ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পটুয়াখালীর মুক্তিযুদ্ধে কালো দিন

২০ হাজার মানুষের রক্তে ভেজা দিন আজ

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৬ এপ্রিল ২০১৬

২০ হাজার মানুষের রক্তে ভেজা দিন আজ

শংকর লাল দাশ, গলাচিপা ॥ আজ ২৬ এপ্রিল। পটুয়াখালীর মুক্তিযুদ্ধে কালো দিন। একাত্তরের এই দিনে বর্বর পাকিবাহিনী পটুয়াখালী জেলা শহর দখল করে। বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্তত এক লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। এর মধ্যে বৃহত্তর পটুয়াখালী অঞ্চলে শহীদ হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর একটা বড় অংশ শহীদ হয়েছে ২৬ এপ্রিল। এদিন পাকসেনারা পটুয়াখালী দখল করে নেয়। পাকসেনারা সকাল থেকে বেছে বেছে শহরের জনবহুল এলাকায় বিমানের মাধ্যমে অবিরাম শেলিং ও বোমাবর্ষণ করে। এতে শত শত মানুষ শহীদ হয়। পটুয়াখালী শহরের তিন দিকেই লোহালিয়া নদী বেষ্টন করে আছে। শহরের হাজার হাজার মানুষ শেলিং ও বোমার হাত থেকে রক্ষা পেতে নদীতে ঝাঁপ দেয়। নদী সাঁতরে ওপারের গ্রামগুলোতে পৌঁছলে মিলবে নিরাপদ আশ্রয়। এ আশাতেই নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোররা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল। কিন্তু পাকসেনারা বিমান থেকে তা লক্ষ্য করে নদীতে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরদের ওপর অবিরাম গুলিবর্ষণ করে। এতে লোহালিয়া নদী রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। দূরের গ্রামগুলো থেকে বহু মানুষ দৌড়ে নদী থেকে মানুষদের উদ্ধার করতে ছুটে এসেছিল। কিন্তু তারাও বোমা ও শেলিং থেকে রক্ষা পায়নি। শহরের কেবলমাত্র দক্ষিণ দিকে রয়েছে উন্মূক্ত খোলাপথ। যে পথ দিয়ে ধানক্ষেত মাড়িয়ে দূরের গ্রামগুলোতে পৌঁছা যায়। বহু মানুষ এ পথ দিয়ে দৌড়ে পালাতে চেয়েছিল। কিন্তু ২ নম্বর পুলের কাছে বোমাবর্ষণের ফলে পলায়নপর শত শত মানুষ মারা যায়। মাত্র চার ঘণ্টার বিমান হামলায় শহরের বেশির ভাগ মানুষ শহীদ হয়। যারা একেবারেই নিরূপায়, তারাই কেবল সেদিন শহরের বাসাবাড়ি কিংবা অফিস আদালতে লুকিয়ে জীবন বাঁচাতে চেয়েছিল। কিন্তু বিকেলে হেলিকপ্টার থেকে ছত্রীসেনা নামার পরে তাদের অধিকাংশ জীবন বাঁচাতে পারেনি। ছত্রীসেনারা অবিরাম গুলিবর্ষণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পলায়নপর মানুষদের ছত্রীসেনারা পাখির মতো গুলি করার হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। প্রায় একই সময়ে পটুয়াখালী লঞ্চ টার্মিনাল পন্টুনে এসে নোঙ্গর করে চারটি গানবোট। এগুলো থেকেও পাকসেনারা নেমে নিরীহ মানুষদের হত্যার মিশনে অংশ নেয়। এদিন শহরের বাসার খাটের তলায় লুকিয়ে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা স্বাধীনতা সংগ্রামী কমরেড হিরালাল দাশগুপ্ত জীবন বাঁচাতে চেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন আশি বছরের বৃদ্ধ এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী। পাকসেনারা তাকে খাটের তলা থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু করে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিসেনারা নারকীয় ত্রাস, হত্যা, লুটের রাজত্বে পরিণত করেছিল। আজও পটুয়াখালীর মানুষ এদিনটি স্মরণ করে আঁতকে ওঠে। স্বজন হারানোর বেদনায় কাঁদে।
×