশনা তার প্রয়াত পিতার স্মৃতির প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন বলে মন্তব্য করেছেন বিদºজনরা। সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×